ঢাকা, সোমবার, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০ মহররম ১৪৪৬

বিএনপি

আর কতো চোখের পানি ঝরবে পরিবারটির

মাহবুবুর রহমান মুন্না, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৯ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৭
আর কতো চোখের পানি ঝরবে পরিবারটির খুলনা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলাউদ্দিন মিঠুর শোক সন্তপ্ত পরিবার।

খুলনা: মৃত্যু যেন ঘিরে রেখেছে পরিবারটিকে। ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীদের বুলেটে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েছেন একই পরিবারের তিন সদস্য। মাত্র ১৯ বছরের ব্যবধানে পরিবারের তিন সদস্যের করুণ মৃত্যু স্তব্ধ করে দিয়েছে সবাইকে। 

খুলনা-যশোর মহাসড়ক সংলগ্ন ফুলতলার কাশেম শিল্প নগরের চেয়ারম্যান বাড়িতে বুকফাটা আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

কারণ বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাত ১০টায় দুর্বৃত্তরা খুলনা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলাউদ্দিন মিঠুর অফিসে গিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে।

নিহত আলাউদ্দিন মিঠু ফুলতলা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ফুলতলা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। নিহত তিন চেয়ারম্যানের ফাইল ছবি
এর আগে ১৯৯৮ সালের ১৮ আগস্ট প্রকাশ্য দিবালোকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অফিসে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন মিঠুর বাবা দামোদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) একাধিবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান সরদার আবুল কাশেম। সরদার আলাউদ্দিন মিঠু বাদী হয়ে মামলা করলে তিন আসামির যাবজ্জীবন সাজা হয়। পরে উচ্চ আদালতে জামিন পান তারা। এদিকে, বাবার শূন্যপদে উপ-নির্বাচন করে চেয়ারম্যান হন নিহত কাশেমের বড় ছেলে সরদার আবু সাইদ বাদল। পরে সাধারণ নির্বাচনেও জয় লাভ করেন। ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলা পরিষদের অদূরে দুর্বৃত্তরা তাকেও গুলি করে হত্যা করে। এ ব্যাপারেও মিঠু বাদী হয়ে মামলা করেন। ২০০৯ সালে সরদার আলাউদ্দিন মিঠু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরের বছরের ৬ মার্চ বাদামতলা পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের সামনে দুর্বৃত্তরা মিঠুকে বহনকারী জিপে বোমা হামলা ও গুলি বর্ষণ করে। তাতে আহত হলেও ওই যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যান তিনি। এ বিষয়ে মামলা হলেও সেটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। কিন্তু শুক্রবার আর শেষ রক্ষা হলো না মিঠুর। তার দেহরক্ষী নওশের গাজী ও তিনি সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। ১৯ বছরের মধ্যে পরিবারের তিন সদস্যকে হারিয়ে অন্যরাও আতঙ্কিত। নিরাপত্তাহীনতায় রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ভাবছেন তারা।

এক মৃত্যুর আঘাত সইতে না সইতে আরেক মৃত্যুর ধাক্কা সইছেন মিঠুর বৃদ্ধ মা জাহানারা বেগম।  

অসহনীয় বেদনা নিয়ে তিনি বলেন, ক্ষমতার দ্বন্দ্বে স্বামী আবুল কাশেম, বড় ছেলে আবু সাইদ বাদল ও সর্বশেষ ছেলে আলাউদ্দিন মিঠুকে হারালাম। যে ক্ষমতায় শত্রু হতে হয়, স্বজন হারাতে হয়, এমন ক্ষমতা আমরা আর চাই না।  

নিহত মিঠুর স্ত্রী জোবায়েদা খান সুরভী বলেন, শ্বশুর ও ভাসুর হত্যার পর সুনির্দিষ্টভাবে মামলা করলেও সেটি আলোর মুখ দেখেনি, বিচার পাইনি। তাই এই হত্যারও বিচার চাই না। বিচার আল্লাহর কাছে দিয়ে রেখেছি।  

মিঠুর মেঝ ভাই মো. সেলিম সরদার বলেন, প্রতিপক্ষের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও চরমপন্থি মিলে আগে আমার বাবা ও বড় ভাইকে খুন করেছে। তাদের শাস্তি না হওয়ায় তারাই এবার মিঠুকে হত্যা করেছে।

ব্যক্তিগত জীবনে মিঠু এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে জুবায়ের সরদার সামির (১৬) পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে এবং মেয়ে উম্মে ফাতেমা সিমি (১২) ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।

এদিকে, দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত আলাউদ্দিন মিঠু ও তার দেহরক্ষী নওশের গাজীর মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার আসর বাদ চেয়ারম্যান বাড়ি চত্বরে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।  

খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা বাংলানিউজকে বলেন, মিঠু হত্যার প্রতিবাদে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে চারদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে শনিবার জেলাব্যাপী সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হরতাল রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে খুনিরা ধরা না পড়লে পরে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

ফুলতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) হাওলাদার সানোয়ার হোসেন মাসুম বাংলানিউজকে বলেন, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দু’জনকে আটক করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৭ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৭
এমআরএম/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।