সোমবার (২২ জুন) দুপুরে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয় থেকে এক ভিডিও প্রেস কনফারেন্সে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, করোনা মহামারীর এই প্রলয়ংকারী দুর্যোগের সময় সুষ্ঠু ভোটে নির্বাচিত দায়িত্বশীল সরকার থাকলে বিদ্যুৎ বিল মওকুফ, বাড়ি ভাড়ার বিষয়ে সহায়তা করা, বিনামূল্যে করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতো।
সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, সরকার চলছে হুকুমবাদের মনোভাব ও বাধ্যকরণের নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে। তাদের আর একটি প্রধান নীতি হচ্ছে, জনগণকে বশ মানাতে বলপ্রয়োগ করা। সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে গ্রামে গ্রামে নীরবে ছড়াচ্ছে করোনা ভাইরাস। ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশই এখন করোনা ভাইরাসের দখলে। ঢাকার পরিস্থিতি ভয়াবহ ও বিপজ্জনক। করোনার অভিঘাতে দেশব্যাপী প্রায় দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছে। অর্থনীতির চাকা স্তিমিত, আমদানির পাশাপাশি রফতানি আরও আশঙ্কাজনক হারে কমছে, ধ্বসে গেছে রেমিটেন্স। করোনার কারণে ভোক্তাদের চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে জনগোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশ। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন আয়ের মানুষদের চোখে সর্ষে ফুল দেখার দশা। এর ওপর ফ্যাসিবাদের অবয়ব চূড়ান্ত রুপ ধারণ করেছে।
‘এই সরকারের আমলে দেশের টাকা পাচার হয়েছে অতি মাত্রায়। এর সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের রুই-কাতলারা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এরা ক্ষমতা দখল করে বারো বছরের রাজত্বে অসংখ্য পাপুল, সম্রাট, খালেদ, শিকদার ভ্রাতৃদ্বয়ের জন্ম দিয়েছে। ক্যাসিনো থেকে শুরু করে মানবপাচারের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা তাদের পকেটে ঢুকেছে। রহস্যজনকভাবে দেশ থেকে উধাও হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৮শ’ কোটি টাকা। ক্ষমতাসীনদের দাপটে সরকারী ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো নিয়ম-কানুন ছাড়াই ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা উড়ে গেছে। আর্থিক খাত সম্পূর্ণ রূপে দেউলিয়া হয়ে গেছে। এর ওপর সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েই যাচ্ছে। এবারেও ভাববিলাসী বাজেট বাস্তবায়ন করতে ব্যাংক থেকে বিশাল অংকের ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এতে করে ব্যাংকের বিদ্যমান তারল্য সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নেবে। করোনা ভাইরাস যেমন মানুষের নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেয়, ঠিক তেমনিভাবে সরকারও জনগণের শ্বাস চেপে ধরেছে। সরকার এতোটাই নির্বিবেক ও বেপরোয়া যে, হরিলুট হওয়া সরকারি অর্থের ঘাটতি পূরণে গরীব মানুষের শরীর থেকে রক্ত টেনে নিচ্ছে। ’
দেশে করোনা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিএনপির এ নেতা আরো বলেন, করোনাকালে আমরা বেশ কয়েকজন মানবিক বাড়িওয়ালা দেখেছি, যারা ভাড়াটিয়াদের ভাড়া মওকুফ করে দিয়েছেন। আবার অনেক বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে নির্দয় আচরণ করছেন। ভাড়াটিয়ারা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছেন, কখন তাদের বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। সরকার বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে বাড়িওয়ালারা ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে সেসবের মাশুল আদায় করছে। যারা ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতা তাদের সুদ মওকুফের ঘোষণা দেওয়া হলেও এখনও নির্দয়ভাবে সুদ আদায় করা হচ্ছে। এই সরকার দেউলিয়া হওয়া অর্থনীতি সচল রাখার জন্য স্বল্প আয়ের মানুষদের মাটির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২০
এমএইচ/এইচজে