বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার কারামুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বুধবার (২৯ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে প্রাণ হারানো আওয়ামী লীগের নেত্রী আইভি রহমানের কবরে সম্প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হলে বিএনপি নতুন করে রাজনৈতিক সংকটে পড়বে।
এ বক্তব্যের জবাবে শাসুজ্জামান দুদু বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারের আগেই আইনমন্ত্রী (আনিসুল হক) এবং সড়ক পরিবহনমন্ত্রী (কাদের) বলে দিচ্ছেন- রায় হলে বিএনপি বিপদে পড়ে যাবে। তাহলে রায় কি আপনারা লিখেছেন? আমি আপনাদের বলছি, এই রায় কি আপনারা গণভবনে বসে সবার উপস্থিতিতে লিখেছেন? যদি না লিখে থাকেন তাহলে কিভাবে এ কথা বলছেন? কারণ আমরা জানি এই মামলায় তারেক রহমান বেকসুর খালাস পাবেন। খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ যাদের মামলার আসামি করা হয়েছে তাদের কারও সঙ্গে এই মামলার কোনো সম্পর্ক ছিল না, আপনারা (সরকার) পুনঃতদন্তের নামে তাদের জড়িয়েছেন, সেজন্য আমরা বলি রায় হবে আর সব শেষ হয়ে যাবে- এটা ভাবার কারণ নাই।
খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে কোনো নির্বাচন সম্ভব নয় মন্তব্য করে বিএনপির এ ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, তিনি অন্যায় এবং মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দি থাকবেন আর আমরা নির্বাচনে যাবো- এটা কখনো হয়?
‘এবার একটা শ্লোগান হবে, জেলের তালা ভাঙবো খালেদা জিয়াকে আনবো। জেলের তালা ভাঙবো রাজবন্দিদের আনবো। শ্লোগানটা আজকের নয়, ব্রিটিশ আমলের শ্লোগান, পাকিস্তান আমলের শ্লোগান। ’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনাকে আমরা কারাগারে ভরতে চাই না, ধ্বংস করতেও চাই না। আগামী দিনে যে সরকার আসবে এবং সরকারের আইন যা বলে তাই হবে। গণ-অভ্যুত্থানে যদি আপনার পতন হয়, আপনি এবং আপনার সহযোগী যারা ব্যাংক লুট করেছেন, শেয়ারবাজার ধ্বংস করেছেন, ৫০০ মানুষকে গুম করেছেন, আমাদের অনেক ছাত্রনেতা, যুবনেতা, এমপিকে পর্যন্ত নিখোঁজ করেছেন, ফেরত দেননি, সেসব বিষয়ে আইন যা বলবে তা-ই হবে।
‘আপনাকে (শেখ হাসিনা) একটা পরামর্শ দেই, আপনি পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার মাধ্যমে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। খালেদা জিয়াকে জেলখানা থেকে বের করে তার সঙ্গে বসেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করার লক্ষ্যে সব বিরোধী দলের সঙ্গে বসেন, রক্ষা পেয়ে যাবেন। কারণ গণতন্ত্র দেশে না থাকলে সব কিছু অনিশ্চিত হয়ে যায়, গণতন্ত্র না থাকলে কেউ নিরাপদ থাকে না। ’ বলেন শামসুজ্জামান দুদু।
কৃষক দলের সহ-সভাপতি এম এ তাহেরের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কৃষক দলের সহ-সভাপতি এ কিউ এম মোয়াজ্জেম হোসেন, নাজিম উদ্দীন মাস্টার, প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির হায়দার, কেন্দ্রীয় নেতা মাইনুল ইসলাম, আলিম হোসেন, অধ্যক্ষ সেলিম হোসেন, মিন্টু সওদগার, ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, জিয়া নাগরিক ফোরামের (জিনাফ) সভাপতি মিয়া মো. আনোয়ার, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন, শাহবাগ থানা কৃষক দলের সভাপতি এম জাহাঙ্গীর আলম, বংশাল থানা শাখার সভাপতি আব্দুর রাজি, কোতয়ালী থানা শাখার সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার হৃদয় প্রমুখ।
বক্তারা নির্বাচনের আগে ব্যাপক আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আন্দোলন করে দেশের অবস্থা খারাপ হলে তার দায়-দায়িত্ব আপনাদেরই নিতে হবে। আমাদের নেত্রী দেশের ক্ষতি চান না বলেই আমাদের কড়া আন্দোলন করতে নিষেধ করেছেন। তাই শান্তির পথে থাকতে আমরা আন্দোলন এখনও শুরু করিনি। সুতরাং আন্দোলন বা সংঘর্ষ ছাড়াই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৮
এমএএম/এইচএ/