বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) বিকেলে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ও করোনা নিয়ে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যদের ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তারা।
ভার্চ্যুয়াল এ আলোচনা অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ।
বিএনপির সংসদীয় দলের নেতা চাপাইনবাগঞ্জ-৩ আসনের হারুন অর রশীদ বলেন, বাজেট পেশের পর এ পর্যন্ত কোনো পত্রিকা, টিভি টকশো, আলোচনাসভাসহ কোথাও দেখিনি ১ শতাংশ লোকও এ বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছে। বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় সবাই বলেছেন অস্বাভাবিক কল্পনা বিলাসী বাজেট। অবাস্তবায়নযোগ্য একটি বাজেট। মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল করোনাত্তোর অর্থনীতি, করোনা যদি স্থায়ী হয় তাহলে কি ধরনের পরিকল্পনা করা হবে এ বাজেটে সেধরনের কোনো দিকনির্দেশনা নেই। যে কারণে আজকে বিশেজ্ঞরা যে পরামর্শ দিচ্ছেন সরকার তা কোনো আমলেই নিচ্ছে না। কারণ হলো তারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়। জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা বলতে কিছুই নেই।
তিনি বলেন, বিএনপিকে রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন থেকে জাতিকে বাইরে রাখা হয়েছে। সত্যিকার অর্থ যদি দেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। আজকে সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। কারণ তারা যেনতেনভাবে ক্ষমতায় থাকতে চায়। এ ক্ষমতার লোভে আজকে আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি। আজকে তারাই সবচেয়ে ক্ষমতাশীল যারা বিদেশে টাকা ও মানবপাচার করছে। যারা মাদককারবারী। তারাই আজকে ক্ষমতাধর প্রভাবশালী।
বিএনপির পক্ষ থেকে বাজেট নিয়ে যেসব প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। করোনা মুক্তির জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা তা নিয়ে যে উপহাস, যে ধরণের কথাবার্তা বলেন এর প্রতিক্রিয়া জানানোর মতো কোনো ভাষা জানা নেই।
বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, ৫ হাজার কোটি টাকা করোনার জন্য প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য হিসেবে ওই কমিটির উপদেষ্টা হওয়ার কথা আমার। ডিসি-ইউএনও সাহেবদের সমন্বয় করার কথা। কিন্তু ডিসি-ইউএনও আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করেনি। ওনারা প্রণোদনা নিয়ে এসেছেন। কমিটি বানিয়েছে শুধু আওয়ামী লীগের লোকদের দিয়েছে। বিএনপির কোনো লোক ত্রাণ পায়নি। আমরা ব্যক্তিগতভাবে নিজেদের উদ্যোগে যতটুকু পেরেছি দিয়েছি। সরকারের এ করোনা বাবদ আমি সংসদ সদস্য হিসেবে একটি টাকাও বরাদ্দ পাইনি। যাতে আমার এলাকার মানুষ হতাশ। আমি বলেছি, বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য হিসেবে আমাদের কিছু দেওয়া হয়নি।
বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, দেশের ৭৪ শতাংশ মানুষ চাকরি হারিয়েছে। ১৪ লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরেছে। এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। উচু ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ চরম দরিদ্র। যাদের দৈনিক আয় ১ দশমিক ৯ ডলারের নিচে। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় নাকি এখন ১৯০০ ডলার। তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে প্রত্যেক নাগরিকের মাথাপিছু আয় এখন ১৩ হাজার টাকার বেশি। হিসাব করে বলতে চাই চার সদস্যের একটি পরিবারের মাসিক আয় হওয়ার কথা ৫৩ হাজার টাকা। তাহলে ত্রাণের লাইন এতো দীর্ঘ কেন?
তিনি বলেন, দশ বছরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে এক লাখেরও বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, ব্যাংক একাউন্ট আছে ১০ কোটির একটু বেশি। তার মধ্যে সাত কোটি মানুষের একাউন্টে গড়ে আছে ৬১০ টাকা। বৈষম্য কি পরিমাণ, আশা করি বুঝতে পারছেন।
রুমিন বলেন, সরকার করোনার সময় সাড়ে ৬ কোটি মানুষকে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে বলে গলাবাজি করছে। সরকারের প্রেসনোটে দেওয়া তথ্য যদি বিশ্লষণ করি তাহলে গত ২২ জুন পর্যন্ত সরকারের দেওয়া তথ্যমতে, চাল বরাদ্দ হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ১৭ মেট্রিক টন। চাল বিতরণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৭০৬ মেট্রিক টন। উপকারভোগী মানুষের সংখ্যা ৬ কোটি ৯২ লাখ ৩০ হাজার ৮৫ জন। তাহলে মাথাপিছু ২ মাস ২৬ দিনে চালের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ দশমিক ৬ কেজি। প্রতিদিন হিসাব করলে মাথাপিছু দাঁড়ায় ৩০ গ্রাম চাল। টাকা বরাদ্দ দিয়েছে ৯১ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে বিতরণ করেছে ৭৮ কোটি ১ লাখ ৫২ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা। উপকার ভোগীর সংখ্যা ৪ কোটি ৪১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৪০ জন। তাহলে ২ মাস ১২ দিনে মাথাপিছু টাকা দাঁড়ায় ১৮ টাকা ৫০ পয়সা। দৈনিক দাঁড়ায় ২৫ পয়সা। সরকারের নূন্যতম লজ্জা থাকলে মাথাপিছু এ ত্রাণ আর টাকা নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করার কথা না।
তিনি বলেন, এবারের বাজেট নিয়ে সবচেয়ে মজার উক্তিটি করেছেন অর্থমন্ত্রী নিজে। তিনি বলেছেন, টাকা কোথা থেকে যোগাড় হবে তা জানি না। আগে খরচের খাত ঠিক করি পরে টাকা যোগাড় করবো।
ভার্চ্যুয়াল এ আলোচনায় আরও অংশ নেন, ব্রাহ্মনবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য উকিল আব্দুস সাত্তার, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান, চাপাইনবাগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম ও বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২০
এমএইচ/ওএইচ/