ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিএনপি

করোনা মোকাবিলায় সরকার ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করেছে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৫ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২০
করোনা মোকাবিলায় সরকার ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করেছে

ঢাকা: করোনা মোকাবিলায় সরকার ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে ফেলেছে দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সারাদেশে শুরু হয়ে গেছে লাশের মিছিল। এখন হাসপাতালগুলোতে রোগীদের স্থান হচ্ছে না। পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে কোনো না কোনো হাসপাতালে অক্সিজেনের জন্য হাহাকারের খবর। অসুস্থ অবস্থায় এসে ভর্তি হতে না পেরে অ্যাম্বুলেন্সে ঘুরে ঘুরেই জীবন দিচ্ছেন অনেকে। মর্গে লাশের হিসাবের সংখ্যার সঙ্গে মিলছে না সরকারি হিসাব। কবরস্থানে সারিবদ্ধভাবে খোঁড়া হচ্ছে গণকবর। সত্যিই এক ভয়ংকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে চারপাশে।

রোববার (১৪ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, গত কয়েকদিন ধরে কাছের কয়েকজন মুমূর্ষু স্বজনের জন্য প্রয়োজন পড়ে আইসিইউর বেড।

পরিচিত-অপরিচিত সমস্ত হাসপাতালগুলোতে অনেক চেষ্টা তদবির করেও মেলাতে পারিনি একটি আইসিইউ বেড। অনেক চেষ্টা তদবির করে একটি হাসপাতালে ভর্তি করানোর সুযোগ হয়, আইসিইউ খালি হওয়া মাত্রই আমার একজন রোগীকে তারা উঠাবে এই শর্তে। এখানে কি বা করার আছে। যেখানে প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের আশেপাশে গেলেই এখন শোনা যায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) জন্য স্বজনদের হাহাকার।

তিনি বলেন, খোদ চিকিৎসকরাই পাচ্ছেন না আইসিইউ বেড। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন নিজের কর্মস্থলেই আইসিইউ পাননি। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হলে গত ১৫ এপ্রিল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে তিনি মারা যান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন একই কারণে মারা গেছেন। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা) হেড অব অ্যাকাউন্ট মনিরুজ্জামান।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা আরও আছে। কিডনির জটিলতায় অসুস্থ অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচ সরকারকে নিয়ে একের পর এক (মোট আটটি) হাসপাতাল ঘুরে মৃত্যুর কাছে পরাজয় বরণ করতে হলো। অপরদিকে, পুরো চট্টগ্রাম বিভাগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের যিনি হর্তাকর্তা, স্বয়ং তিনি এবং তার পরিবারই পেলেন না যথাযথ চিকিৎসা! করোনা আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসা করাতে না পেরে চট্টগ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির।

বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতাল ঘুরেও সময় মতো চিকিৎসা না পেয়ে গাড়িতেই মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম ছগীরকে। বিভিন্ন হাসপাতালে ছোটাছুটি করেও চিকিৎসা না পেয়ে অবশেষে মারা গেছেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার আলমদী গ্রামের মেধাবী ছাত্রী ইসরাত জাহান উষ্ণ। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে শুক্রবার বিকেলে তিনি বিনা চিকিৎসায় মারা যান।

তিনি বলেন, হাসপাতালগুলোতেও চলছে একপ্রকার দখলে রাখার প্রতিযোগিতা। কোনো কোনো হাসপাতাল ব্যবহার হচ্ছে শুধুমাত্র বিশেষ মানুষের জন্য। আবার কোনো কোনো হাসপাতাল ব্যবহার হচ্ছে বিশেষ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য। এভাবে যদি এক এক করে হাসপাতালগুলো বিভিন্ন বেড়াজালে আটকে ফেলেন তবে চিকিৎসার জন্য সাধারণ মানুষগুলো কোথায় যাবে?

তিনি বলেন, এদিকে করোনা পরীক্ষার নামে আমরা দেখছি নাটক। যে করোনা পরীক্ষা আমরা করাতে পারতাম মাত্র ৩০০ টাকায়, সেখানে এখন ৩০০০-৫০০০ টাকায় করাতে হচ্ছে। যদি চিকিৎসকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে এই করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যেত তবে সাধারণ জনগণের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হতো। কিন্তু সেটাও আজ আপনারা একটি গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন।

ঢাকার সাবেক এই মেয়র বলেন, অনেক কষ্ট নিয়েই আমাকে আজ বলতে হচ্ছে, যদি সবকিছুতেই ব্যবসা আর মুনাফা খুঁজেন, তবে এবার দয়া করে জানিয়ে দিবেন, কাফনের কাপড়ের ডিলারশিপটা কাকে দেবেন। যাতে সেই প্রতিষ্ঠানের কাফনের কাপড় ছাড়া অন্য কোন কাপড়ে দাফন করতে মানুষ না পারে! তাহলে এখান থেকেও একটা ভালো ব্যবসা হবে!

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৯ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২০
এমএইচ/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।