দল হিসেবে বিএনপির এখানকার নাজুক ও শোচনীয় পরিস্থতির কথা কারো অজানা নেই। আদর্শহীনতা, নেতৃত্বের বিপথগামিতা, স্বজন ও আঞ্চলিকতাপ্রীতি, অর্থের মাধ্যমে পদ-পদবি কেনা-বেচার কারণে দলীয় ঐক্য ও শৃঙ্খলা একেবারে তলানিতে চলে আসার জ্বলন্ত প্রমাণ ঈদের দিনের ঘটনায় দেখা গেল।
দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল যে ভালো- তা দুনিয়াশুদ্ধ লোক মানলেও বিএনপি বা খালেদা জিয়া, বা তারেক রহমানরা মানতে নারাজ। দলে শুদ্ধি অভিযানের এতো তাগিদ থাকলেও দল তা গ্রাহ্য করে না। বিএনপির যেসব দুর্নীতিবাজদের জন্য ১/১১-এর মতো চরম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, তাদেরকে শুদ্ধ করা দূরে থাকুক, বরং জামাই আদরে রাখা হচ্ছে। তারা যে আত্মঘাতী কলহে দলকে শেষ করে দিচ্ছেন, এমনকি খালেদা জিয়ার সামনে পর্যন্ত বেপরোয়া আচরণ করছেন, তাতেও কারো বোধোদয় হচ্ছে না।
বরং বিএনপিতে এখন সবচেয়ে ‘প্রভাবশালী’ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, যিনি পতনের শেষ দিন পর্যন্ত এরশাদের আনুগত্য করেছেন। নোয়াখালীতে পরাজিত এহেন মওদুদকে এক পর্যায়ে বগুড়া থেকেও পাস করিয়ে এনেছিল বিএনপি। দীর্ঘদিন ধরে শত কোটি টাকার সরকারি বাড়ি দখলকারী মওদুদ তার বাড়ির ইস্যুকে দলের এজেন্ডা বানিয়েছেন। তারেক জিয়া ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত বিষয় ও মামলা-মোকদ্দমাও এখন বিএনপির প্রধান এজেন্ডা! ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়- এ আদর্শমূলক কথা বিএনপির জন্য মোটেও খাটে না।
প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, ব্যক্তিগত এজেন্ডার জন্য দলের ত্যাগী কর্মীরা আত্মাহুতি দেবেন কেন? কেন জেল-জুলুম খাটবেন ব্যক্তি বিশেষের প্রয়োজনে? জনগণই বা কেন জাতীয় ইস্যুর বদলে ব্যক্তিগত এজেন্ডাধারী বিএনপিকে পছন্দ করবেন?
বিশেষত, যে দলের নেতাকর্মীরা বিরোধী দলে থাকতেই শীর্ষ নেতৃত্বের সামনে সন্ত্রাসী আচরণ করেন, তাদের ওপর কতোটুকু ভরসা করা যায়? ক্ষমতায় গেলে এসব উগ্র, শৃঙ্খলাহীন, লাগামছাড়া নেতাকর্মীরাই জনগণের বারোটা বাজিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করবেন- তাতে আর সন্দেহ কি!
বিএনপি স্বীয় কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দলটির প্রকৃত চিত্র সবার সামনে তুলে ধরে নিজের নীতিহীনতার ছবি ও দেউলিয়া পরিস্থিতিই উপস্থাপন করেছে। এ ছবি নিশ্চয়ই বাংলাদেশের রাজনীতি সচেতন মানুষ মনে রাখবেন এবং নিজেদেরকে সতর্ক হতে কাজে লাগাবেন।
খালেদার ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে চরম বিশৃঙ্খলা
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪১ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৭
বিএস/এএসআর