ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

‘আকাইম্যা’ নেতাদের ‘নগদ ধোলাই’ খালেদার

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৭
‘আকাইম্যা’ নেতাদের ‘নগদ ধোলাই’ খালেদার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া/ফাইল ছবি

ঢাকা: দলের ‘আকাইম্যা, ধান্দাবাজ, পদলোভী নেতা-কর্মীদের ‘নগদ’ ধোলাই’র উপর রেখেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কোনো রাখ-ঢাক না করে ভরা মজলিসেই দলের বিভিন্ন ইউনিট, শাখা, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ‘আকাইম্যা’ নেতাদের  শায়েস্তা করছেন কথারচাবুকে। উচিত কথা বলতে ছাড়ছেন না কাউকেই!

সূত্রমতে, পর পর দু’টি আন্দোলনে দলের তৃণমূলের সহজ-সরল খেটে খাওয়া  সাধারণ মাঠকর্মী ও সমর্থক ছাড়া তথাকথিত ‘সেলিব্রেটি’ নেতাদের মাঠে না দেখে যারপরনাই ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়া।

অথচ পদের ভারে নুব্জ সেইসব নেতাই ঢাকায় আয়োজিত খালেদা জিয়ার বিভিন্ন প্রোগ্রামে লম্বা-চওড়া বক্তৃতা দেন নিয়মিত।

এসব নেতার রাজা-উজির মারা বক্তব্য শুনে সম্প্রতি মুখের উপর জবাব দেওয়া শুরু করেছেন খালেদা জিয়া।  
 
গত শনিবার (২১ জানুয়ারি) গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে মত বিনিময় করতে আসেন জিয়া পরিষদের নেতারা। প্রতিনিধি সম্মেলন শেষে দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে মত বিনিময় ও বক্তৃতার সুযোগ পেয়ে আনন্দের বাঁধ ভাঙা জোয়ারে ভাসেন তারা।
 
বক্তৃতাকালে জিয়া পরিষদের প্রত্যেকেই দাবি করেন, বিগত আন্দোলনে তিনি এবং তার অনুসারিরা নিজ নিজ এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘ব্যাপক’ আন্দোলন করেছেন; নজিরবিহীন আন্দোলন করেছেন!

সংগঠনটির সভাপতি কবির মুরাদ তো বলেই ফেলেন- সারা দেশের মধ্যে কেবল তার জেলা মাগুরা ও খালেদা জিয়ার শ্বশুর বাড়ির এলাকা বগুড়া ছাড়া আর কোথাও কোনো আন্দোলন হয়নি।
 
সংগঠনের সভাপতির এমন বক্তব্যের পর সারা দেশে থেকে আসা জিয়া পরিষদের নেতারা খালেদা জিয়ার সামনেই প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন। মত বিনিময় সভায় শুরু হয় হৈ-হুল্লোর!
 
পরে বক্তব্য দিতে গিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, জিয়া পরিষদ একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন। এখানে যারা আছেন, তাদের সবাই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। সুতরাং এ সংগঠনের মূল কাজ হলো রিসার্চ করা; গবেষণা করা এবং সেগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরা।

জিয়া পরিষদের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আপনারা কী গবেষণা করেছেন, সেটা দেখতে চাই। কেবল বছর বছর প্রতিনিধি সম্মেলন করবেন। ঢাকায় এসে বক্তৃতা করে চলে যাবেন। ফিরে গিয়ে কোনো কাজ করবেন না, কোনো গবেষণা করবেন না-তা হবে না।

জিয়া পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি কবির মুরাদকে পুন:রায় সভাপতি নির্বাচিত করায় উষ্মা প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া- ‘সেই কবে থেকে কবির মুরাদকে সভাপতি দেখছি। আর কাউকে সভাপতি করা হয় না কেন? অন্য কেউ কি দায়িত্ব নিতে ভয় পান। নাকি পদ হারানোর ভয়ে একজনকেই বার বার সভাপতি করা হয়!-সেটিও ভেবে দেখতে হবে।
 
খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের পর সভাস্থলেই শুরু হয় ফিসফাস-মৃদু গুঞ্জন। অনেকেই বলতে থাকেন কবির মুরাদ নগদ ধোলাই’ খেয়েছেন। কোনো কোনো নেতা হতভম্ব হয়ে যান। বিব্রত নেতারা প্রোগ্রাম শেষে গুলশান কাযালয়ে কনফারেন্স রুমে মিলিত হন। সিদ্ধান্ত নেন, আর কোনো দিন দলের চেয়ারপারসনের সামনে ‘হামবড়া’ ভাব নেবেন না।

এর আগে ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে ছাত্রদল নেতাদের একহাত নেন খালেদা জিয়া। তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যেখানেই যাই দেখতে পাই তোমরা নিজ নিজ ইউনিটের পক্ষে ‘উত্তর উত্তর’, ‘দক্ষিণ দক্ষিণ’ স্লোগান দাও। এটা দ্বারা তোমরা কী বোঝাতে চাও? এটা কোনো স্লোগান হলো?’

সে বক্তৃতায় ছাত্রনেতাদের বেশ ধমকাধমকিও করেন দলীয় প্রধান। তিনি বলেন, ‘তোমরা ছাত্র। তোমরা নতুন নতুন স্লোগান তৈরি করবে। আগের দিনের ছাত্ররা নিজেরাই স্লোগান তৈরি করত, পোস্টার তৈরি করত। এখন তোমাদের পোস্টার তৈরি করে দিতে হয়। তৈরি করে দেওয়া পোস্টারও ঠিক মতো লাগাও না। তার মানে তোমরা খালি স্বার্থটা খোঁজ।
 
শুধু সভা-সমাবেশেই নয়। কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে গিয়েও খালেদার নগদ ধোলাই’র মুখে পড়েছেন।  
 
সূত্রমতে, সম্প্রতি গুলশান অফিসে খালেদার সঙ্গে দেখা করতে যান মানিকগঞ্জের এক নেতা। নিজের অনেকগুলো পদের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়ার কাছ থেকে ‘বাহবা’ নেবার চেষ্টা করেন তিনি।
 
কিন্তু বিএনপির চেয়ারপারসন তাকে হতাশ করে দিয়ে বলেন, তুমি যদি একাই যুবদল, স্বেচ্চাসেবক দল, জেলা বিএনপি, উপজেলা বিএনপি, পৌরসভা বিএনপি- সব জায়গার পদ দখল কর, তাহলে অন্যরা কোথায় যাবে? একটি পদ রেখে বাকিগুলো ছেড়ে  দিবা!

সম্প্রতিকালে এ রকম আরও নজীর স্থাপন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। দলটির উচ্চ পর্যায়ের নেতারা এতে বিস্মিত। তাদের কেউ কেউ বলছেন, খালেদা জিয়াকে এর আগে নেতা-কর্মীদের ওপর এতোটা বিরক্ত হতে দেখা যায়নি।
 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন-দলের প্রতি কোনো রকম আনুগত্য, দরদ ও ভালোবাসা ছাড়াই কেবল পদ-পদবীর লোভে আশপাশে ঘ্যান ঘ্যান করা নেতাদের উচিত শিক্ষার জন্য এমন ‘নগদ ধোলাই’ দিতে শুরু করেছেন খালেদা জিয়া।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৭
এজেড/এসএইচ/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।