ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

‘কাণ্ডারীবিহীন’ বিএনপির ভরসা স্কাইপে-হোয়াটসঅ্যাপ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৯
‘কাণ্ডারীবিহীন’ বিএনপির ভরসা স্কাইপে-হোয়াটসঅ্যাপ

ঢাকা: দীর্ঘদিন ধরেই ‘কাণ্ডারীবিহীন’ অবস্থায় চলছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ২০ দিন ধরে বিদেশে। এ অবস্থায় স্কাইপে আর হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে লন্ডন থেকে দল চালাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি মামলায় পাঁচবছরের দণ্ড নিয়ে বর্তমানে কারাগারে বন্দি খালেদা জিয়া।

তিনি হয়তো আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন তার সাজা হয়ে যেতে পারে। তাই খালেদা জিয়া সঙ্গে নিয়েছিলেন গৃহকর্মী ফাতেমা, প্রয়োজনীয় কাপড় ও জিনিসপত্র।  

নাম প্রকাশে দলের একাধিক সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া আদালতে যাওয়ার সময় সাজার বিষয়টি আঁচ করতে পারলেও ছেলে তারেক রহমানকে ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে যাননি। সাজা হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রাতে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান, তারেক রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

জানা যায়, ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। এরপর ১৯৮২ সালে ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন খালেদা জিয়া। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। বিএনপির তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়া পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  

১৯৮৪ সালের ১০ মে চেয়ারপারসন নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জেলে যাওয়ার আগে কখনই এই পদে কাউকে ভারপ্রাপ্ত করেননি খালেদা জিয়া।

দলীয় সূত্র বলছে, ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে দলে যোগ দেবার পর থেকে মোট চারবার গ্রেফতার হন খালেদা জিয়া। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর গ্রেফতার হন।  

সর্বশেষ তিনি ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বরও দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হন। পরে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তিলাভ করেন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেপ্তার হবার পর দীর্ঘ একবছর সাতদিন কারাগারে অবস্থানকালেও বিএনপি চলেছে ‘চেয়ারপারসনবিহীন’ অবস্থায়।

এদিকে বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ২০১১ সালের ১৬ মার্চ সিঙ্গাপুরে মারা যান। এর চারদিন পর ২০ মার্চ দলীয় গঠনতন্ত্রে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের কোনো পদ না থাকলেও তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া।

২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবের পদ পান মির্জা ফখরুল। সেই থেকে এখন পর্যন্ত যতবার কারাগার অথবা বিদেশে গেছেন কখনও কাউকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেননি তিনি।

এবারও একইভাবে গত ৪ অক্টোবর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তবে তিনি সিঙ্গাপুর নাকি অন্য কোনো দেশে গেছেন তাও আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমে জানায়নি বিএনপি।  

তবে তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকে জানা যায়, মির্জা ফখরুল চিকিৎসার জন্য প্রথমে সিঙ্গাপুর যান। চিকিৎসা শেষে মেয়ের কাছে অস্ট্রেলিয়া গেছেন। সেখান থেকে লন্ডন হয়ে দেশে ফিরবেন। তবে কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন সেটাও দলীয়ভাবে কাউকে জানানো হয়নি।  

তার ব্যক্তিগত সহকারী ইউনুস আলী বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে বাংলানিউজকে বলেন, ২/১ দিনের মধ্যে স্যার দেশে ফিরবেন।  
চেয়ারপারসন কারাগারে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে, মহাসচিব দেশের বাইরে। এ অবস্থায় দল কিভাবে চলছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নেতা বলেন, স্কাইপে আর হোয়াটসঅ্যাপে দল চলছে। মহাসচিব অনুপস্থিত তাতে কিছু আসে যায় না। সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন করেন লন্ডনের নির্দেশনায়। আর সেই নির্দেশনা আসে হয় হোয়াটসঅ্যাপে অথবা স্কাইপের মাধ্যমে।  

তারা বলেন, নয়াপল্টন ও গুলশান কার্যালয়ের ভেতরে স্কাইপে মিটিংয়ের জন্য লাগানো হয়েছে বড় পর্দা। হলরুমে নেতাকর্মীরা বসে স্কাইপের মাধ্যমে সরাসরি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। অপরদিকে লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাদের সরাসরি নির্দেশনাও দেন।

যোগাযোগ করা হলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির সব ক্ষমতার অধিকারী দলের চেয়ারপারসন। তিনি কারাগারে আছেন। তার অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দল চালাচ্ছেন। বাকি আমরা সবাই কেরানী। আমরা কে কোথায় থাকি না থাকি তাতে দলের কিছু আসে যায় না।

‘মহাসচিব কবে-কোথায় গেছেন সেটা তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে গেছেন মহাসচিব। তিনি কবে দেশে আসবেন সেটা আমি জানি না।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের বাইরে, দল কিভাবে চলে? এমন প্রশ্নের উত্তরে বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যেখানেই থাকেন তার দল চালাতে কোনো সমস্যা হয় না। তিনি প্রতিদিন ৮/১০ ঘণ্টা স্কাইপে ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দলে এ ধরনের নিয়ম নেই যে মহাসচিব কোথাও গেলে তার দায়িত্ব আর একজনকে দিয়ে যাবেন। তবে এটা নিয়ম আছে যে মহাসচিব বাইরে গেলে বা অনুপস্থিত থাকলে সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব যিনি থাকেন তিনিই দায়িত্ব পালন করেন।

‘আর চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ’ যোগ করেন তিনি।  

১৯৮৪ সালে খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হওয়ার পর এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করা পর্যন্ত তার অনুপস্থিতিতে তিনি (খালেদা জিয়া) কাউকে দায়িত্ব দেননি বলেও জানান ড. মোশাররফ।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদটি সৃষ্টি করা হয়, ওই পদের দায়িত্ব পান তারেক রহমান।  
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৯
এমএইচ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।