মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বক্সীবাজারের বিশেষ আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কৌসুলি মোশাররফ হোসেন কাজলের মামলার অনুসন্ধান রিপোর্ট ও এজাহার পড়ার মধ্য দিয়ে যুক্তিতর্কের এই শুনানি শুরু হয়। আড়াই ঘণ্টারও বেশী সময় শুনানি চলে।
আগামী বুধ (২০ ডিসেম্বর) ও বৃহস্পতিবার আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ধার্য আছে।
মোশাররফ হোসেন কাজল যুক্তিতর্ক শেষে খালেদা জিয়ার যাবজ্জীবনসহ সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করেন।
সাক্ষীর সাক্ষ্য উদ্ধৃত করে কাজল বলেন, খালেদা জিয়া ১৯৯১-৯৬ সময়কালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ইউনাইটেড সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে
এতিমদের জন্য ১২ লাখ ৫৫ হাজার ইউএস ডলার যা তৎকালীন বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা অনুদান প্রাপ্ত হন।
দেশে শত সহস্র প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা থাকা সত্ত্বেও সেসব এতিম খানায় এ অর্থ প্রদান না করে সরকারি তহবিলে বিদ্যমান ওই টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে নিজ পুত্রদ্বয় তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান এবং মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে দিয়ে একটি নতুন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট গঠন করেন।
ওই অনুদানের টাকা থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বগুড়ায় একটি এতিমখানা স্থাপনের নামে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অনুকুলে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করেন।
ওই টাকা থেকে ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করে বগুড়ায় ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা দিয়ে ২.৭৯ একর জমি কেনা হয়। কিন্তু ১৩ বছর কাল কোন এতিমখানা স্থাপন না করায় ওই টাকা অব্যয়িত রয়ে যায়। যা সুদ-আসলে এখন ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৯ হাজার ৭৫৭ টাকা ।
কাজল বলেন, ওই টাকা থেকে খালেদা জিয়া ২০০৬ সালে তারেক রহমান ও মমিনুর রহমানকে দিয়ে ৬টি চেকে ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা টাকা গুলশানের প্রাইম ব্যাংকে এফডিআর হিসাব খোলার নামে স্থানান্তর করেন।
খালেদা জিয়ার পক্ষে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে লাভবান হওয়া কিংবা অন্যকে লাভবান করার অভিযোগ আনা হয়।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুই দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালতে।
২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
মামলায় খালেদা জিয়াসহ আসামি মোট ছয়জন। অন্য পাঁচ আসামি হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। বাকিরা জামিনে আছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৭
এমআই/জেডএম