নির্বাচনে ব্যাপক ভরাডুবির পর ‘রাতে ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ করে প্রথমে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে দলটি। এরপর বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন না জানালেও পরে ঠিকই তারা সংসদে যান।
এ অবস্থায় বিএনপির ভবিষ্যৎ কী? সে প্রশ্ন দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তৃণমূলেও। শীর্ষ নেতৃত্ব সরাসরি কিছু না বললেও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ ঝেড়ে চলেছেন নেতাদের ব্যর্থতার কথা।
একাধিকবার সরকার চালানো বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা হলে সবার মুখেই হতাশা লক্ষ্য করা যায়। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলেই ফেলেন, কোনো কূল-কিনারা কেউ দেখাতে পারছেন না। যদিও সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ বলে ওঠেন, বিএনপি শেষ হয়ে যায়নি। বিএনপি আবারও ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠবে
ভরাডুবির নির্বাচন শেষে আন্দোলন কর্মসূচি ছাড়া মাসের পর মাস পেরোতে থাকায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলছেন, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। লক্ষাধিক মামলায় ২৬ লাখ আসামি আর শত শত নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হলেও একজন কর্মীও দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেননি। দলের নেতাকর্মীরা এখনো ঐক্যবদ্ধ থেকে লড়াই করে যাচ্ছেন। লড়াই করেই নেত্রীকে মুক্ত করা হবে।
মহাসচিবের এমন বক্তব্যের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা বলেন, তার কথা যদি সঠিক হয়, তাহলে রাজপথে কেন নামতে পারছে না বিএনপি? নেত্রী কারাগারে ১৮ মাস। একটা হরতাল দিতে পারিনি। এক হাজার লোকের একটা মিছিলও রাজধানীতে হয়নি। এমনকি ২০১৪-১৫ সময়ে সারাদেশে যেভাবে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তাও হচ্ছে না। হাইকমান্ড কোনো কর্মসূচিও দিচ্ছে না। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর চারটি ঈদ পার হলো। কিন্তু নেত্রীকে মুক্ত করার জন্য না আদালতে না রাজপথে কোথাও সফলতা দেখাতে পারছে না বিএনপি। মহাসচিবের কথা বিশ্বাস করবো কীভাবে?
এসব বিষয়ে বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, নেত্রীর জন্য কে কর্মসূচি ঘোষণা করবে? যারা কর্মসূচি দেবে তারা আদৌ নেত্রীর মুক্তি চায় কি-না সেটাওতো দেখতে হবে।
বিএনপি কোন পথে? এমন প্রশ্নের জবাবে দলের ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের দমন-পীড়ন, নির্যাতনে নেতাকর্মীরা দিশেহারা। এ অবস্থায় ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সংগঠনকে পুনর্গঠনের কাজ চলছে। যেসব জেলা কমিটি দুর্বল ছিল সেগুলো নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।
আবদুস সালাম বলেন, এটা সত্য যে, আজকে যদি আওয়ামী লীগের নেত্রী কারাগারে থাকতেন, তাহলে দল সারাদেশ তছনছ করে দিতো। অপরদিকে আমরা কিন্তু একটা টায়ার জ্বালিয়েও প্রতিবাদ করতে পারিনি। এই ব্যর্থতার দায় কেউ এড়াতে পারবে না। এ ব্যর্থতা দলের সিনিয়র-জুনিয়র সব পর্যায়ের নেতাকর্মীর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের একজন কর্মী বাংলানিউজকে বলেন, মূলত সিনিয়র নেতাদের ব্যর্থতার কারণেই আমাদের নেত্রী (খালেদা জিয়া) দেড় বছর ধরে কারাগারে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে দলের সিনিয়র নেতারা সরকারের সঙ্গে লিঁয়াজো করে তারেক রহমানকে ভুল বুঝিয়ে কর্মসূচি থেকে বিরত রাখছেন।
তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো নেতা নেই যিনি কারাগারে যাওয়ার আগে বা কারাগার থেকে তার নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেবেন যে, আমার মুক্তির জন্য তোমরা আন্দোলন করো। অথচ আমাদের নেতারা নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলছেন, নেত্রী শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে বলেছেন। এ ধরনের বক্তব্য নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
এ বিষয়ে আলাপ করলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, দল গোছানোর কাজ চলছে। সময় হলেই নেতারা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা দেবেন। ইতোমধ্যে নেত্রীর মুক্তির দাবিতে ঢাকার বাইরে কয়েকটি সফল সমাবেশ হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এরপরেই অন্যান্য বিভাগীয় শহরে কর্মসূচি দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৯
এমএইচ/এএটি/এইচএ/