এর মধ্যে গত নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচনে না আসায় রাজশাহীর ছয় আসনের মধ্যে চারটি আসনেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এবার পট পরিবর্তন হওয়ায় অন্তত সেই অবস্থা নেই।
এক্ষেত্রে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীতে মহাজোটের জন্য কিছুটা হলেও চ্যালেঞ্জ হয়ে আসছে দলটি। এ অবস্থায় রাজশাহীর ছয়টি আসন দখলে রাখতে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সবক’টি আসনে লড়াইয়ের জন্য বর্তমান এমপিদের ওপরই ভরসা রেখেছে। অভ্যন্তরীণ নানান কারণে কেবল একটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে। আর প্রতিপক্ষ বিএনপিতে পরিবর্তন এসেছে চারটিতেই।
রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে বিএনপি এবার রাজশাহীসহ গোটা দেশের ৩০০টি আসনেই একাধিক প্রার্থী দিয়েছে। সে হিসেবে রাজশাহীর ৬টি আসনে এবার বিএনপি সবমিলিয়ে মনোনয়ন দেয় ১৬ জনকে। বিএনপির এই ১৬ জনের মধ্যে গত ২ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাইয়ের দিন বাদ পড়েন রাজশাহীর তিন হেভিওয়েটসহ সাত প্রার্থী। তবে প্রার্থিতা ফিরে পেতে এরই মধ্যে ওই তিন প্রার্থী আপিল করেছেন।
নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত এই ১৬ প্রার্থীর হলফনামায় দেখা যায়, অধিকাংশ প্রার্থীরই নামে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, জঙ্গিবাদ, নাশকতা, ঋণখেলাপিসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলার পাহাড় রয়েছে।
কারও কারও হলফনামা যেন মামলার ভারেই ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে রাজশাহীতে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীদের নামে ১০ থেকে ২৫টি মামলা পর্যন্ত রয়েছে।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর)
এই আসনে এবার বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন তিনজন। তাদের মধ্যে মামলার তথ্য গোপনে বাছাইয়ের সময় সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের মনোনয়নপত্রটি বাতিল হয়ে যায়। আসনটিতে এখন প্রার্থী রয়েছেন দুইজন। ব্যারিস্টার আমিনুল হকের হলফনামায় দেখা যায়, আয়কর ফাঁকি, জঙ্গিবাদ, নাশকতা, হত্যাচেষ্টাসহ ১৯টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে তার নামে। এছাড়াও তিনি ৫টি মামলা থেকে উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন। আর তদন্তের সময় তিনটি মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
হলফনামায় তার বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ২৫ লাখ ৭৬ হাজার ৪৪৬ টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নগদ অর্থের পরিমাণ দেখানো হয়েছে মাত্র দুই লাখ টাকা। তবে ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের অংক দুই কোটি ১০ লাখ ২৩ হাজার ৩৭৩ টাকা ৫০ পয়সা।
রাজশাহী-২ (সদর)
এই আসনে বিএনপির প্রার্থী রয়েছেন দুইজন। তাদের দু’জনেরই মনোনয়নপত্র বহাল রয়েছে। এর মধ্যে সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর নামে রয়েছে ১৪টি মামলা। এর মধ্যে ১০টি মামলা বিচারাধীন, চারটি মামলা স্থগিত এবং দু’টি মামলায় খালাস পেয়েছেন তিনি।
নির্বাচনে তার দাখিলকৃত হলফনামায় বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে তার নিজের নামে নগদ রয়েছে ৩১ লাখ ৪৩ হাজার ৩৭৫ টাকা। স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে ৫টি ফ্লাটসহ ১৫ বিঘা জমি রয়েছে মিজানুর রহমান মিনুর।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর)
এই আসন থেকে বিএনপির দু’জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও ঋণখেলাপির দায়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেছে। তবে তার নামে মামলা রয়েছে দু’টি।
এই আসনে বিএনপির আরেক প্রার্থী হলেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। তার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা বিচারাধীন। উচ্চ আদালতে স্থগিত রয়েছে তিনটি। এছাড়াও একটি মামলায় তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
হলফনামায় তার বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ৩৮ হাজার ১০৭ টাকা। মিলনের ওপর নির্ভরশীলদের আয় দেখানো হয়েছে ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭৫ টাকা।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা)
এই আসন থেকে বিএনপির দু’জন প্রার্থীকে এবার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তবে সাবেক এমপি আবদুল গফুরের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেছে বাছাইয়ের দিনই। এই আসনে বিএনপি মনোনীত আরেক প্রার্থী আবু হেনা তিনটি মামলায় অব্যাহতি পেয়েছেন। তার বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদিশিক রেমিট্যান্স রয়েছে ৮ লাখ টাকা।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর)
এই আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মোট চারজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে ঋণখেলাপি ও তথ্যে গরমিল থাকায় সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফার এবং মহাসচিবের স্বাক্ষর জাল করে মনোনয়নপত্র দাখিল করার অভিযোগে আবু বাক্কর সিদ্দিকের মনোনয়নপত্রটি বাতিল করা হয়েছে। এখন বৈধ প্রার্থী রয়েছেন আরও দুজন।
এদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য নাদিম মোস্তফার নামে বিচারাধীন মামলা রয়েছে ১৪টি, উচ্চ আদালতে স্থগিত মামলা রয়েছে তিনটি। এর বাইরেও কয়েকটি মামলা রয়েছে। বাছাইয়ের সময় তা বের হয়ে আসে। ফলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। নাদিম মোস্তফার বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে তিন লাখ ১০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নগদ টাকা রয়েছে ৪০ লাখ। তার ঋণ দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা)
এই আসনে বিএনপি থেকে তিনজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তাদের মধ্যে মামলা ও আইনগত জটিলতায় মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায় চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদের। তবে তিনি আপিল করেছেন। তার নামে বিচারধীন ও তদন্তাধীন মামলা রয়েছে ২০টি। এছাড়া সাতটি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন চাঁদ। তার বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে তার নগদ রয়েছে ১ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৮
এসএস/এইচএ/