ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

যা থাকছে বিএনপির লিফলেটে

অন্তু মুজাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৮
যা থাকছে বিএনপির লিফলেটে বিএনপির লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি বৃহস্পতিবার

ঢাকা: কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে দেশব্যাপী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে লিফলেট বিতরণের প্রস্তুতি চলছে বিএনপিতে। বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) এই লিফলেট বিতরণের জন্য এরইমধ্যে কেন্দ্র থেকে পৌঁছে গেছে জেলায় জেলায়। কী থাকছে এই লিফলেটে?

এ বিষয়ে দলের শীর্ষ ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিতরণের জন্য তৈরি করা দু’টি লিফলেটের একটিতে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। আরেকটিতে তুলে ধরা হয়েছে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর ‘পেছনের ষড়যন্ত্র’ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’র নানা অভিযোগ।

বিএনপির লিফলেট‘বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি কর্তৃক প্রকাশিত’ প্রথম লিফলেটের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রতিহিংসার বিচারে বন্দি; গণতন্ত্র, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জনগণের আস্থার প্রতীক দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার দেশবাসীর প্রতি আহ্বান’। আর দ্বিতীয় লিফলেটের শিরোনাম ‘শেখ হাসিনার ১৫ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহার/খারিজ বনাম উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভিত্তিহীন মামলায় খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড’।

প্রথম লিফলেট কয়েকদিন আগেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই লিফলেটে মোট নয়টি পয়েন্ট তুলে ধরা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ‘দেশের সব প্রথা-প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। কথা বলার অধিকার নেই, গণতন্ত্র নেই, মানুষের ভোটের অধিকার নেই। ১০ টাকা দরে চাল খাওয়ানোর ওয়াদাকে ভাঁওতাবাজি প্রমাণ করে চালের দাম এখন ৭০ টাকা। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। ’

এতে দাবি করা হয়েছে, ‘মানুষের কাজের সংস্থান নেই। চাকরির খোঁজে লুকিয়ে বিদেশ যাওয়ার পথে আমাদের তরুণরা সাগরে ডুবে মরছে। ’ 

লিফলেটটিতে বলা হয়েছে, ‘উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় পাঁচ-দশগুণ বাড়িয়ে এরা লুটের রাজত্ব কায়েম করেছে। দুর্নীতি এখন লাগামছাড়া। ’

দেশে ন্যায়বিচার নেই, ইনসাফ নেই, জনগণের নিরাপত্তা নেই। নারী ও শিশুরা পাশবিক নির্যাতনের শিকার বলেও দাবি করা হয়েছে লিফলেটটিতে।

এতে আরও বলা হয়েছে, ‘দেশে এখন সত্যিকারের সংসদ নেই। তথাকথিত সংসদে নেই প্রকৃত বিরোধী দল। শাসকদের কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। ’

‘অনেক মানুষ গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। দুঃসহ বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন অগণিত নেতাকর্মী ও ভিন্নমতের মানুষরা। অসংখ্য মানুষ হামলা-মামলা-হুলিয়া নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ’

বাংলাদেশের মানুষ এই দুঃসহ অবস্থা থেকে মুক্তি চায় উল্লেখ করে ‘খালেদার আহ্বান’র লিফলেটে বলা হয়েছে, ‘আমাকে আপনাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা হলেও বিশ্বাস করবেন আমি আপনাদের সঙ্গেই আছি। ’

‘আপনারা গণতন্ত্রের জন্য, অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, জনগণের সরকার কায়েমের জন্য শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। আমি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবো না। ’

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে পাঠানো দ্বিতীয় লিফলেটটিতে মূলত দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে ‘নির্দোষ’ প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে। আর দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।

এতে বলা হয়েছে, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটির বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। অথচ ওই ট্রাস্টের কোনো অর্থই আত্মসাৎ হয়নি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে একখণ্ড জমি ক্রয় ছাড়া বাকি এক টাকাও কোথাও খরচ করা হয়নি। বরং সেই ২ কোটি টাকা এখন সুদে-আসলে ৬ কোটি হয়ে ট্রাস্টের নামেই ব্যাংকে পড়ে আছে। ওই ট্রাস্টের গঠন ও পরিচালনার সঙ্গে খালেদা জিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই এবং ছিল না…। এরপরও আইনের মারপ্যাঁচে পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ’বিএনপির লিফলেটলিফলেটটিতে বলা হয়েছে, ‘বিচার ব্যবস্থাকে কব্জা করে এই রায়ের মাধ্যমে শেখ হাসিনা তার চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছেন। ’

পাকিস্তান শাসনামলে দুর্নীতি মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাদণ্ডের কথা উল্লেখ করে এতে বলা হয়েছে, ‘বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে কারাগারে যেতে হয়েছে। দেশবাসী তাদের কাউকেই প্রত্যাখ্যান করেনি- বরং তাদের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। যারা তাদের কারাগারে নিয়েছিল, তারাই আজ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। ’

লিফলেটটিতে দাবি করা হয়েছে, ‘১/১১ এর সেনাসমর্থিত জরুরি সরকারের বিদায়ের প্রাক্কালে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা উভয়ের নামে মামলা দায়ের করা হয়। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে তার বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার বা অনুগত বিচারকের মাধ্যমে বাতিল করিয়ে নেন। ’

প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার বা খারিজে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন আহমেদ মানিক, বিচারপতি শামসুল হুদাসহ একাধিক বিচারপতির নাম উল্লেখ করে তাদের ‘অনুগত ভূমিকা’র অভিযোগ তোলা হয়েছে লিফলেটটিতে।

লিফলেটের শেষ দিকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, ‘এক টাকাও দুর্নীতি না করে খালেদা জিয়াকে যদি জেলে যেতে হয়, তবে হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার ও অন্যান্যদের কী শাস্তি হওয়া উচিৎ, তা ভবিষ্যতে জনগণের আদালতেই নির্ধারিত হবে। ’

লিফলেট দু’টি এরইমধ্যে রাজধানীসহ সারাদেশের জেলা ও মহানগরী পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদ।

লিফলেট পাওয়া মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুণ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রের পাঠানো লিফলেট সংগ্রহ করেছি। রাতেই জেলার অন্যান্য শহরে পাঠানো হবে। আগামীকাল একযোগে জনগণের কাছে চেয়ারপারসনের বাণী পৌঁছে দেবো এবং সবাইকে এই অনাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানাবো। ’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি প্রধান খালেদাকে কারাগারে পাঠানোর পর থেকে নানা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এরমধ্যে অবস্থান, মানববন্ধন, অনশন, স্মারকলিপি ও কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য। সবশেষ মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ সম্মেলন করে ‘লিফলেট বিতরণ’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বিএনপি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৮
এএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।