শনিবার (৭ মার্চ) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকের পর প্রেসব্রিফিংয়ে এই অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, করোনা ভাইরাসের অসুখটি সারা পৃথিবীতেই মানুষের শুধু ক্ষতি করছে তা নয়, এটা অর্থনীতির ওপর প্রচণ্ড রকমের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
'আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে, এটা সরকারের দায়িত্বহীনতা। বিশ্বজুড়ে এরকম একটা ব্যাপক বিপর্যয় চলছে, সেখানে এ বিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত ছিল সরকারের অগ্রাধিকার কাজ, প্রথম কাজ। এটা তারা করছে না। এ ব্যাপারে সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। '
এ সূত্রে ফখরুল আরও বলেন, আমরা বলছি যে, প্রত্যেকটি পোর্টে স্ক্যানিং মেশিন থাকা দরকার, লোকবল থাকা উচিত। ডায়াগনসিস করার জন্য যে কিটস, তার অপ্রতুলতা আছে, পাওয়া যাচ্ছে না। মাস্কেরও যথেষ্ট অপ্রতুলতা রয়েছে। একই সঙ্গে ইমার্জেন্সি হসপিটাল ওপেন করে দেওয়া উচিত ছিল, যেখানে আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য নেওয়া হবে, সেই ব্যবস্থা থাকবে। এখন পর্যন্ত এই ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা আমরা জানতে পারিনি।
এ বিষয়ে সদ্য ওমরাহ পালন শেষে দুবাই হয়ে দেশে ফেরা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সাহেব কয়েকদিন আগে দুবাই থেকে এসেছেন, তিনি বলেছেন যে, এয়ারপোর্টে একটা ফরম দেওয়া হচ্ছে, তাতে বলা আছে যে, কোন কোন দেশ আপনি ভ্রমণ করছেন। কিন্তু ফরমটা কেউ কালেক্টও করছে না। যখন যাত্রী ইমিগ্রেশনে আসছেন, তার কাছে ওই বিষয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে না; তার কোনো পরীক্ষাও করা হচ্ছে না। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ব্যাপার।
ফখরুল বলেন, আমরা যেটা লক্ষ্য করেছি যে, করোনা ভাইরাস বিষয়ে সারা পৃথিবী যখন উদ্বিগ্ন ও বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। প্রত্যেকটা দেশের সরকার বিভিন্ন রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। যাতে ভাইরাস না আসতে পারে, আক্রমণ না করতে পারে, তার জন্য যেসব ব্যবস্থা নিচ্ছে, যেমন- পোর্টগুলো, ল্যান্ড পোর্ট, এয়ারপোর্ট, সি পোর্ট বলুন সেগুলোতে তারা প্রয়োজনীয় স্ক্যানিং ব্যবস্থা নিয়েছে ইতোমধ্যে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে এটা এতো বেশি ইনএফিসিয়েন্ট– একমাত্র ঢাকা এয়ারপোর্ট ছাড়া আর কোথাও এই স্ক্রিনিং মেশিন নাই সম্ভবত।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আজকের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, করোনা ভাইরাস নিয়ে জনগণকে সচেতন করার জন্যে আমরা লিফলেট ছাড়বো, জনগণের কাছে পৌঁছাবো। ড্যাবসহ অঙ্গসংগঠনগুলো এ বিষয়ে কাজ করবে। বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। যদিও সরকার দাবি করছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি পাওয়া যায়নি। আজকেই আইইডিসিআর-এর পরিচালক (মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা) বলেছেন যে, যে কেনো মুহূর্তেই বাংলাদেশ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ১১ মার্চ বিক্ষোভ
এদিন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা আবার দেখা করেছেন। তারা বেরিয়ে এসে যেটা বলেছেন তা আরো উদ্বেগজনক। তার (খালেদা জিয়া) এতোটুকু শারীরিক উন্নতি হয়নি, আরো অবনতির দিকে যাচ্ছে। তারা যে কথাটি বলেছেন, এটা আরো উদ্বেগজনক যে, তাকে আমরা ফিরে পাবো কিনা, এটা আমরা নিশ্চিত নই। এটা এতো বেশি উদ্বেগের বিষয় যে, গোটা জাতিকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
'আমরা বার বার বলেছি, চেষ্টা করছি, আইনি ব্যবস্থা নিয়েছি, রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়েছি, কিন্তু এ ব্যাপারে এতটুকু কর্ণপাত করা হচ্ছে না। আমরা আবারও বলছি যে, অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এই দাবিতে আগামী বুধবার, ১১ মার্চ সারা দেশে মহানগর ও জেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বৈঠক করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠকে মহাসচিবসহ খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩০৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২০
এমএইচ/এইচজে