ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

ক্ষুব্ধ বিএনপির তৃণমূল, চায় কঠোর কর্মসূচি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪১ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৮
ক্ষুব্ধ বিএনপির তৃণমূল, চায় কঠোর কর্মসূচি নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া

ঢাকা: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাসের প্রায় তিন মাস হয়ে গেলেও কঠোর কোনও কর্মসূচি দেয়নি বিএনপি। ‘কারাবন্দি নেত্রীর নির্দেশেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি’ দেওয়া হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন সিনিয়র নেতারা। কিন্তু এতে একমত হতে পারছেন না তৃণমূল কর্মীরা। তারা ধারণা করছেন, এমন ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে’ সহসা খালেদার মুক্তির লক্ষণ নেই। তাই কঠোর কর্মসূচি দিয়েই দাবি আদায় করতে হবে। 

দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এ ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ওই মামলায় পাঁচ বছরের সাজা ঘোষণার পর থেকে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া।

প্রথমে তার মুক্তির কথা বললেও পরে বিএনপি ব্যস্ত হয়ে যায় কারাগারে তার ডিভিশন (প্রথম শ্রেণির বন্দি হিসেবে প্রাপ্য সুবিধা) নিশ্চিতের দাবি আদায়ে। এখন খালেদাকে মুক্ত করতে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়লেও নেতারা বেশি বলছেন কারাগার থেকেই খালেদার পছন্দের ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তাকে চিকিৎসা দিতে।  

এরমধ্যে অবশ্য দলটির পক্ষ থেকে মানববন্ধন, অনশন, অবস্থান কর্মসূচি, কালো পতাকা প্রদর্শন, স্মারকলিপি প্রদান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি কর্মসূচি ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ ঘোষিত সময়েরও আগে গুটিয়ে নেয় তারা। বারবার সমাবেশের ঘোষণা দিয়েও তার আয়োজন করতে পারেনি একাধিকবার সরকার গঠন করা দলটি। সবশেষ সোমবারই নয়াপল্টনে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু অনুমতি মেলেনি বিধায় এর বদলে বুধবার (৯ মে) ঢাকার প্রতিটি থানায় বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে।
 
যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য গিয়াস উদ্দিন আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, বিগত দিনে সিনিয়র নেতারা যেসব কর্মসূচি দিয়েছেন, তাতে নেত্রীর মুক্তির কোনও সম্ভাবনা দেখছি না। এসব কর্মসূচিতে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা খুশি নন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগরের মাঠ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা বলেন, দাবি আদায়ের জন্য কঠোর কর্মসূচির বিকল্প নেই। ‘নরম’ কর্মসূচিতে কোনও সরকার দাবি মেনে নেয় বলে নজির নেই। আর কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে ঢাকায়ই। বিগত দিনে ঢাকার বাইরে কঠোর কর্মসূচি পালন হলেও সরকারের ভিত নড়বড়ে করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ঢাকায় কর্মসূচি দেওয়ার মতো শক্তি এখন মহানগর বিএনপির নেই। এর সবচেয়ে বড় কারণ ওয়ার্ড কমিটি না থাকা। দীর্ঘদিন যাবত ওয়ার্ডে কমিটি না থাকায় ঝিমিয়ে পড়েছে কর্মীরা।

তারা বলেন, মহানগর বিএনপিকে শক্তিশালী করার জন্য বারবার নেতা পরিবর্তন করা হলেও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটিগুলো এখনও করা হয়নি। ফলে আন্দোলন-সংগ্রামে যারা নেতৃত্ব দেবেন তারাই মাঠে নামেন না। অনেকে মামলা-হামলার ভয়ে রাজনীতি থেকেও দূরে থাকছেন। কারণ জেল-জুলুম হুলিয়ায় ‘সাপোর্ট’ দেওয়ার মতো নেতা পান না তৃণমূল কর্মীরা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক সিকদার বাংলানিউজকে বলেন, মাঠ পর্যায় থেকে কঠিন কর্মসূচির চাপ থাকলেও ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) নির্দেশেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। এতে সরকারের টনক না নড়লে একসময় মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরাই রাস্তায় কঠোর কর্মসূচিতে নেমে যাবে। তখন আর কর্মসূচির জন্য কেউ অপেক্ষা করবে না।

খালেদার শারীরিক অসুস্থতার খবরে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এখন ক্ষুব্ধ জানিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, বারবার সরকারকে অনুরোধ করা সত্ত্বেও নেত্রীর চিকিৎসার বিষয়টিকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না। এতে দিন দিন ক্ষোভ বাড়ছেই।

ঢাকায় আন্দোলনের জন্য মহানগর কমিটি কতটা প্রস্তুত? এমন প্রশ্নের জবাবে রফিক সিকদার বলেন, ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি না থাকাটাই দু্র্বলতা। আশা করি সামনের রমজান মাসকে সাংগঠনিক মাস হিসেবে গ্রহণ করে মহানগরকে শক্তিশালী করা হবে। দলেও এ ধরনের একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নাজমুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘ হওয়ায় স্বাভাবিক কারণেই মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। নেত্রীর প্রতি সারাদেশের লাখ লাখ নেতাকর্মীর গভীর ভালবাসার কারণেই সিনিয়র নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ তারা। খালেদাকে মুক্ত করার জন্য যে ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে তাতে সবাই সন্তষ্ট নয়। তবে সিনিয়র নেতারা কৌশলেই এগোচ্ছেন। একসময় তারাই কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবেন।

খালেদা জিয়া কোনও অন্যায় করেননি, রাজনৈতিক কারণেই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে দাবি করে নাজমুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিকভাবেই তাকে বের করতে হবে। এজন্য কঠোর আন্দোলনের বিকল্প নেই।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আ ন হ আকতার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমি ইঞ্জিনিয়ার মানুষ। টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে কাজ করি। রাজনীতির সঙ্গে তেমনভাবে সম্পৃক্ত নই। তবে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে সরকার সহসাই মুক্তি দেবে এমন কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না।

শেষ পর্যন্ত বিএনপির সিনিয়র নেতৃত্ব কী করবে? এ বিষয়ে রোববারই (৬ মে) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশনায় ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। প্রয়োজনের তাগিদে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং দলের নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তা পরিবর্তন হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৭ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৮
এমএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।