মামলার ধরন অনুযায়ী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কারাদণ্ড ঘোষণা হবে বলে ধারণা আইনজীবীদের। আর এমন পরিস্থিতি যদি তৈরিই হয়, তবে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে কে আসবেন? কে বিকল্প হতে পারেন খালেদা জিয়ার? এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে নানামুখী গুঞ্জন।
দলটির নেতাকর্মীরা বিশ্বাস করেন, বিএনপি মানেই জিয়া পরিবারের নেতৃত্ব। বিশেষ করে রাজনৈতিক দুর্যোগ ১/১১ পর থেকে তাদের বিশ্বাস আরও মজবুত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ৮ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) মামলার রায়ে যদি খালেদা জিয়ার সাজা হয়, সেক্ষেত্রেও জিয়া পরিবারের নেতৃত্ব বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সূত্র জানিয়েছে, চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালনে খালেদা জিয়ার বিকল্প দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, তারেক রহমানের নামেও অসংখ্য মামলা রয়েছে। কার্যত তিনি ফেরারি। তিনিও এ মুহূর্তে দেশে আসতে পারছেন না। এই বিবেচনায় কেউ কেউ ধারণা করছেন, খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ তথা তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমান দেশে এসে দলের হাল ধরতে পারেন।
তবে দায়িত্বশীল কোনো নেতাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একটি সূত্র জানিয়েছে, দলের চেয়ারপারসন শারীরিক ও মানসিকভাবে যতদিন সুস্থ থাকবেন ততদিন তিনিই দলের প্রধান হয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর নেত্রী যদি অন্য কাউকে ভাবেন, তা দলের নেতাকর্মীরা মেনে নেবেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফা সুলতানা রুমা বাংলানিউজকে বলেন, দলের নেতৃত্বে কে আসবেন তা একান্ত ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) ব্যাপার। এছাড়া এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে হয়তো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে। আমার দৃষ্টিতে ম্যাডামের বিকল্প কেউ নেই। তবে ম্যাডাম যাকে যোগ্য মনে করবেন তার হাতেই তুলে দেবেন দলের নেতৃত্ব।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার বলেন, এটা আমাদের নীতিনির্ধারকদের ব্যাপার। তারা এরই মধ্যে ম্যাডামের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, প্রয়োজনে যে কেউ নেতৃত্বে আসতে পারেন, তবে আগে-ভাগেই কিছু বলা যায় না। দেখুন না রায়ে কি হয়।
বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, দলে খালেদা জিয়ার বিকল্প খালেদা জিয়াই। সাময়িকভাবে ম্যাডাম যদি কাউকে ভেবে থাকেন সেক্ষেত্রে তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা দলের নেতাকর্মীরাও মেনে নেবেন। আমার মনে হয় না, এ ব্যাপারে কেউ দ্বিমত পোষণ করবেন। অন্য কারো সিদ্ধান্তে কিছু হবে বলে মনে হয় না। দলের নেতাকর্মীরাও সেটা বিশ্বাস করে না। সুতরাং ম্যাডাম দলের নেতৃত্ব যাকেই দেন না কেন কোনো দ্বিমত ছাড়াই সেই অনুযায়ী কাজ করবো।
দল চেয়ারপারসনের বিকল্প কিছু ভাবছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি নেতৃত্বের প্রশ্নে অতীতের চেয়ে এখন অনেক বেশী ঐক্যবদ্ধ। দলে চেয়ারপারসনের পর সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আছেন, পার্টির আরো নেতারা আছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দল ধারাবাহিকভাবে রান করবে। এছাড়া ম্যাডামের আপসহীনতা, দৃঢ়তা এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সক্ষমতা আছে।
তিনি আরও বলেন, কিভাবে- কে নেতৃত্বে আসবে তার চেয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে কিভাবে মোকাবেলা করা যাবে সেটা নিয়ে ভাবছে দল। এছাড়া কিভাবে দল চলবে তার জন্য তো গঠনতন্ত্র আছেই। দলের চেয়ারপারসনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা থাকা সত্বেও তিনি নিয়মতান্ত্রিকভাবে দল পরিচালনা করছেন। ম্যাডামের অনুপস্থিতি এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক হবে, বেদনাদায়ক হবে। সরকার হয়তো মনে করছেন, ম্যাডামকে সাজা দিলে বিএনপি দুর্বল হয়ে পড়বে। একটা রাজনৈতিক দলকে দুর্বল করা এতটা সহজ নয়। সরকার যেটা মনে করছে তাতে 'হিতে বিপরীত' হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৮
এএম/এসএইচ