চাকরি জাতীয়করণসহ ৮ দফা দাবিতে ৬ জুলাই থেকে আন্দোলন করছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যাংকের কার্যক্রম।
আট দফা দাবিগুলো হলো- ৩০ জুন ২০১৬ এর আগে নিয়োগকৃত একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সব জনবলকে অনতিবিলম্বে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে স্থানীয়করণের পরিপত্র জারি করতে হবে, স্থানান্তর নামক প্রহসন বাদ দিয়ে বিগত ৩ বছরের ইনক্রিমেন্ট, দৈনিক ভাতাসহ সব সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে, সব পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অতি দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে, ৩০ শে জুন ২০১৬ এর আগে নিয়োগকৃত সব জনবলকে ব্যাংকে স্থায়ীকরণ ও প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া পর্যন্ত নতুন জনবল নিয়োগ করা যাবে না, নিয়োগ বাণিজ্য কেলেঙ্কারিতে প্রায় অর্ধকোটি টাকাসহ আটক ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে হবে, হাইকোর্টের নির্দেশকে পাশ কাটিয়ে রাতের অন্ধকারে দেওয়া অবৈধ নিয়োগ বাতিল করতে হবে, আন্দোলনরত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কোনো রূপ হয়রানি করা যাবে না।
আন্দোলনরতরা জানান, গত ২৭ জুন বোর্ড মিটিংয়ের মাধ্যমে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে কর্মকর্তা পদে ১৪৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করে নিয়োগে স্থগিতাদেশ নেওয়া হয়। বোর্ড কর্তৃপক্ষ এটি মানেনি। আর বিভিন্ন সময় চাকরি স্থায়ী করার দাবি করলে কর্তৃপক্ষ উল্টো বিভিন্ন টার্গেট দিয়েছে। সেই টার্গেট পূরণ করলে চাকরি স্থায়ী করার কথা ছিল। কিন্তু তা করা হলেও আজও চাকরি স্থায়ী হয়নি।
দাবি আদায় হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবেন এবং প্রয়োজনে আমরণ অনশন কর্মসূচিও পালন করবেন বলেও জানান আন্দোলনকারীরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকে কর্মরতদের প্রথমে চাকরির সুযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছিল পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে। ২০১৪ সালে আট হাজার পাঁচশ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তার আগে এই প্রকল্পটির কার্যক্রম পরিচালিত হতো ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ নামে।
সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বোর্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগের জন্য ২৭৮ জনকে চূড়ান্ত করা হয়। এদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৪ জুলাই।
চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রথমে চাকরির সুযোগ পাবেন। এরপর নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া যাবে। একইভাবে পদোন্নতির ক্ষেত্রেও কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ দিতে হবে। বাকী পদে সরাসরি নিয়োগ দিতে হবে।
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করা হলেও তা জমা রয়েছে ১৬টি ব্যাংকে। চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) স্বেচ্ছাচারিতায় বন্ধ রয়েছে দারিদ্র বিমোচনে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম। এতে ভেস্তে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ক্ষুদ্র সঞ্চয় মডেল।
ফলে প্রকল্পের আওতায় থাকা ৪০ হাজার সমিতি এখন বন্ধের পথে। এতে বঞ্চিত হচ্ছে ২২ লাখ গরিব পরিবার তথা দেড় কোটি মানুষ। সম্প্রতি এ প্রকল্প এবং ব্যাংক প্রকল্পের জন্মলগ্ন থেকে যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলছে তাদের বঞ্চিত করে নতুন লোক নিয়োগ দিয়েছেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান মিহির কান্তি মজুমদার।
**‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ
**কাফনের কাপড় পরে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কর্মীদের বিক্ষোভ
**কর্মকর্তাদের আন্দোলনে স্থবির পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৯
এসএইচ