শনিবার (২৫ মে) বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ইফতার ও আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে।
এসময় ড. কামাল হোসেন বলেন, আজকে সবাই ঐক্যর কথা বলেছেন। ঐক্য ছাড়া বিকল্প নেই। দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সংবিধানের মধ্যে আছে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিরা দেশ চালাবে।
তিনি বলেন, ইতিহাস বলে বাংলাদেশে এমন কোনো সমস্যা নেই যা জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে সমাধান করা যায়নি। স্বাধীনতার যুদ্ধেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে স্বাধীন হয়েছি। অর্থাৎ অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়, এটা আমরা বারবার প্রমাণ করেছি।
সভাপতির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সালাম ও আসিফ নজরুল বলেছেন (নির্বাচনের পর) সেই সময় হরতাল হওয়া উচিত ছিল। আমি এটার সমর্থন করি। আমি এটার প্রস্তাবক ছিলাম। আবার সালাম বলেছেন, তখন দিতে পারিনি বলে এখন দিতে পারবো না? অবশ্যই পারবো, কেনো পারবো না। অনেক ইস্যু আছে আমাদের সামনে। গতকাল (শুক্রবার-২৪ মে) মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের সঙ্গে বলেছেন, খালেদা জিয়া চলাফেরা করতে পারেন না। তাকে বিনা কারণে কারাগারে রাখা হয়েছে। তার মুক্তির দাবিতেওতো হরতাল হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বিএনপি মহাসচিবের সমালোচনা করে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সকাল ১১টায় পরিস্থিতি নিয়ে তার দেওয়া বক্তব্যের জন্য জাতির কাছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের লজ্জা পাওয়া উচিত।
তিনি বলেন, সারাদেশের সাধারণ মানুষও জানে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তিনদিন আগ থেকে দেশে নির্বাচনের নামে কী ঘটেছে। নির্বাচনের আগের রাতে (২৯ ডিসেম্বর) ভোটগ্রহণ শেষ করা হয়েছে। অথচ বৃহৎ দলের একজন মহাসচিব হিসেবে, একজন বিজ্ঞ রাজনীতিক হিসেবে তিনি পরদিন ৩০ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় বললেন, নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু আছে। তিনি না-কি নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট। তার এ ধরনের বক্তব্যের জন্য জাতির কাছে তার লজ্জা হওয়া উচিত।
আসিফ যখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্পর্কে এ কথা বলছিলেন, তখনও তিনি ইফতার মাহফিলে উপস্থিত হতে পারেননি। এ জন্য আসিফ নজরুল মঞ্চের নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি যে বিএনপি মহাসচিব সম্পর্কে এ কথা বললাম, আপনারা আমার কথাগুলো ওনাকে জানিয়ে দেবেন। সত্যি বলছি, তার (ফখরুলের) লজ্জা হওয়া উচিত।
আসিফ নজরুল বলেন, আমরা যখন রাজনীতিই বুঝতাম না, সেই ছোটবেলা থেকে আমরা দেখে আসছি দেশে একজন সাধারণ মানুষ মারা গেলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে কর্মসূচি দিতো। আজকে দেশের পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, প্রতিদিন দেশে শিশু-কিশোরী, নারী ধর্ষণ ও মানুষ খুন হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করার মতো কোনো সাহস রাজনৈতিক দলগুলোর নেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা আরও দেখতাম দেশে কোনো একটি আসনে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলেও (যেমন মাগুরার উপ-নির্বাচন) ওই সময় পুরো সরকারের পদত্যাগ দাবি করা হতো। এখন তা কল্পনা করাও সম্ভব না।
ঢাবির এই আইনের শিক্ষক আরও বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। নির্বাচনের নামে যা হয়েছে, তা নিছকই প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়।
ইফতার ও আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাবির অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বীর প্রতীক, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, বিকল্প ধারার সভাপতি নুরুল আমীন বেপারী প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম পথিক, গণদলের সভাপতি গোলাম মাওলা চৌধুরী, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৯ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৯
এমএইচ/টিএ