ইতোমধ্যে এই তিন দলেই নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ভেঙে গেছে এলডিপি ও জাগপা।
সম্প্রতি কল্যাণ পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও জাগপার সম্মেলনে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনুপস্থিতিই প্রমাণ করছে কর্নেল (অব.) অলির নেতৃত্বাধীন জাতীয় মুক্তিমঞ্চ ও শরিকদের কোনোভাবেই ছাড় দিতে রাজি নয় দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দলটি।
গত ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। জানা যায়, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম নিজেই মির্জা ফখরুলের বাসায় গিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং বিএনপি মহাসচিবও এতে সম্মতি দিয়েছিলেন। কিন্তু, অনুষ্ঠানের দিন তিনি সেখানে হাজির হননি। বিষয়টি ৬ ডিসেম্বর জাগপার কাউন্সিলে প্রকাশ্যে স্বীকার করেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান।
সূত্র জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই কল্যাণ পার্টির অনুষ্ঠানে হাজির হননি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে বিএনপি মহাসচিবের পক্ষে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন। অন্যদিকে কল্যাণ পার্টির ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
৬ ডিসেম্বর ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় মুক্তিমঞ্চের আরেক শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) জাতীয় সম্মেলনেও একই অবস্থা দেখা যায়। বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সম্মেলনে থাকার কথা থাকলেও তারা উপস্থিত হননি। উপস্থিত হয়েছিলেন জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম ও এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল।
এদিকে খন্দকার আবিদুর রহমান ও খন্দকার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে জাগপার একাংশ নিজেদের আলাদা ও মূল জাগপা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়-২ আসনটি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধানকে না দেওয়ায় তিনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপরে নাখোশ। ফলে আবিদুর রহমান ও খন্দকার লুৎফরের জাগপা’ই ২০ দলীয় জোটের স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, জাগপার কাউন্সিলে আমাকে দাওয়াত দিয়েছিল। কিন্তু আমি ওইদিন ঢাকার বাইরে থাকায় যেতে পারিনি।
৭ ডিসেম্বর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) এক আলোচনা সভায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। জামায়াত নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে না শর্তে তারা এলডিপির আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেও আলোচনা সভায় উপস্থিত হননি। এমনকি এলডিপির অন্যতম মিত্র কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমও সেদিনের সভায় যাননি।
এরই মধ্যে দুই ভাগ হয়েছে এলডিপি। সাবেক হুইপ আবদুল করিম আব্বাসী ও শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে নতুন এলডিপি গঠিত হয়েছে। চলতি বছরই তাদের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র জানায়, বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে কল্যাণ পার্টিকে মুক্তিমঞ্চ ও অলি আহমদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই ইঙ্গিত পেয়েছেন ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আরেক শরিক অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদাও।
২০ দলীয় জোটের এক শীর্ষ নেতা নামপ্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এলডিপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ ও কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বিএনপি এবং ২০ দল ভাঙার চক্রান্ত করছেন। তারা হয়তো জোট ছেড়ে দিচ্ছেন। জোটের মধ্যে জোট গঠন করে তারা এক জোটের কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন, আর অন্য জোটের কর্মসূচিতে তৃতীয় বা চতুর্থ সারির নেতাদের পাঠাচ্ছেন। বিশেষ করে অলি আহমদ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বা স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্ব মানতে পারছেন না। এই ক্ষোভ থেকে তিনি এসব করছেন বলে মনে করছেন অনেকে।
সূত্র জানায়, এলডিপি ও জাতীয় মুক্তিমঞ্চের প্রধান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ওমরা পালনে বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছেন। তিনি ফিরলেই বোঝা যাবে মুক্তিমঞ্চের শেষ পরিণতি কী।
এলডিপির (কর্নেল অলি অংশের) মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিমঞ্চ গঠনের কারণে বিএনপি এলডিপির ওপর বিরাগভাজন হয়েছে বা হবে বলে মনে করি না। বরং এলডিপি ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে আগেও ছিল, এখনো রয়েছে। মুক্তিমঞ্চ গঠন করে আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়েছি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতির বিরুদ্ধে কথা বলেছি। বিএনপি ও এলডিপির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একই।
নবগঠিত এলডিপির সদস্য সচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, জোটের মধ্যে থেকে নতুন জোট করাটা ভালো চোখে দেখছি না আমিও। তাই আমরা অলি আহমদকে বাদ দিয়ে এলডিপির নতুন কমিটি করেছি। আমি মনে করি, খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের জন্য আলাদা জোট করার দরকার নেই। ২০ দল রয়েছে। সুতরাং বিষয়টি বিএনপি ভালো চোখে দেখবে না এটাই স্বাভাবিক। ২০ দলীয় জোটে কর্নেল অলির অবস্থান কী হবে সে সিদ্ধান্ত বিএনপি নেবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৯
এমএইচ/একে