সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপবৃত্তি বিতরণের দায়িত্ব রকেটকে পাইয়ে দিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) কিছু অসাধু কর্মকর্তা নানা প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক সার্ভিস চার্জ নির্ধারণে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রোভাইডার নিযুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা উপেক্ষিত হতে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, মাধ্যমিক পর্যায়ে অধ্যয়নরত দেশের প্রায় ১৬ লাখ শিক্ষার্থী এমএফএস-এর মাধ্যমে বছরে প্রায় ২৪০ কোটি টাকার উপবৃত্তি পাবেন। এ উপবৃত্তি বিতরণের দায়িত্ব পেলে রকেট শুধু এজেন্ট ফি বাবদ আয় করবে ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা (প্রতি হাজারে ৯ টাকা হিসেবে)।
এতে উপবৃত্তির পুরো টাকা শিক্ষার্থীরা ভোগ করতে পারবেন না। উপবৃত্তির টাকা বিতরণের একই কাজ ‘শিওর ক্যাশ’কে দিলেও প্রতি এক হাজার টাকায় ৯ টাকা করে এজেন্টকে চার্জ দিতে হবে। সঙ্গে থাকবে ০.৪৯ শতাংশ সার্ভিস চার্জ।
তবে কোনো ধরনের সার্ভিস চার্জ বা এজেন্ট ফি ছাড়াই উপবৃত্তির এ অর্থ বিতরণে প্রস্তাব দিয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানি ‘বিকাশ’।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এ বিষয়ে চলতি বছরের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রকল্পটির পরিচালকদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সেখানে অনলাইন ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং সেবাবহির্ভুত এলাকায় মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে উপবৃত্তি বিতরণের ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ কমানোর জন্য প্রতিযোগিতামূলক ফি নির্ধারণ বিষয়ে আলোচনা হয়।
আর ওই সিদ্বান্তের আলোকে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ‘রকেট’, রূপালী ব্যাংকের ‘শিওর ক্যাশ’ এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ‘বিকাশ’ উপবৃত্তি বিতরণের সার্ভিস চার্জ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব মাউশি’কে দেয়।
কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছরের ২৪ ডিসেম্বর মাউশি মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রকল্প কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে শিওরক্যাশ, রকেট ও বিকাশের দেওয়া প্রস্তাবের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন উত্থাপন করা হয়।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘বিকাশে’র প্রস্তাবে কোনো সার্ভিস চার্জ ও এজেন্ট চার্জ নেই। কিন্তু ডাচ-বাংলার রকেটে সার্ভিস চার্জ না থাকলেও এজেন্ট চার্জ ০.৯০ শতাংশ। আবার শিওর ক্যাশের সার্ভিস চার্জ ০.৪৯ শতাংশ এবং এজেন্ট চার্জ ০.৯০ শতাংশ রয়েছে।
প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়, ‘বিকাশের সঙ্গে উপবৃত্তি বিতরণের বিষয়ে চুক্তি করা সমীচীন হবে না। যেসব ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রয়েছে কেবল তাদের সঙ্গেই চুক্তি করা যেতে পারে। ’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, বিকাশও তো ব্র্যাক ব্যাংকের একটি প্রতিষ্ঠান। যেমনটা রকেট ও শিওর ক্যাশ। কিন্তু রকেট বা শিওর ক্যাশকে উপবৃত্তি বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘিত হবে এবং শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ফি দিতে হবে।
মাউশি’র কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিজের সুবিধা নিতে এ ধরনের প্রতিবেদনি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে উপবৃত্তির অর্থ বিতরণে ‘রকেটে’র বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্প শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, উপবৃত্তির জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হলেও অসংখ্য শিক্ষার্থী সে টাকা পাননি। কেউ কেউ প্রথম কিস্তির টাকা পেলেও পরের কিস্তির টাকা পাননি অনেকেই।
রংপুর, লালমনিরহাট, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার আটটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে আইএমইডি-এর কর্মকর্তারা এ প্রতিবেদন করেছেন।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উপবৃত্তির টাকা বিতরণে শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠান প্রধান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের রকেট ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল।
এমনকি উপজেলা বা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক বিতরণকৃত টাকা ও শিক্ষার্থীর সংখ্যার তথ্য দিতে পারেনি ব্যাংক তথা রকেট কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে কথা বলতে ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম শিরিনের মোবাইল ফোনে বারবার কল দেওয়া হলেও তিনি তা ধরেননি।
পরে ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান সগীর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘লিখিত প্রশ্ন পাঠান, আমরা তখন উত্তর পাঠাবো। ’
বাংলাদেশ সময়: ১১১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৭
এসই/এমএ