খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এনে শনিবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডা. জাহিদ এ শঙ্কা প্রকাশ করেন।
বিএনপির এ নেতা বলেন, তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি’ জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, একজন সাংবাদিক যেমন অনেক দিন লেখার পর ‘এক্সপারটাইজ ডেভেলপ’ করে, একজন চিকিৎসকেরও প্র্যাকটিস করতে করতে হি অর শি আর্ন এক্সপার্ট (তিনি বিশেষজ্ঞ হন)। এখানে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, খালেদা জিয়ার একটা বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা প্রয়োজন, তার পছন্দমত। যাই হোক মহামান্য আদালত মনে করেছেন বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা হবে এবং কতোগুলো শর্ত দিয়েছেন। আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। তার মেডিকেল বোর্ড গঠনের সময় পছন্দের যদি কোনো চিকিৎসক থাকে সেটা বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে এমনকি প্রতিষ্ঠানে যে ডাক্তার কর্মরত নন (খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন) তাদেরও প্রয়োজনে আনা যাবে।
আদালতের পক্ষ থেকে তিনটি বিষয় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিষয় তিনটি হলো- গাইনকোলজি, ফিজিওথেরাপি এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন। এই তিনটা বিষয়ে তিনি যাদের চাইবেন বোর্ড ছাড়াও তাদের দিতে হবে। কোর্ট কিন্তু অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সুবিবেচনাপ্রসূত কাজ করেছেন।
এ সময় অভিযোগের সুরে তিনি বলেন, আজকে আমরা কী লক্ষ্য করলাম? তাকে যেভাবে আনা হল, তিনি যেখানে হুইল চেয়ারে বসেন, তাকে হাঁটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হলো। পরে ব্যর্থ হয়ে তাকে হুইল চেয়ারে করে নেওয়া হলো। হুইল চেয়ারের রোগীকে সাধারণত জিপ বা উঁচু গাড়িতে করে নিতে হয়। এই যে ট্রান্সপোর্টেশন, এটা তো কমফোর্টেবল হয়নি। তার পরবর্তীতে তাকে কেবিনে ঢোকানো হলো। এরপর যে সমস্ত ডাক্তারদের নাম শুনছি এবং মিডিয়াতে চলে আসছে, হাসপাতাল অথবা জেল কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের বক্তব্য দেওয়া। সেখানে এমন সব ডাক্তারদের নাম আছে, তাদের নিয়ে বিতর্ক আছে। যেমন কার্ডিওলজির প্রধান (অধ্যাপক সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি) বিএনপি মহাসচিবকে (কারাবন্দি থাকতে চিকিৎসা নেওয়ার সময়) ভুল সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। আপিল ডিভিশন পরে তাকে বাদ দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জন্য নতুন মেডিকেল বোর্ড গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাছাড়া সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে অসুস্থ বানানোর জন্য যে চিকিৎসকের নাম বলা হয়, সে ডাক্তার তো ভদ্রলোক। তারপর শর্তে বলা ছিল, ড্যাব বা স্বাচিপের মেম্বার হবে না। বোর্ডে তিনজন আছেন স্বাচিপের আজীবন সদস্য। তাহলে কোর্টের যে নির্দেশনা, কী এখানে বাস্তবায়ন হলো?
অবশ্য বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুন তার সংবাদ সম্মেলনে মেডিকেল বোর্ডের পাঁচ সদস্যের নাম ঘোষণা করে জানান, আদালতের নির্দেশনায় আছে ড্যাব বা স্বাচিপের কার্যনির্বাহী কমিটির কেউ মেডিকেল বোর্ডে থাকতে পারবেন না। এখানে যারা আছেন তাদের কেউ কেউ হয়তো স্বাচিপের সদস্য হতে পারেন, তবে কেউ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নন।
তার ঘোষণা অনুযায়ী- বিএসএমএমইউর মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল জলিল চৌধুরী নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডে রয়েছেন ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বদরুনেসা আহমেদ, রিউমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি, অর্থোপেডিক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নকুল কুমার দত্ত।
ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, কোর্ট বলেছেন একজন ইন্টিগ্রিটিসম্পন্ন ডাক্তার দিতে হবে। যে ডাক্তার বিএনপি মহাসচিবের চিকিৎসা সার্টিফিকেটে ইন্টিগ্রিটি ধরে রাখতে পারেন না, সেই একই ডাক্তার বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসায় কিভাবে তার ইন্টিগ্রিটি ধরে রাখবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৮
এমএএম/ইইউডি/এইচএ/
** রোববার দুপুরে শুরু হবে খালেদার চিকিৎসা