ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

সেফজোন রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান নয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭
সেফজোন রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান নয় 'জেনোসাইড ইন মিয়ানমার অ্যান্ড দ্যা রোল অব বাংলাদেশ' শীর্ষক রাউন্ড টেবিল বৈঠকে বিএনপি নেতারা। ছবি: সুমন

ঢাকা :  রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সেফজোন গঠনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি নেতারা বলেছেন, এটি রোহিঙ্গা সমস্যার কোনো সমাধান দিতে পারবে না। বরং এটি তাদের জন্য ভয়ংকর হবে। শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য নয়, বাংলাদেশের জন্যও সেফজন ভবিষ্যতে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

রোববার  (২৪ সেপ্টেম্বর ) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে  আয়োজিত  'জেনোসাইড ইন মিয়ানমার অ্যান্ড দ্যা রোল অব বাংলাদেশ' শীর্ষক রাউন্ড টেবিল বৈঠকে বিএনপি নেতারা এ কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে রাউন্ড টেবিল আলোচনায় অংশ নেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য  ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল  (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মঞ্জুর মোরশেদ খান, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সুকোমল বড়ুয়া।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. সিরাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।

আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মাহবুব উল্লাহ ও আসিফ নজরুল।

এ ছাড়া  ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মালদ্বীপ, নেপাল, ফ্রান্স, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ড ও পাকিস্তানের কূটনীতিকরা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে কয়েকজন আলোচনায় অংশ নেন।

ড.  খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের শুরুতে বাংলাদেশ সরকার এটিকে কূটনৈতিকভাবে ঠিক মতো মোকাবেলা করতে পারে নি। অবশেষে বিশ্ব সম্প্রদায় যখন বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছে ঠিক তখন সরকার ইউটার্ন নেয়। এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

তিনি বলেন,  রোহিঙ্গাদের জন্য সেফজোন গঠনের কথা বলা হচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছি। কারণ, এতে রোহিঙ্গা সমসার কোনো সমাধান হবে না। তাদেরকে মিয়ানমারে নাগরিকত্ব দিয়ে সে দেশে ফেরত নিতে হবে।

জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের পর বিএনপির শীর্ষ নেতারা অভিযোগ করে আসছিলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেন নি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

কিন্তু সেমিনারে ড .খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন,  শুরুতে রোহিঙ্গা ইস্যু গুরুত্ব দিলে হয়তো তাদের ওপর এই হত্যাযজ্ঞ চালানোর সাহস পেত না মিয়ানমার। অবশ্য প্রথম দিকে তো এটাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকার করেন নি শেখ হাসিনা। অবশেষে জাতিসংঘের ভাষণে তিনি বলেছেন, টু স্টপ জেনোসাইড।

বিএনপির পক্ষ থেকে কয়েকটি সুপারিশও তুলে ধরেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মিয়ানমারের নাগরিত্ব দিয়ে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করা এবং সেফজোন কনসেপ্ট থেকে সরে আসা, রোহিঙ্গাদের শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া,  তাদের খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান ও নিরাপত্তা দেওয়া।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড . মাহবুব উল্লাহ বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য সেফজোন সৃষ্টি করা অত্যন্ত বিপদজনক। এই সেফজোন রোহিঙ্গাদের জন্য ধ্বংস ডেকে আনবে। বসনিয়া, উগান্ডার অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, সমস্যা সমাধানে সেফজোন কোনো কাজে আসেনি।

রোহিঙ্গারা কী পরিমাণ অপমান নিয়ে সেখানে বসবাস করছিল, সেটা রাষ্ট্রহীন না হলে কারো বোঝার কথা নয়। রোহিঙ্গারা নিজ গ্রাম থেকে বের হতে পারত না। বিয়ে করতে গেলে সরকারের অনুমতি নিতে হতো।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন,  রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান এখনো আমাদের, বিশ্ববাসীর কাছে পরিষ্কার না। আমরা জানি না সরকার এখন কোথায় আছে।

তিনি বলেন, প্রথমে পুশব্যাক, তারপর যৌথ অভিযান, রোহিঙ্গাদের মাদকপাচারকারী বানানো- সব কিছু আমরা দেখেছি, পরবর্তীতে যখন বিশ্ব জাগল তখন তাদের আশ্রয় দেওয়া হলো। কিন্তু এর পর কি হলো তা আমাদের বোঝা দরকার। কপি আনানের রিপোর্টের কথা বলা হচ্ছে। অথচ ওই রিপোর্টে রোহিঙ্গা কথাটাই নেই। এখন আবার সেফজোনের কথা বলা হচ্ছে। সেফজোন হলে চিরতরে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ হারাবে।

বাংলাদেশ সময়:  ১৯২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭
এজেড /জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।