ঢাকা, সোমবার, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০ মহররম ১৪৪৬

বিএনপি

মওদুদের বাড়ি সিলগালা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৬ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০১৭
মওদুদের বাড়ি সিলগালা মওদুদের বাড়ি সিলগালা-ছবি: দীপু মালাকার

ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের গুলশান এভিনিউর ১৫৯ নম্বর বাড়িটি সিলগালা করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক।

দু’টি ঝাড়বাতি বের করার মধ্য দিয়ে ১৪ ঘণ্ট‍ার উচ্ছেদ অভিযান শেষে বুধবার (৮ জুন) দিবাগত রাত ২টা ২৮ মিনিটে বাড়িটি সিলগালা করেন রাজউকের অন্যতম পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার অলিউর রহমানের টিম। ঝাড়বাতি বের করার ঠিক আগে ৫ ট্রাক বই বের করা হয় বাড়ি থেকে।

সিলগালার পর ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার অলিউর রহমান বাড়িটি বুঝিয়ে দেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিকের কাছে। এ সময় রাজউকের (বিষয় ও ভূমি-১ বিভাগের) পরিচালক আনিসুর রহমান, অথরাইজ অফিসার আদিল উজ্জামানসহ রাজউক এবং পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অলিউর রহমান বাংলানিউজকে জানান, আমরা আদালতের নির্দেশে বাড়িটি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি। এখন বাড়ির দায়িত্ব গুলশান থানার ওসিকে বুঝিয়ে দিয়েছি। তারা বাড়িটির দেখভাল করবে।

ওসি আবু বকর সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, সব জিনিসপত্র বের করে বাড়িটি সিলগালা করা হয়েছে। এই বাড়িতে মওদুদ আহমেদের আর কিছু নেই।

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর গত ৩৬ বছর ধরে গুলশানের পরিবার-পরিজন নিয়ে এই বাড়িতে বসবাস করে আসা মওদুদের বাড়িটির উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয় বুধবার দুপুর ১২ ট‍ায়। শেষ হয় বুধবার দিবাগত রাত ২টা ২৮ মিনিটে।

অভিযানের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রায় শতাধিক পুলিশ বাড়ির ভেতরে, বাইরে এবং আশপাশে অবস্থান নেয়। এ সময় সেখানে ছিলেন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও।

বাড়িটির আসবাবপত্র এবং হাজার হাজার বই সরাতে যেয়ে পুলিশ, রাজউকের কর্মকর্তা এবং শ্রমিকরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে রাজউকের কর্মকর্তারা শ্রমিকদের দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ দিচ্ছিলেন। শ্রমিকরা কাজের চাপে পানি আর ইফতার ছাড়া আর কিছু খেতে পারেনি।

আসাদুল ইসল‍াম মানিক নামের এক শ্রমিক বাংল‍ানিউজকে বলেন, বাড়ি থেকে জিনিসপত্র বের  করতে অনন্ত ১-২দিন সময় দেওয়ার দরকার ছিলো। কিন্তু সময় না দেওয়ার ফলে অনেক জিনিস নষ্ট হয়েছে।

মওদুদের বাসার মালামাল স্থানান্তরের কাজে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য রাজউকের দু’টি ট্রাক ও তিনটি পিকআপের সঙ্গে শেষ দিকে আরও ৪টি পিকআপ যোগ করা হয়। বাসা থেকে মালপত্র গুলশান ২ নম্বর সার্কেলের ৫১ নম্বর সড়কে ২ নম্বর হোল্ডিংয়ের একটি অ্যাপার্টমেন্টের ৪০৫ নম্বর ফ্ল্যাটে নিয়ে রাখা হয়। এই ফ্ল্যাটের মালিক মওদুদ আহমদের এক আত্মীয়।

আর কিছু মালপত্র গুলশান ২ নম্বর সার্কেলের ৮৪ নম্বর সড়কের একটি বাসায় রাখা হয়েছে। এ বাসাটি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মালিকানাধীন বলে জানা গেছে।

এ দিকে দুপুরে বাড়ি উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলেও ৩টার দিকে বাড়িটির সামনে এসে অবস্থান নেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। দীর্ঘ সাড়ে সাত ঘণ্টা অবস্থানের পর রাত ১০টা ২৮ মিনিটে বিশ্রামে যান মওদুদ আহমেদ। গুলশান-২ নম্বরের ১৫৯ এর বাসা থেকে ল' রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সভাপতি সালেহ উদ্দিনের সঙ্গে একই গাড়িতে করে ৫১ নম্বর বাসায় যান।

৩৬ বছর ধরে দখলে থাকা ৩শ’ কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি থেকে মওদুদ আহমদকে উচ্ছেদ করার সময় নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিপুল সংখ্যক পুলিশ, দু’টি জলকামান, কয়েকটি প্রিজনভ্যান, সাঁজোয়া যান ও রাজউকের বুলডোজার প্রস্তুত রাখা হয়।

তবে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাসা থেকে কয়েকশ’ গজ দূরের এ বাসা থেকে মওদুদ আহমদকে উচ্ছেদ করতে কোনো বেগ পেতে হয়নি রাজউক বা পুলিশ বাহিনীকে। বিকেল ৩টা থেকে ইফতারের আগ মুহূর্ত পযর্ন্ত ওই বাড়ির সামনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ছাড়া আর কেউ যাননি।

সারা দিন একাই বাড়ির সামনে বসে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ‘অসহায়’ চোখে চেয়ে চেয়ে দেখেছেন ৩৬ বছর ধরে একটু একটু করে গড়া সংসার রাজউকের বুলডোজার বেয়ে উঠছে খোলা ট্রাকে। সন্ধ্যার পর রাজউকের এমন একটি ট্রাক থেকেই বিশাল আকৃতির একটি আলমারি বিকট শব্দে সড়কের ওপর পড়ে যায়। বাসার সামনে নির্বাক বসে থাকা মওদুদ কয়েক পায়ে হেঁটে সামনে গিয়ে দেখে আসেন সড়কের ওপর পড়ে থাকা প্রিয় আলমারিটি।

** অবশেষে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হলেন মওদুদ

** সাড়ে ৭ ঘণ্টা পর বিশ্রামে গেলেন মওদুদ

** সমবেদনা জানাতে মওদুদের বাসার সামনে খালেদা

বাংলাদেশ সময়: ০২৫৫ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৭/আপডেট: ০৫৪৭
এমএফআই/এএটি/এমএইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।