সূত্র জানায়, এই মুহূর্তে বিএনপি ব্যস্ত নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক’ সরকারের রূপরেখা তৈরির কাজে। সম্প্রতি দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদসহ বিএনপিপন্থি কয়েকজন বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন খালেদা জিয়া।
ওই বৈঠকে নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক’ সরকারের রূপরেখা তৈরির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন তিনি। তার দেওয়া এই দিক নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক’ সরকারের রূপরেখা তৈরির কাজ করছে বিএনপির একটি শক্তিশালী টিম। টিমে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ বিএনপিপন্থি সাবেক আমলা, নির্বাচন বিশ্লেষক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক রয়েছেন। রূপরেখা তৈরির পরই আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তা জাতির সামনে তুলে ধরবেন খালেদা জিয়া।
‘দিনে বিশ্রাম, রাতে কাজ’ নিয়ে নানা মহলে নানা সমালোচনা হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন সপ্তাহের ৬ দিন নিয়মিত অফিস করছেন। রাত ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত- এই কর্মঘণ্টাগুলোয় খালেদার কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছে দল পুনর্গঠনের বিষয়টি।
জানা যায়, প্রতিদিনই কোনো না কোনো জেলা কমিটির ‘খসড়া’ খালেদা জিয়ার টেবিলে উপস্থাপন করছেন দায়িত্বশীল নেতারা। হাতে ‘খসড়া’ কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এক পর্যায়ে সন্তোষজনক অবস্থায় পৌঁছানোর পর দলের মহাসচিবকে দিয়ে সেটি স্বাক্ষর করিয়ে কমিটি অনুমোদন দিচ্ছেন তিনি।
শুধু মূল দল নয়, জাতীয় কাউন্সিলের পর থেকে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠনেও বিপুল সময় ব্যয় করতে হচ্ছে খালেদা জিয়া এবং দায়িত্বশীল নেতাদের। এরইমধ্যে দলের অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল ও জাসাস’র আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ মুহূর্তে মহিলা দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির ‘খসড়া’ রয়েছে খালেদা জিয়ার হাতে। চলছে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ।
এছাড়া জাতীয়তাবাদী কৃষক দল ও শ্রমিক দলের নতুন কমিটি গঠনের কাজটিও রয়েছে খালেদা জিয়ার হাতে। খুব শিগগিরই হয়তো এ দু’টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আংশিক কমিটি ঘোষণা করবেন বিএনপি প্রধান।
সূত্র জানায়, প্রতি রাতে অফিসে আসার পর তালিকায় থাকা কাজগুলোর মধ্যে গুরুত্ব বিবেচনায় যেগুলো আগে করা উচিত সেগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসেন খালেদা। সঙ্গে থাকেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এছাড়া চলমান ঘটনাপ্রবাহের উপর তত্ত্ব-উপাত্ত সংগ্রহ, বক্তব্য তৈরি, তৈরি, বক্তব্য যাচাই-বাছাই, ফাইনাল স্ক্রিপ্ট তৈরি করা এবং প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে সেগুলো তুলে ধরার আগ মুহূর্ত পযর্ন্ত সেটি তদারকি করেন খালেদা নিজে।
জানা যায়, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে ১৩ দফা প্রস্তাব তৈরির জন্য অন্তত ৬ মাস কাজ করতে হয়েছে বিএনপিকে। এ কাজে দল, দলের বাইরে থাকা সুশীল সমাজের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে দফায় দফায়।
এছাড়া কূটনৈতিক দিকটাও সমানতালে সামলাতে হচ্ছে বিএনপিকে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূতসহ বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা দীর্ঘ বৈঠক করেছেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে।
জোট শরিকদের নিয়েও পর্দার অন্তরালে কাজ করতে হচ্ছে বিএনপিকে। সম্প্রতি শরিক দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে বিশেষ নৈশভোজ করান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল।
এর আগে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য টানা ৬ মাস নিরলস পরিশ্রম করেছেন খালেদা। তার সঙ্গে মির্জা ফখরুল মোহম্মদ শাহজাহান, রুহুল কবির রিজভী ও এমরান সালেহ প্রিন্সসহ বেশ কয়েকজন নেতা পরিশ্রম করেন দলের জন্য।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, মাঠে কর্মসূচি না থাকায় অনেকেই মনে করেন আমরা চুপচাপ বসে আছি। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই, প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো কাজ নিয়ে আমরা ব্যস্ত থাকি। ম্যাডামও প্রচণ্ড পরিশ্রম করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
এজেড/এএ