ঢাকা: দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর)।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রমনা গ্রিনে এক সম্মেলনের মাধ্যমে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করে ১৯ দফা কর্মসূচিকে সামনে রেখে বিএনপি গঠন করেন।
বিএনপি গঠনের মাত্র তিন বছরের মাথায় চট্টগ্রামে এক সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হন জিয়াউর রহমান।
জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপির হাল ধরেন তার স্ত্রী দলের বর্তমান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে আবারও বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া।
এদিকে, টানা ১০ বছর রাষ্ট্রক্ষমতা ও ৩ বছর সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল ও আত্মবিশ্বাসের জায়গায় নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।
দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে হতাশা। এখন অনেকেরই বদ্ধমূল ধারণা ‘এই বিএনপি দিয়ে আর হবে না’। তবে বিকল্প কোনো শক্তি গড়ে না ওঠায় দেশের জনগণ বিএনপিকে নিয়েই স্বপ্ন দেখছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, সেনা অভ্যুত্থানের জিয়ার মৃত্যুর পর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দীর্ঘ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে একদিকে যেমন ক্ষমতা ফিরে পায় বিএনপি। অন্যদিকে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় বসা বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াতকে তোয়াজ করতে গিয়ে নিজেদের জন্য অনিবার্য পরিণতি ডেকে আনে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আমার মনে হয় দেশের বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে যে স্ট্র্যাটিজিতে বিএনপির চলার কথা ছিল, সেই স্ট্র্যাটিজিতে তারা নেই। নির্বাচন বর্জন, গণতান্ত্রিক দাবি আদায়ে অগণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করতে পারায় চরম সংকটে পতিত হয়েছে দলটি।
শুধু বিশেষজ্ঞ মহল বা রাজনীতি বিশ্লেষকরাই নন, খোদ বিএনপি শীর্ষ নেতৃত্বও মনে করছে প্রতিষ্ঠার ৩৮ বছরের মাথায় এসে চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে বিএনপি। একের পর এক ‘ভুল’ সিদ্ধান্ত, সমন্বয়হীনতা, তৃণমূল-কেন্দ্রের টানাপোড়েন এবং আমলা-ব্যবসায়ীদের হাতে নেতৃত্ব চলে যাওয়ায় নৈতিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়েছে দলটি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন- এটা বলতে আর দ্বিধা নেই, প্রতিষ্ঠার পর এমন সংকটে আগে কখনও পড়েনি বিএনপি। তবে এই সংকট কেবল বিএনপির ভুলের কারণে সৃষ্টি হয়েছে এমনটি নয়। বিএনপির হয়তো কিছুটা ভুল হয়েছে, তার চেয়েও বড় কথা ক্ষমতাসীনরা প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির সঙ্গে সৌজন্যমূলক আচরণ করেনি। এখনও করছে না।
কেউ কেউ বলছেন, পর পর দু’টি ব্যর্থ আন্দোলন শেষে অনেকটা ক্ষয়িঞ্চু শক্তির দলে পরিণত হয়েছে বিএনপি। হঠকারী সিদ্ধান্তে ‘নাশকতা নির্ভর আন্দোলন’র ধাক্কা সামলে উঠতে না পারায় নানা জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট যৌক্তিক ইস্যুতেও কর্মসূচি দিতে ভয় পাচ্ছে তারা। রামপালের মত বড় ইস্যুও হাত ফসকে যাচ্ছে।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচি
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে যাবেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি সেখানে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও ফাতেহা পাঠে অংশ নেবেন।
দুপুর ২টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বিএনপি। আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
এছাড়া যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করবে সারাদেশে মহানগর, জেলা, থানা-উপজেলা, পৌরসভা ও সব ইউনিট।
তবে অনুমতি না পাওয়ায় প্রস্তুতি নেওয়ার পরও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শোভাযাত্রা করতে পারছে না বিএনপি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কয়েকদিন আগেই রাজধানীতে শোভাযাত্রা করার অনুমিত চেয়ে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু সে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৬
এজেড/এসআর