শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এ দাবি করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) জাতীয় সংসদে পেশ করা বাজেটের ওপর প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা একটি শ্রেণীর কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছে। অনির্বাচিত সরকারের নৈতিক অধিকার নেই বাজেট দেওয়ার। সরকার জনগণকে বাইরে রেখে যেভাবে নির্বাচন করেছে, একইভাবে বাজেটও দিচ্ছে। যেভাবে জনগণ এই নির্বাচন গ্রহণ করেনি, তেমনি বাজেটও তারা গ্রহণ করবে না।
বিএনপি এই বাজেট প্রত্যাখ্যা করছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল পুনরায় বলেন, জনগণ বাজেট গ্রহণ করেনি।
বাজেটের বিরুদ্ধে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবাদ, মিছিল-মিটিং হয়নি, ভবিষ্যতে হবে কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সেই কালচার থেকে বের হয়ে এসেছি।
ফখরুল তার লিখিত বক্তৃতায় বলেন, বাজেটের পরিকল্পনা, বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া, খাতভিত্তিক বরাদ্দ ও সমস্যা নির্ধারণ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হচ্ছে। অনুৎপাদনশীল খাতে খরচ অত্যধিক। প্রতিবছরই বাজেটে বিপুল পরিমাণ ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ঘাটতি মেটাতে ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। বাজেট বাস্তবায়নের হারেও দেখা যায়নিম্নমুখিতা। বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। কোথাও যেন আস্থার অভাব আছে। প্রকৃতপক্ষে সরকারের ওপর কেউ আস্থা রাখতে পারছে না। কারণ সরকারই যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় এবং এর ফলে জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহিতাও নেই।
‘অনির্বাচিত সরকারের’ বাজেট দেওয়ার কোনো নৈতিক অধিকার নেই দাবি করে তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একমাত্র অনির্বাচিত সরকার রয়েছে বাংলাদেশে। এই সরকারের বাজেট দেওয়ার নৈতিক অধিকার নেই। কারণ তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধও নয়।
দেশের অর্থনীতি কিছু সংখ্যক মানুষের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যাদের কাছে অর্থনীতি জিম্মি, তারাই বাজেট প্রণয়ন করছে। তারা অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। আবার তারাই সরকার পরিচালনা করছে। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ঋণনির্ভর বাজেট দিতে হচ্ছে। দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে প্রকল্প ব্যয় বহুগুণ বাড়িয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। করের মাধ্যমে, ভ্যাটের মাধ্যমে বা অন্যান্য মাধ্যমে এই টাকা সরকার সাধারণ মানুষের পকেট কেটে নেবে।
‘অনির্বাচিত সরকার’ একটি ‘অনির্বাচিত সংসদে’ এই বাজেট দিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, সরকার দেশকে ঋণনির্ভর অর্থনীতির বৃত্তে আবদ্ধ করে রেখেছে। এই ঋণ শোধ দিতে দেশের মানুষের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে। নাগরিকদের ভুগতে হবে চরমভাবে। রফতানির চেয়ে আমদানি বেশি হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বেশি বেকার বাংলাদেশে। প্রবৃদ্ধির যে কথা বলা হচ্ছে, তার সত্যতা নিয়ে মারাত্মক প্রশ্ন আছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার উচ্চাভিলাষী বাজেট ঘোষণা করেছেন। বাজেটের আকার বড় করার চমক সৃষ্টির প্রতিযোগিতায় নেমেছেন যেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু বাজেট বৃদ্ধির এ প্রগলভতা বছরশেষে চুপসে যেতে দেখা যায়। বাজেটের আকার কতো বড় এ নিয়ে আর জনমনে কোনো উচ্ছ্বাস নেই। কেননা প্রত্যেক বছরের শেষ দিকে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ যেভাবে কাট-ছাঁট করা হয়, তাতে বিরাটাকার বাজেটের অন্তসার শূন্যতাই প্রকাশ পায়।
এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বাজেট থেকে জনগণ কী পেয়েছে জানতে চাইলে এক কথা বলবো, জনগণ করের বোঝা পেয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনও কোনো ব্যবসায়ী অর্থমন্ত্রী হননি। এবার আমরা তাই দেখলাম। সুতরাং যারা ব্যবসা করবে তারা তাদের মতো করেই বাজেট প্রণয়ন করবে। এতে সাধারণ জনগণের কোনো উপকার হবে না। তাদের করের বোঝা বাড়তেই থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৯
এমএইচ/এইচএ/