ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ব্যাংকিং

বাংলাদেশকে বাড়তি ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব বিশ্বব্যাংকের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৯
বাংলাদেশকে বাড়তি ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব বিশ্বব্যাংকের বিশ্বব্যাংক, ছবি: সংগৃহীত

ওয়াশিংটন থেকে: অবকাঠামো উন্নয়নে নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ। যে কারণে বৈদেশিক ঋণ বেশি দরকার। তবে এর জন্য বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংকের কাছে ধরনা দিতে হবে না। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে বাড়তি ঋণ দিতে নিজে থেকে তৎপর।

সংস্থাটির অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) ২০১৮ এর মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২০ সালে। তিন বছরে এ প্রতিষ্ঠানের আওতায় সংস্থাটির বাংলাদেশে ঋণ প্রতিশ্রুতি ছিল চার দশমিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

যদিও নিদিষ্ট সময়ের আগেই নির্ধারিত এই বরাদ্দের অর্থ ঋণ নিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। সক্ষমতার কারণে এই ঋণ খরচও করে ফেলেছে বাংলাদেশ সরকার।

তবে একই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আইডা-২০১৮ খরচ করতে পারেনি। বিশ্বব্যাংকের ঋণ সঠিকভাবে অনেক দেশ ব্যবহারও করতে পারেনি। ফলে এ অব্যবহৃত ঋণ বাংলাদেশ যাতে ব্যবহার করে এ বিষয়ে অফিসিয়ালি প্রস্তাব দেবে সংস্থাটি। এতে করে বাংলাদেশের নতুন ঋণের ভলিউম ছয় বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা) ছাড়াতে পারে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ঋণ ব্যবহারের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। প্রথম অবস্থানে ইথিওপিয়া। এ পরিপ্রেক্ষিতে চলমান বিশ্বব্যাংক গ্রুপ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সভায় অর্থমন্ত্রী অহম মুস্তফা কামাল আইডা-১৯ ঋণ প্যাকেজের আওতায় আগামী ৩ বছরের জন্য ৪৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রস্তাব করতে পারেন সংস্থাটির কাছে।

নতুন ঋণ প্রসঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ বলেন, বিশ্বব্যাংকের পাইপলাইনের প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ম্যানেজমেন্ট টিমের সঙ্গেও আলোচনা করেছি; ঋণের ভলিউম বাড়ানোর জন্য। আইডা-২০১৮ বিষয় শেষ হয়ে যাচ্ছে। এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এছাড়া সক্ষমতার কারণে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে এটা শেষ করতে পেরেছি। এ জন্য বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন আমাদের অনুরোধ করেছেন, অনেক দেশ থেকে ঋণ ফেরত আসবে। সেটা চাইলে আমরা গ্রহণ করতে পারি। এটা ব্যবহারের জন্য আমাদের অনুরোধ জানাবে সংস্থাটিও। বিশ্বব্যাংক আমাদের অফিসিয়ালি এই অনুরোধ করবে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমাধান ও তাদের পুনর্বাসনের জন্য পুরো এশিয়ার পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য প্রভাবশালী দেশগুলোর সহায়তা চায় সরকার। যা সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে ইস্যু স্মরণ করিয়ে দিতে ও রোহিঙ্গা খাতের ব্যয় মেটাতে বিশ্ববাসীর সহায়তাও চাওয়া হবে এই বার্ষিক সভায়। ।

ওয়াশিংটন ডিসিতে চলমান বিশ্বব্যাংক গ্রুপ ও আইএমএফের সভায় শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) এ সংক্রান্ত একটি সেশন অনুষ্ঠিত হবে। এতে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল নতুন ঋণ ভলিউম, রোহিঙ্গাখাতের ব্যয়, বাংলাদেশের পরিবেশগত জটিলতা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রোহিঙ্গা ইস্যুর প্রভাব বিষয়ে তিনি বক্তব্য তুলে ধরবেন।

সম্মেলনটির দক্ষিণ এশিয়া ও বাংলাদেশ সেগমেন্টে তিনি এ বিষয় তুলে ধরবেন। সেখানে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক, আইডিএ, আইএফসিসহ উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।

এক্ষেত্রে রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধানে বাংলাদেশ প্রভাবশালী দেশগুলোর ভূমিকা প্রত্যাশা করে বলে জানিয়েছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মনোয়ার আহমেদ।

ওয়াশিটংনে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের কার্যালয় থেকে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আমাদের দাবি-দাওয়া, চাওয়া এবং কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরব। এ সংক্রান্ত চলতি প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন পরিস্থিতি খুবই সন্তোষজনক। এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুধু বিশ্বব্যাংক আগামী বছরের জন্য বাংলাদেশকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। তবে আমরা আশা করি এটা আরও বাড়বে। এ সময় তার সঙ্গে ইআরডির বিশ্বব্যাংক উইংয়ের যুগ্মসচিব আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার পেছনে বাংলাদেশের ব্যয় প্রতি বছর প্রায় এক বিলিয়ন ডলার। এছাড়া কক্সবাজারসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার পরিবেশগত সমস্যা, ক্যাম্পগুলোর ভেতরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ। এসব বিষয় তুলে ধরা হবে শুক্রবারের সেশনে।

সেইসঙ্গে চলমান রোহিঙ্গা সংকট, দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, দক্ষ জনবল তৈরিতে আইএমএফ ও আইএফসি’র যৌথ প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি সহায়তা, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করা হবে।

সচিব এও বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও ক্লিন কুকিংয়ের বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চায়; প্রকল্পের অধীনে ‘মডার্ন রান্নাঘর’ প্রচারাভিযানের ক্ষেত্রে। একটি মডার্ন রান্নাঘর হলো, যেখানে ব্যবহার হয় ধোঁয়াবিহীন বা কম ধোঁয়ার কর্মক্ষম চুলা। পরিবেশবান্ধব জ্বালানি। এর ফলে রান্নাঘর হয়ে উঠে আরও স্বাস্থ্যকর এবং ধোঁয়ামুক্ত।

এমন একটি রান্নাঘর তৈরি করা আসলে ব্যয়বহুল নয়। অল্প খরচেই স্বাস্থ্যসম্মত এবং পরিবেশবান্ধব একটি রান্নাঘর সাজানো সম্ভব। মডার্ন একটি রান্নাঘরে রান্নার অভিজ্ঞতা বিরক্তিকর নয় বরং উপভোগ্য। এ ক্ষেত্রেও চলমান প্রকল্পের আওতায় সহযোগিতা করবে বিশ্বব্যাংক।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৯
এমআইএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।