ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

বিকল্প উপায়ে তিন ব্যাংকের মূলধন যোগানের পরামর্শ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৭
বিকল্প উপায়ে তিন ব্যাংকের মূলধন যোগানের পরামর্শ

ঢাকা: হাজার হাজার কোটি টাকা অলস পড়ে থাকলেও তা বিনিয়োগ না করে বন্ড ছেড়ে মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকারের কাছে আবেদন করেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তিন ব্যাংক।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ মতামত চাইলে বন্ড ছাড়ার বিকল্প উপায়ে মূলধন ঘাটতি পূরণের পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

মূলধন ঘাটতি পূরণে বেসিক ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদে ২৬০০ কোটি টাকার, রূপালী ব্যাংক ৭ বছর মেয়াদে ৫০০ কোটি টাকা ও জনতা ব্যাংক ১০ বছর মেয়াদে ১০০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়তে সম্প্রতি সরকারের কাছে আবেদন করেছে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটাতে ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মোট সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। ব্যাংকগুলোকে বাঁচাতে বারবার জনগণের করের হাজার হাজার কোটি টাকা দেওয়া হলেও কোনো উন্নতি হয়নি। উল্টো মূলধন ঘাটতির পাশাপাশি বেড়ে চলেছে খেলাপি ঋণ ও লোকসান।

এসব বিষয় পর্যালোচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিকল্প উপায়ে মূলধন ঘাটতি পূরণের পরামর্শ দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে মতামত দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন ঘাটতি পূরণের অনুমতি দেওয়া হলে আপাতত সরকারের কোনো নগদ দায় তৈরি হবে না। তবে নির্ধারিত মেয়াদ শেষে সুদ-আসলে ক্রেতাদের অর্থ পরিশোধে ব্যাংকগুলো ব্যর্থ হলে এর দায় সরকারের উপর বর্তাবে।

কারণ ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে আমানতের সুদ হার কম-বেশি ৫ শতাংশ। বিভিন্ন ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকার আমানত অলস পড়ে আছে। ব্যাংকগুলো কম সুদের আমানত বিনিয়োগ করে মুনাফা অর্জনপূর্বক তা থেকে মূলধন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হচ্ছে না। সেখানে ১০ শতাংশ সুদে বন্ড বিক্রি করে তা থেকে মুনাফা অর্জন করে মেয়াদ শেষে সুদ আসলে বন্ডের টাকা পরিশোধ করা কতটা সম্ভব হবে।

তাই বন্ড ছাড়ার বিকল্প হিসেবে নতুন শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির মাধ্যমে কমন ইক্যুইটি টিয়ার-১ এবং স্থায়ী ঋণ উপকরণ ইস্যুর মাধ্যমে অ্যাডিশনাল টিয়ার-১ মূলধন তথা ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফার এবং সাবঅরডিনেটেড বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে টিয়ার-২ মূলধন ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।

ক্যাশ ডিভিডেন্ডের মাধ্যমে নিট মুনাফা বন্টন না করে বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধি করা যেতে পারে। শ্রেণিকৃত ঋণ মানের উন্নয়ন করা এবং সব ঋণের বিপরীতে যোগ্য জামানতের পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে রক্ষিত প্রভিশনের পরিমাণ কমিয়ে মূলধন ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে।

ঝুঁকিভারিত সম্পদের পরিমাণ কমানোর মাধ্যমে নূন্যতম রক্ষিতব্য মূলধনের পরিমাণ কমানো যেতে পারে। এছাড়াও উচ্চ রেটিংসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান এবং মানদণ্ডহীন ঋণ গ্রহিতাদের হিসাব করে ঝুঁকিভারিত সম্পদ হ্রাস করার মাধ্যমে মূলধন ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, বারবার জনগণের করের টাকায় মূলধন যোগান না দিয়ে ব্যাংকগুলোকেই মূলধন ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি সাত হাজার ৮৩ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংকের তিন হাজার ৪৭৫ কোটি। বেসিকের ঘাটতি ২ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ৭৪৩ কোটি টাকা হয়েছে। অন্যদিকে ডিসেম্বর শেষে সংরক্ষিত মূলধনের তুলনায় উদ্বৃত্ত রয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের ৪৭ কোটি টাকা, বিডিবিএল ৭৬১ কোটি টাকা ও জনতা ব্যাংকের ৭৩ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে গঠিত কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৭
এসই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।