তবে বিএনপির চেষ্টা থাকবে বুঝিয়ে-সুজিয়ে জামায়াতকে ২০/২৫টি আসনে সীমাবদ্ধ রাখতে। কারণ, জোটের বাকি ১৮ দলকেও ১০/১৫টি আসন ছেড়ে দিতে হবে।
বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। তারা বলছেন, নিজেদের ব্যানার ও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে না পারলেও আগামী নির্বাচনে ৩০টির অধিক আসনে মনোনয়ন চাইবে জামায়াত।
সর্বশেষ, ২০০৮ সালের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে জামায়াতকে ৩৫টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল বিএনপি। সেবার নৌকার গণজোয়ারের মধ্যে মাত্র ৩টি আসনে জয় পায় স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত।
বাকি ৩২টি আসনে মহাজোট মনোনীত প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হয় তারা। জোটগত ওই নির্বাচনে ধানের শীষের ভোট দাড়িপাল্লায় পড়ায় পরাজিত প্রায় সব আসনে জামায়াতের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এবারও ওইসব আসনে মনোনয়ন দাবি করছে জামায়াত। কোনো অবস্থাতেই ওই ৩৫টি আসনে ছাড় দিতে চাচ্ছে না তারা। এ আসনগুলোতে নির্বাচনের জন্য এরইমধ্যে প্রার্থী প্রস্তুত করে ফেলেছে বিএনপি জোটের দ্বিতীয় বৃহৎ শক্তি জামায়াত।
সূত্রমতে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় মতিউর রহমান নিজামীর পাবনা-১, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফরিদপুর-৩ এবং মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের শেরপুর-১ আসন জামায়াতকে আর ছেড়ে দিতে হবে না- এমনটিই ভেবেছিল বিএনপি।
একই মামলায় আবদুস সোবহান ও এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায় হওয়ায় পাবনা-৫ ও রংপুর-২ আসন এবং দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড হওয়ায় পিরোজপুর-১ আসন নিয়েও নির্ভার ছিল বিএনপি।
কিন্তু সম্প্রতি রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে চাউর হওয়া ‘দণ্ড কার্যকর হওয়া ও দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় ডেকে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছে জামায়াত’-এমন একটি সংবাদ বিএনপির কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে।
পাবনা-১ আসনে মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে নকীবুর রহমান, ফরিদপুর-৩ আসনে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহম্মদ মাবরুর, পিরোজপুর-১ আসনে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদীর মনোনয়ন নিশ্চিত করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর জামায়াত।
অবশ্য ২০০৮ সালের নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ আসনে চার দলীয় জোট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন। সেখানে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ দ্বিতীয় হয়েছিলেন।
সুতরাং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ আসনে মুজাহিদপুত্র আলী আহম্মদ মাবরুর, নাকি দলের ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ মনোনয়ন পাবেন-তা নিয়ে জটিল সমীকরণে যেতে হবে বিএনপিকে।
এদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী কক্সবাজার-২ আসনে জামায়াতের এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ ও চট্টগ্রাম-১৪ আসনে বিজয়ী আ ন ম শামসুল ইসলামকে এবারও আসন ছেড়ে দিতে হবে বিএনপিকে।
এ ছাড়া নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে যারা দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন তাদেরকেও আসন ছেড়ে দিতে হবে। ২০০৮ সালের ফলাফলে জামায়াত দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল এমন ৩১ টি আসনের মধ্যে আছে ঠাকুরগাঁও-২, দিনাজপুর-১ ও ৬, নীলফামারী-২ ও ৩, লালমনিরহাট-১, রংপুর-১ ও ২, গাইবান্ধা-১, ৩ ও ৪, সিরাজগঞ্জ-৪, পাবনা-১ ও ৫, চুয়াডাঙ্গা-২, ঝিনাইদহ-৩, যশোর-১ ও ২, বাগেরহাট-৩ ও ৪, খুলনা-৫ ও ৬, সাতক্ষীরা-২, ৩ ও ৪, পিরোজপুর-১, শেরপুর-১, সিলেট-৫ ও ৬, কুমিল্লা-১১ ও চট্টগ্রাম-১৪ আসন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, এখন পযর্ন্ত আসন ভাগভাগি নিয়ে জোট শরিকদের সঙ্গে কোনো আলাপ হয় নি। নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নিলে অবশ্যই আমরা শরিকদের জন্য আসন ছেড়ে দেব। তার আগে দেখতে হবে, ওইসব আসনে তাদের জনসমর্থন আছে কি না? নির্বাচন করার মতো সামর্থ প্রার্থীর আছে কি না?
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৭
এজেড/জেডএম