ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

ছাত্রদলের কাউন্সিল স্থগিতের পেছনে কে সেই আমান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯
ছাত্রদলের কাউন্সিল স্থগিতের পেছনে কে সেই আমান ছাত্রদলের লোগো

ঢাকা: দীর্ঘ ২৭ বছর পর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিএনপির অন্যতম সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গেছে। আদালতে সদ্য বিলুপ্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমানের মামলার পর প্রক্রিয়াটি মুখ থুবড়ে পড়ে।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সংগঠনটির কাউন্সিল এবং সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর বিকেলে আদালতের নির্দেশে এ কাউন্সিল ও নির্বাচন স্থগিত করতে বাধ্য হয় বিএনপি।

 

ছাত্রদলের এ নির্বাচন স্থগিতে আদালতের নির্দেশকে সরকারের গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছে বিএনপি। দলের নেতাদের বক্তব্য, ছাত্রদলের কাউন্সিল ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে সংগঠন গুছিয়ে নিলে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে সরকার এ ষড়যন্ত্র করেছে।  
আদালতের নির্দেশে ছাত্রদলের কাউন্সিল ও নির্বাচন স্থগিতের পর থেকে আলোচনা চলছে আদালতে মামলাকারী কে সেই আমান উল্লাহ আমান। যার আর্জিতে বৃহস্পতিবার মাত্র একদিন আগে কাউন্সিলের ওপর সাময়িক স্থগিতাদেশ দেন ঢাকার চতুর্থ সহকারী জজ আদালত। এ আদেশের পর থেকে ছাত্রদলসহ বিএনপি নেতাদের মধ্যে আমানই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন।  

সন্দেহ করা হচ্ছে, আমান মামলা করলেও এ মামলার পেছনে ছাত্রদলের সাবেক কয়েক নেতা ও বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কোনো নেতারও ইন্ধন থাকতে পারে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিলের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা ‘সরকারের মাস্টারপ্ল্যানে’র অংশ বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আমান উল্লাহর করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রদলের কাউন্সিলের ওপর স্থগিতাদেশ সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক। কারণ ছাত্রদলের সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আমান উল্লাহ আগামী ১৪ সেপ্টেম্বরের কাউন্সিলে প্রতিযোগী ছিলেন না এবং প্রতিযোগিতার জন্য আবেদন করেননি কিংবা তিনি কাউন্সিলরও নন।  

এদিকে, কাউন্সিল ও নির্বাচন স্থগিতের পর থেকেই বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে কাদা ছোড়াছুড়ি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছাত্রদলের এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের বিরুদ্ধে এসব করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা এ বিষয়ে বলেন, ছাত্রদলের পর যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি হবে। দলের হাইকমান্ড প্রতিটি সংগঠনের কমিটিই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। ওইসব সংগঠন ও কমিটিতে পদপ্রত্যাশীদের অনুসারীদের মধ্যেই এই কাদা ছোড়াছুড়ি বেশি হচ্ছে।

ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন আমানউল্লাহ আমান। তার বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায়। লেখাপড়া করেছেন ঢাকা আলিয়া মাদরাসায়।  

২০০৯ সালে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও আমিরুল ইসলাম আলীম কমিটি ঘোষণার পর ওই কমিটির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে কমিটিতে স্থান না পাওয়া ছাত্রদলের একটি গ্রুপ। নরসিংদী অঞ্চলের এক নেতা মূলত ওই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন। তখন এই আমান সেই গ্রুপে যোগ দিয়ে বিদ্রোহে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। এরপর ওই নেতার গ্রুপেই ছিলেন তিনি। পরে ২০১২ সালে আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল-হাবিবুর রশীদ হাবিবের নেতৃত্বে কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। ওই কমিটিতে আমান পদ না পেয়ে বরিশাল অঞ্চলের এক নেতার গ্রুপে যোগ দেয়। এরপর কিছুদিন সে ওই গ্রুপেই সক্রিয় থাকে।  

২০১৪ সালের রাজিব আহসান ও আকরামুল হাসান মিন্টুর নেতৃত্বে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। তখন আমান আবার নরসিংদী গ্রুপে যোগ দেয়। এবার সে সফলও হয়। রাজিব-আকরাম কমিটিতে তাকে সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক করা হয়।

এছাড়াও আমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের প্রভাবশালী এক নেতার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করে চলতেন বলে ছাত্রদল সূত্রে জানা যাচ্ছে। তবে, আমানের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সফল হওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।  

ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জানান, মামলার আগ থেকেই তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এখনো তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।

ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির একজন যুগ্ম সম্পাদক বলেন, আমান ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদরাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে পড়াশোনা করেছেন বলে পরিচয় দিতেন। বিভিন্ন সময়ে মাজার কেন্দ্রীক ওরসে যাতায়াত ছিল তার। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গ্রুপে তাকে দেখা গেলেও কার্যত ছাত্রদলের কোনো গ্রুপেই সে স্থির থাকেনি। বারবার গ্রুপের সঙ্গেও ‘পল্টি’ মেরেছে।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এই আমানকে আমি চিনি না। তাকে ‍আমি কোনোদিন দেখিও নাই। সুতরাং এর বিষয়ে আমার কিছু বলার নাই।  

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‍মামলাটাতো আর সরকার করে নাই। মামলা করছে আমাদের দলের কর্মী। এখন আমরা যদি আমার নিজেদের ঘরে আগুন দেই তাহলে সরকারতো বাতাস দেবেই।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯
এমএইচ/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।