মঙ্গলবার (০৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় উত্তরার বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অবস্থানের কথা জানান।
ফখরুল বলেন, আমরা সংঘাতে যেতে চাই না, সংঘাত এড়িয়ে যেতে চাই।
বিএনপি সত্যিকার অর্থে নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা কিন্তু রিজিড ব্যাপার নয়। আমরা এ নিয়ে আলোচনা করতে চাই, সমঝোতা করতে চাই। আমরা আশা করে আছি, সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।
গণতন্ত্রের আলোচনা-সংলাপ না থাকলে সংকট উত্তরণে পথ পাওয়া যাবে না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন- আপনি চতুর্দিক বন্ধ করে দেবেন, পথ খোলা রাখবেন না, হাওয়া আসবে না, হাওয়া যাবে না। তাহলে কেমন করে হবে? গণতন্ত্রের বাতাস তো বয়বে না।
নির্বাচন ঘনিয়ে এলে সরকার সংলাপের ব্যাপারে নমনীয় হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসবে, তখন সংলাপের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করবেন তারা। ততোদিনে আমাদের এই কথাটার প্রভাব কতটুকু পড়ছে, দেশে-বিদেশে আন্তর্জাতিক বিশ্বে, গণতান্ত্রিক বিশ্বে। তার ওপরে নির্ভর করবে যে, উনারা (সরকার) বিষয়টিকে কীভাবে নিচ্ছে।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে উনারা (ক্ষমতাসীনরা) যদি সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমিক হয়ে থাকেন, দেশের ভালো চান, কল্যাণ চান, গণতান্ত্রিক হয়ে থাকেন, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন তাহলে তারা সংলাপ করবেন।
সুষ্ঠু করতে হলে অবশ্যই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ এই সরকারের প্রতি আস্থা নেই। এখনই সব দাম্ভিকতা পরিহার করতে হবে। আমি সবকিছু চাপিয়ে দেব- সেই ধারণা বদলাতে হবে।
ফখরুল বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যত ক্ষমতাশালী, তাতে তার পক্ষে ওই সময়ে (নির্বাচনকালীন) চুপ করে থাকা বা কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণ না করা- এটা অসম্ভব ব্যাপার। যে কারণে আমরা মনে করি যে, যদি নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হয়, তাকে (শেখ হাসিনা) সরে যেতে হবে এবং একটা নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে।
সম্প্রতি কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমানের ‘গুম’ হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই যদি হয় দেশের অবস্থা, আমরা কোন দেশে বাস করছি? এটা তো আমরা আওয়ামী লীগের থেকে আশা করি নাই। নিখোঁজদের খুঁজে বের করে দেয়া কী সরকারের বা রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়।
নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার প্রয়োজন আছে কিনা প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বরাবরই বলে এসেছি, নির্বাচনের আগে সংসদ ভাঙতেই হবে। এর তো বিকল্প নেই। এটা তো একটা হাস্যকর ঘটনা যে তিনশ জনের সংসদ নির্বাচনের সময়ে ৬শ জনের সংসদ থাকবে। সংসদ ভেঙে দিতেই হবে।
রোহিঙ্গা সমস্যা জাতিসংঘের তোলার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে রোহিঙ্গারা যে ধর্মেরই হোক, যে জাতির হোক তারা মানুষ তো। নারী-শিশু নিয়ে কিভাবে আসছে ছবি দেখলে নিজেকে সামলে রাখা যায় না। তাদের আজকে আমরা জায়গা পর্যন্ত দিচ্ছি না। বন্দুক নিয়ে পাহারা দিচ্ছে যাতে তারা ঢুকতে না পারে- এটা অমানবিক।
তিনি বলেন, যেটা বলা হলো- হেলিকপ্টার আসছে, গোলাগুলি হলো, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর হুমকি হয়ে আসছে। অবশ্যই সরকারের উচিৎ অবিলম্বে মায়ানমার সরকারকে বলা, তুমি এগুলো বন্ধ করো, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করো। অন্যথায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ সরকারকেই এই বিষয়টা তোলা উচিত, দেরি না করে।
ফখরুল বলেন, মালদ্বীপ মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলেছে। ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশে এসে গেছেন। সেখানে আমাদের ভূমিকাটা কী হচ্ছে? আমরা মানুষগুলোকে তো আশ্রয় দিচ্ছি না, কোনো পদক্ষেপও আমরা নিচ্ছি না এসব বন্ধ করার জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৭
এজেড/এসএইচ