কিন্তু, পরবর্তীতে বিএনপি ও গণফোরাম সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে গিয়ে সংসদে যোগ দেয়। কিছুদিন পর জাতীয় সংসদের বেশ কয়েকটি উপ-নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও অংশ নেয় বিএনপি।
এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ- বিএনপির নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় ভোটের মাঠ গরম হয়ে উঠেছে। কিন্তু ২০ দলীয় জোটের সবচেয়ে বড় শরিক জামায়াতে ইসলামীকে এবার বিএনপির পাশে দেখা যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একদাশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে এখনও অটল আছে জামায়াতে ইসলামী। অপরদিকে পূর্বের সিদ্ধান্ত থেকে সরে যাওয়ায় জামায়াত বিএনপির ওপরে নাখোশ হলেও প্রকাশ্যে তা বলতে রাজি নয়। কৌশলগত বক্তব্য দিয়ে তারা এ ব্যাপারটিকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে।
সিটি নির্বাচন নিয়ে ২০ দলীয় জোটের হওয়া বৈঠকে জামায়াতের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। সার্বিক প্রেক্ষাপটে ২০ দলের বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে জোটের সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, ২০ দল অটুট আছে। শিগগিরই জোর কদমে সিটি নির্বাচনের মাঠে তাদের দেখা যাবে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে বিএনপির সংসদে যোগ দেওয়া ও বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৮’র ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে আমরা যে দৃশ্য দেখলাম, তারপর ২০ দলীয় জোট সে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। আমরা বললাম যে, এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাব না। আমরা সবাই মিডিয়াতেও বলেছিলাম, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে আমরা আর কোনো নির্বাচনে যাব না। এটা বিএনপিও বলেছিল, আমরাও বলেছিলাম। আমাদের দলের কেন্দ্রীয় যে পরিষদ আছে সেখানে বারবার বসে আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি, যেরকম অবস্থায় আমরা ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, বাংলাদেশ সেই অবস্থানেই আছে। তার কোনো পরিবর্তন হয়নি। নির্বাচন কমিশন, সরকারের দলীয়করণ, আগের দিন ভোট বাকশো ভর্তি করা, ভোটারদের ভোট দিতে যেতে না দেওয়া, এজেন্ট বের করে দেওয়া, রাতেই ভোট হয়ে যাওয়া, সব পরিস্থিতি আগের মতোই বহাল। ফলে আমাদের নির্বাহী পরিষদের সিদ্ধান্ত হলো, যেহেতু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি, আমাদের সিদ্ধান্তেরও কোনো পরিবর্তন হবে না।
বিএনপির ব্যাপারে জামায়াতের মনোভাব জানতে চাইলে এ নেতা বলেন, বিএনপির বক্তব্য বিএনপি দেবে। আমাদের বক্তব্য আমি দিলাম। কেউ কোনো কথা বলে যদি সেটা রক্ষা করতে না পারে সে দায়িত্ব তাদের।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে কোনো কর্মকাণ্ডে যোগ দেবে কীনা জানতে চাইলে গোলাম পরওয়ার বলেন, আমি আমার জবাব দিয়ে দিয়েছি। আর কোনো নতুন ভাষা আমার কাছে নেই। দেশের কোনা পরিবর্তন হয়নি বলে আমাদের সিদ্ধান্তেরও কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটাই আমাদের জবাব।
তারপরও সাধারণ মানুষের কাছে জামায়াত তাদের অবস্থান স্পষ্ট করবে কিনা জানতে চাইলে নেতা বলেন, আমি যে বক্তব্য দিয়েছি সেটা লিখলেই জনগণ বুঝে নেবে। এরচেয়ে ক্লিয়ার করার দরকার নেই। জনগণ খুব ভালো বোঝে।
এদিকে জামায়াতের এই বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমার সঙ্গে কারও কথা হয়নি। আর জামায়াত আমাদের সঙ্গে ভোটের মাঠে নামবে কীনা তাও জানি না। তবে প্রার্থীরাতো সবার কাছেই ভোট চাইতে পারেন।
বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে ২০ দলীয় জোটের আরেক শরীক বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনের বিষয়ে প্রার্থী মনোনয়নের সময় একদিন জোটের বৈঠক ডেকে সবাইকে জানানো হয়েছে। তখন জোটের সবাই বিএনপির প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছে। ওই বৈঠকে জামায়াতের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল না। তারা বিএনপির প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছে কীনা তাও জানি না।
ইরান আরও বলেন, জোটগতভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় নামার ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রচারণায় প্রথম দিন থেকেই অংশ নিচ্ছি। কিন্তু জোটের অন্য কোনো নেতাকে আমি মাঠে দেখিনি। আমাদের দলের মহাসচিব লায়ন ফারুক রহমান দক্ষিণের প্রার্থীর সঙ্গে আর আমি উত্তরের প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২০
এমএইচ/এইচজে