ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিএনপি

তৃতীয় সারির নেতারাই বিএনপির কাণ্ডারি

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৭
তৃতীয় সারির নেতারাই বিএনপির কাণ্ডারি

ঢাকা: নানা কারণে দলের বাঘা বাঘা নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন বিএনপিতে। আর এই সুযোগে তৃতীয় সারির নেতারা আবির্ভূত হয়েছেন দলের কাণ্ডারি হিসেবে। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, দলের হয়ে মিডিয়াতে কথা বলা, প্রতিপক্ষের কথার জবাব, সভা-সেমিনার- সবখানেই এখন তৃতীয় সারির নেতাদের ‘দাপুটে’ বিচরণ।

বিএনপির গঠনতন্ত্রে পদবিন্যাস এভাবে- চেয়ারপারসন, মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য।
 
এখানে চেয়ারপারসন হচ্ছেন দলের প্রধান আর মহাসচিব হচ্ছেন সাংগঠনিক প্রধান।

সেই হিসাবে যাবতীয় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের অথরিটি হচ্ছেন মহাসচিব। আর চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতি, অপারগতা বা অন্য কোনো কারণে তার পদ সাময়িক সময়ের জন্য শূন্য হলে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদাধিকার বলে চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করবেন।
 
কিন্তু বর্তমানে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে পদের এই বিন্যাস তো মানা হচ্ছেই না বরং সব ক্ষেত্রেই ঘটছে সুপারসিড’র ঘটনা। দলের প্রথম সারির নেতাদের কাজ করানো হচ্ছে তৃতীয় ও চতুর্থ সারির নেতাদের দিয়ে। প্রোটোকল ভেঙে তৃতীয় ও চতুর্থ সারির নেতাদের তুলে আনা হচ্ছে প্রথম সারিতে।
 
পর পর দু’টি ব্যর্থ আন্দোলন শেষে গত দুই বছর কোনো আন্দোলন সংগ্রামে নেই বিএনপি। দলটির এখন মূল কাজ সংগঠন গোছানো। এছাড়া নিয়ম মাফিক প্রেসকনফারেন্স, ঢাকা রিপোর্টারর্স ইউনিটি, জাতীয় প্রেসক্লাব, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটসহ রাজধানীর কয়েকটি জায়াগায় বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত সভা সেমিনার ও গুলশান কার্যালয়ের খালেদা জিয়ার ‘নৈশকালীন’ প্রোগ্রামেই সীমাবদ্ধ বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।
 
দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংগঠন গোছানোর দায়িত্ব পাওয়ার কথা ছিলো মহাসচিবের। কিন্তু তাকে না দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে এই দায়িত্ব দেন সেই সময়ের যুগ্ম মহাসচিব মো. শাজাহানকে। পদবিন্যাসের দিক থেকে মো. শাহজাহানের ওই পদটি তখন ছিলো বিএনপির সাত নম্বর পদ। বর্তমানে তিনি দলের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
 
সূত্রমতে, সেই সময়ের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীরকে দায়িত্ব না দিয়ে যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহাজাহানকে সংগঠন গোছানোর দায়িত্ব দেওয়ায় দলের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শুধু সংগঠন গোছানের দায়িত্ব নয়, পৌর নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীর প্রত্যায়নপত্র স্বাক্ষরের দায়িত্বও পান মো. শাহজাহান। আওয়ামী লীগ থেকে যে দায়িত্ব পালন করেছিলেন স্বয়ং শেখ হাসিনা।
 
গত বছর ১৯ মার্চ জাতীয় কাউন্সিলের পর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীর। সাধারণ নেতাকর্মীরা মনে করেছিলেন, এতোদিন যাই ঘটুক পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হবার পর দলের ‘অথেনটিক’ মুখপাত্র হিসেবে প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে মিডিয়াতে কথা বলবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
 
কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টোটা। নয়াপল্টন কার্যালয়ে ‘স্থায়ী আবাস’ গেড়ে বসা দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একাই সামলাচ্ছেন সব।
 
জাতীয়, আন্তর্জাতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক- এমন কোনো ইস্যু নেই, যা নিয়ে কথা বলেন না রিজভী। দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ-মহাসচিব বা সিনিয়র নেতাদের প্রোগ্রামের কথা শুনলেই মিডিয়া কাভারেজ নিজের দিকে ফেরাতে একই সময় প্রেস কনফারেন্স ডেকে বসেন তিনি। অথবা ওই প্রোগ্রামে গিয়ে হাজির হয়ে চলমান ইস্যুতে সিনিয়র নেতাদের আগেই ঝাঝালো বক্তব্য দিয়ে ফেলেন।
 
এছাড়া বিএনপিপন্থী ও বিএনপি সমর্থিত সংগঠনগুলোর প্রোগ্রামে দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য বা ভাইস চেয়ারম্যানদের প্রধান অতিথি করা হলেও প্রধান বক্তা হিসেবে ব্যানারে নাম থাকে রুহুল কবির রিজভীর। এখানেও তিনি চলমান ইস্যুতে দলের অবস্থান আগে-ভাগেই বলে ফেলেন। ফলে অনেক সময় ওই ইস্যুতে আর কোনো বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পান না ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সিনিয়র নেতারা।
 
প্রোগ্রামের অগ্রিম খবর মিডিয়াতে জানানোর ব্যাপারেও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দাঁড় করানো হয়েছে একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট সদস্যদের কেউ দলের সহদপ্তর সম্পাদক, কেউ নির্বাহী সদস্য, কেউ বা নয়াপল্টন কার্যালয়ের স্টাফ।
 
তারা রুহুল কবির রিজভী, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের প্রোগ্রামের খবর যত দ্রুত ও গুরুত্বের সঙ্গে মিডিয়ার কাছে পৌঁছানো হয়, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের প্রোগ্রামের খবর মিডিয়াকে সময় মতো জানাতে ততোটা সিরিয়াস নয়।
 
সূত্রমতে, তৃতীয় সারির নেতাদের এই ‘কাণ্ডারি’ সেজে বসার বিষয়টি খালেদা জিয়া ওয়াকিবহাল। তিনি সবই জানেন। তার সবুজ সংকেত পেয়েই তৃতীয় সারির নেতাদের এমন আচরণ। সে কারণে মনে কষ্ট থাকলেও মুখে কিছু বলেন না প্রথম সারির নেতারা।
 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলে কে কোন দায়িত্ব পালন করবেন, সেটা চেয়ারপারসন নিজে ঠিক করে দেন। সে অনুযায়ীই সবাই কাজ করেন। এ নিয়ে দলের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৭
এজেড/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।