ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

লক্ষ্য স্থির করতে পারছে না বিএনপি

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৩ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৬
লক্ষ্য স্থির করতে পারছে না বিএনপি

ঢাকা: ক’দিন আগেও বিএনপি নেতাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল ২০১৭ সালের প্রথম দিকে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন দেবে সরকার। নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও গ্রহণযোগ্যতার কথা চিন্তা করেই এমনটি করবে ক্ষমতাসীনরা।

এই প্রত্যাশায় বর্তমান সরকারের দুই বছর পূর্তিতে কঠোর কর্মসূচিতে না গিয়ে জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি নেয় বিএনপি। পূর্ব ঘোষিত সময়সূচি ‍অনুযায়ী গত ১৯ মার্চ কাউন্সিল সেরে নেয় দলটি।

কিন্তু কাউন্সিলের পৌনে দুই মাসের মাথায় এসে ২০১৭ সালে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো আলামাত না দেখে দোটানায় পড়েছে বিএনপি।

ক্ষমতা বলয়ের মধ্য থেকে জন্ম নেওয়া দলটি এরই মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকার রেকর্ড গড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে লক্ষ্য স্থির করতে পারছে না তারা।

দু’টি ‘ব্যর্থ’ আন্দোলনের পর ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল ঘরে ফিরে সংগঠন গোছানোর দিকে নজর দেন খালেদা জিয়া। এর চার মাস পর তৃণমূলে চিঠি দিয়ে কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেন।
 
কিন্ত সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলার কথা চিন্তা করে জাতীয় কাউন্সিলের আগে তৃণমূল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বিরতি দেন তিনি। সেই বিরতি এখনো চলছে। পুনরায় কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেননি খালেদা জিয়া।
 
সূত্র মতে, সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য স্থির করতে না পারায় কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না বিএনপি প্রধান।

জাতীয় কাউন্সিলের পরে স্থায়ী কমিটি ও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যে বৈঠকগুলো হয়েছে সেগুলোতে বিএনপির পরবর্তী কর্মপন্থা বা লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে খোলা-মেলা আলোচনা করেননি খালেদা জিয়া।

বরং শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কয়েকজন দলের পরবর্তী পরিকল্পনার ব্যাপারে জানতে চাইলে যথারীতি নীরব থেকেছেন তিনি। কেউ কেউ বেশি আগ্রহ দেখালে তাদের থামিয়ে দিয়েছেন বিএনপি প্রধান।

সূত্র মতে, যেসব বুদ্ধিদাতা ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে দেখা না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন, যাদের পরামর্শে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বয়কট করেছিল বিএনপি, যাদের অতি উৎসাহী বিএনপি প্রীতির কারণে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ উপেক্ষা করেছিলেন খালেদা জিয়া-তাদের অনেকেই এখন কারাগারে।

কেউ কেউ বিপদ বুঝে কেটে পড়েছেন। কয়েকজনকে আবার খালেদা জিয়া নিজেই সরিয়ে দিয়েছেন।

জানা গেছে, এদের অনুপস্থিতিতে বিএনপির জন্য ‘অতি দরদী’ আরেকটি গ্রুপ গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে খালেদা জিয়াকে বোঝাতে সক্ষম হন ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন ক্ষমতায় থেকেই করতে চায় আওয়ামী লীগ।

আর সেই ক্ষমতা প্রশ্নাতীত করতেই ২০১৭ সালের প্রথম দিকে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন দিতে পারে আওয়ামী লীগ। সেখানে অংশ নিয়ে বিরোধী দল হিসেবে সংসদে যেতে পারলেও রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকবে বিএনপি।
 
সূত্র মতে, এ ধরনের গল্পে বিশ্বাস করে আশায় বুক বাঁধেন খালেদা জিয়া। বড় বড় ইস্যুতে কর্মসূচি না দিয়ে বার বার সংলাপের প্রস্তাব দেন তিনি। জাতীয় কাউন্সিল থেকেও সংলাপ ও সমঝোতার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আসে তার কাছ থেকে। কিন্তু তার এই প্রস্তাব সরসারি নাকচ করে ক্ষমতাসীনরা।
 
সংশ্লিষ্টরা বলছে, সরকারের অনড় ‍অবস্থান এবং বিএনপির সঙ্গে কোনো প্রকার সমঝোতায় আগ্রহী না হওয়ায় খালেদা জিয়া পড়েছেন উভয় সংকটে। বিএনপি প্রধান ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না, ২০১৯ সালকে পরবর্তী নির্বাচনের বছর ধরে নিয়ে সংগঠন গোছানোর কাজে মনোনিবেশ করবেন?- না কি মধ্যবর্তী নির্বাচন আদায়ের জন্য ২০১৭ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ‘কঠোর’ কর্মসূচি দিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন?
 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। রাজনীতির সবগুলো শর্ত মেনেই আমাদের এগোতে হয়। যে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বার বার ভাবতে হয়। কোনো হঠকারি সিদ্ধান্ত আমরা নিলে কেবল বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, বাংলাদেশের রাজনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্তটাই নেবে বিএনপি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৬
এজেড/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।