তবে ভোটের প্রস্তুতিই কেবল নয়, কর্মসূচিগুলোর ধরনে জোট প্রধান ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণে তাদের চেষ্টাও প্রকটভাবে দৃশ্যমান।
গোটা রমজানে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ইফতার মাহফিলের আবরণে নির্বাচনী জনসংযোগ করেছেন তারা।
সূত্রমতে, জোটের যেসব নেতা মনোনয়নের ব্যাপারে জোট প্রধানের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছেন তারা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় রয়েছেন।
জোটের ছোট ছোট রাজনৈতিক দল রাজধানীর অভিজাত হোটেল, কনভেনশন সেন্টার, রেস্টুরেন্ট ও কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করে বড় বড় ইফতার মাহফিল আয়োজন করেছে। যাতে প্রধান অতিথি হিসেবে হাজির করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে।
সেখানে দাওয়াত করে আনা হয়েছে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরও। আবার পাল্টা ইফতার পার্টি আয়োজনের ঘটনাও ঘটেছে-যার সব কিছুর মূলেই ছিল নির্বাচনী উত্তাপ। গোটা জুন জুড়েই তা দেখা গেছে।
গত ৬ জুন রাজধানীর লেডিস ক্লাবে ইফতার মাহফিল আয়োজন করে জোটের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। এ আয়োজনের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। যিনি জোট প্রধানের সবুজ সংকেত পেয়ে লক্ষ্ণীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
যে কারণে তার নির্বাচনী এলাকা এবং লক্ষ্ণীপুর জেলার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদদের ইফতার পার্টিতে আমন্ত্রণ জানান। দাওয়াতপত্র পাঠানোর পাশাপাশি ব্যক্তিগত পযায়ে ফোন ও সরাসরি সাক্ষাতে ইফতার পার্টিতে শরিক হওয়ার অনুরোধ জানান এই জোট নেতা।
কিন্তু একই দিন লক্ষ্ণীপুর-১ আসনের বিএনপির সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন রাজধানীর গুলশানের একটি রেস্তরাঁয় পাল্টা ইফতার মাহফিল আয়োজন করেন। আর এই ইফতার মাহফিলে ইন্ধন যোগান খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জাসাসের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মামুন।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্ণেল (অব.) ড. অলি আহমেদ বীরবিক্রম চট্টগ্রাম ১৩ আসনে নির্বাচনের জন্য পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ছয় বারের এই সাবেক সংসদ সদস্য জোট প্রার্থী হিসেবেই লড়বেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এবারের রোজা ও ইদকে নির্বাচনী প্রচারণার মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনিও।
`সরব’ রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে থাকলেও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ নির্বাচন করবেন ভোলা ১ আসন থেকে। সম্প্রতি লন্ডনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার একান্ত বৈঠক আগামী নির্বাচনে জোটের রোডম্যাপ তৈরির মিশন হিসেবে দেখছেন জোট নেতারা।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নির্বাহী সভাপতি মুফতী মুহম্মদ ওয়াক্কাস যশোর ৫ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। ২০০১ সালে এই আসন থেকে জোটের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
প্রয়াত মশিউর রহমান যাদু মিয়ার নাতি বাংলাদেশ ন্যাপ’র চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি নীলফামারী-১ আসন (ডোমার-ডিমলা) থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই আসনে বিএনপির সর্বশেষ সংসদ সদস্য ছিলেন তার পিতা শফিকুল গানি স্বপন।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক নির্বাচন করবেন চট্টগ্রাম ৪ আসন থেকে। তিনিও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন নির্বাচনী এলকার লোকজনের সঙ্গে। রোজার শেষের দিকে এসে সেরে ফেলেছেন নির্বাচনী ইফতার মাহফিল।
এছাড়া গাইবান্ধা ৩ আসনে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ড. টিআইএম ফজলে রাব্বি চৌধুরী, পিরোজপুর ১ আসনে দলটির মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, কিশোরগঞ্জ ৫ আসনে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) সভাপতি এএইচএম কামরুজ্জামান খান, পাবনা ২ আসনে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, নড়াইল ২ আসনে ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, কুমিল্লা ৭ আসনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদওয়ান আহমেদ ও পিরোজপুর ২ আসনে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান নির্বাচনের জন্য জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইফতার ও ঈদ ঘিরে তাদেরও রয়েছে নানান কর্মসূচি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৭ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭
এজেড/এমএমকে