প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুদকের করা আবেদন নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেন।
ফলে বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো মামলা চলতে আর কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
এর আগে খালেদা জিয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ মার্চ বিচারপতি শেখ আবদুল আউয়াল ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের ইহাকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন।
এরপর হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিলে আবেদন করে দুদক।
এর আগে গত বছরের ০১ ডিসেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ক্ষেত্রে নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
খালেদা জিয়াসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে। এ মামলার অভিযোগ (চার্জ) গঠন শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।
এর মধ্যে মওদুদ আহমদ এ মামলায় আরও কিছু নথি তলব চেয়ে এবং ওয়াশিংটনে নাইকোর বিষয়ে চলা আরবিট্রেশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু গত ১৬ আগস্ট বিচারিক আদালত এ আবেদন খারিজ করে দেন। পরে এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ফৌজদারি আবেদন করেন মওদুদ আহমদ। দু’দিনের শুনানিতে ০১ ডিসেম্বর আট সপ্তাহের জন্য মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে চার সপ্তাহের রুল জারি করা হয়। রুলে বিচারিক আদালতের ১৬ আগস্ট দেওয়া আদেশ কেন অবৈধ হবে না- তা জানতে চেয়েছেন আদালত।
মওদুদ আহমদের আবেদনে জারি করা রুলটি হাইকোর্টে বিচারাধীন।
০৭ মার্চ মাহবুব উদ্দিন খোকন জানান, একই যুক্তিতে বিচারিক আদালতে করা খালেদা জিয়ার আবেদনও ১৫ ডিসেম্বর খারিজ করে দেন আদালত। পরে এর বিরুদ্ধে ২৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন করেন বিএনপি নেত্রী। এরপর ০৭ মার্চ আদালত হাইকোর্টে মওদুদ আহমদের রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খালেদার মামলার ওপর স্থগিতাদেশ দেন। পাশাপাশি রুল জারি করেন।
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, সেনা নিয়ন্ত্রিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় খালেদা গ্রেফতার হওয়ার পর ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বরে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুদক। পরের বছরের ৫ মে খালেদাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। যাতে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডার কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।
মামলা হওয়ার পর খালেদা জিয়া উচ্চ আদালতে গেলে ২০০৮ সালের ৯ জুলাই দুর্নীতির এ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট, সেই সঙ্গে দেওয়া হয় রুল। প্রায় সাত বছর পর গত বছরের শুরুতে রুল নিষ্পত্তির মাধ্যমে মামলাটি সচল করার উদ্যোগ নেয় দুদক।
রুলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১৮ জুন খালেদার আবেদন খারিজ করে মামলার ওপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নেন হাইকোর্ট। ওই রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুসারে গত বছরের ৩০ নভেম্বর জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান খালেদা।
খালেদা ও মওদুদ ছাড়া এ মামলার বাকি আসামিরা হলেন- সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তখনকার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, বিতর্কিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া (সিলভার সেলিম) এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
আসামিদের মধ্যে মিয়া ময়নুল হক, কাশেম শরীফ ও কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী পলাতক রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০০২ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৭/আপডেট: ১০১৩ ঘণ্টা
ইএস/জেডএস