প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদাকে লেখা এক চিঠিতে বুধবার (১ জুন) এ মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি চিঠিতে করোনাকালে দল নিবন্ধনের নতুন আইন প্রণয়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৬ জুন আমাদের কাছে পাঠানো চিঠিতে ‘প্রচলিত আইনের মৌলিক বিধানাবলী অক্ষুণ্ন রেখে ইংরেজির পরিবর্তে বাংলা ভাষায় প্রণয়নের উদ্যোগ’ বলা হয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে একটি ভালো উদ্যোগ মনে হলেও এমন একটি কাজ করার জন্য যে সময় বেছে নেওয়া হয়েছে, তা অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য। কিন্তু আইনের যে খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে, তাতে চিঠিতে উল্লিখিত ‘মৌলিক বিধানাবলী অক্ষুণ্ন’ রাখা হয়নি। এজন্য খসড়া নতুন আইন শুধু নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত উদ্যোগেরই পরিপন্থী নয়, আমরা এটিকে বিশেষ উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করি।
তিনি বলেন, ...সময় বহুল প্রচলিত ইংরেজি শব্দগুলোকে বাংলায় রূপান্তরের নামে অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু নতুন শর্ত সংযোজন করে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন আইনের মতো এমন একটি বিশেষ রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ কোনো বিবেচনাতেই স্বাভাবিক কিংবা সময়োচিত নয় বরং অস্বাভাবিক, অনভিপ্রেত, অগ্রহণযোগ্য এবং মহল বিশেষের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অপকৌশল বলে আমরা মনে করি।
আরও পড়ুন...৩৩ শতাংশ নারী পদ পূরণ দলের ওপর ছেড়ে দিচ্ছে ইসি
অসময়ে নেওয়া এ উদ্যোগকে সন্দেহজনক আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, নিজেদের প্রতিষ্ঠানের নামে ‘কমিশন’ এবং পদবিতে ‘কমিশনার’ এর মতো ইংরেজি শব্দ অক্ষুণ্ন রেখে জনগণের কাছে পরিচিত ও দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সেসব প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নাম/পদবি পরিবর্তনের প্রস্তাব অনৈতিক ও অপ্রয়োজনীয়।
বাংলাদেশের সংবিধানে উল্লিখিত ইংরেজি শব্দের বাংলায়ন-স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, কমিশন, কমিশনার ইত্যাদি ইংরেজি শব্দই বহাল রাখা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন আইনেও অনেক ইংরেজি শব্দের বাংলায়ন রয়েছে। যেমন- কমিশন, কমিশনার, রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, ভোট, ভোটার, ব্যালট পেপার, হেলিকপ্টার ইত্যাদি।
আরও পড়ুন... দল নিবন্ধন আইন প্রণয়নে ইসির কার্যক্রম স্থগিত দাবি বিএনপির
বাংলাদেশের বহু রাজনৈতিক দলের নাম ভিন্ন ভিন্ন ভাষার রয়েছে, যেগুলো বাংলায়ন করা হয়নি। যেমন- ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, আওয়ামী লীগ অথবা পার্টি, লীগ, ফ্রন্ট, ফোরাম, ফেডারেশন ইত্যাদি। তাই সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে যে নির্বাচন কমিশন কি এসব নাম এবং সংবিধান ও প্রচলিত অন্যান্য আইনের ভাষা অশুদ্ধ মনে করেন?
তিনি আরো বলেন, একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে প্রচলিত এসব ইংরেজি শব্দ বাংলা প্রতিশব্দ রূপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেমন- চেয়ারম্যান (পৃ. ৪২৫), কাউন্সিলর (পৃ. ২৩৬), সিটি (পৃ.১১৫১), কর্পোরেশন (পৃ. ২২৯) ইত্যাদি। তাই নির্বাচন কমিশন বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা অভিধানকে অগ্রাহ্য করার অধিকার রাখে বলেও আমরা মনে করি না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নতুন এমন একটি আইন করার ফলে সারাদেশে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো এবং এসব প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত ব্যক্তিদের পরিচিতি ফলক, প্যাড, সিল, সাইনবোর্ড ইত্যাদি পরিবর্তনের জন্য যে বিপুল অর্থ ব্যয় হবে, তা বরং এ সংকটকালে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও হতদরিদ্র মানুষের অন্ন জোগান দেওয়ার জন্য ব্যয় করা সুবিবেচনার কাজ হবে।
দেশের বিদ্যমান সংকটময় সময় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সংশ্লিষ্টজনদের সঙ্গে সময় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে মতামত গ্রহণ এবং জনমত সংগ্রহ করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো প্রস্তাব চূড়ান্ত করা উচিত হবে না, বিধায় প্রাসঙ্গিক নতুন আইন প্রণয়নের কার্যক্রম স্থগিত রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি আমরা, যোগ করেন ফখরুল।
চিঠিতে তিনি সংকটকালে আইন প্রণয়নের পেছনে সময় অপব্যয় না করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নিজেদের সামর্থ্য বাড়ানোর দিকে নির্বাচন কমিশনকে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বানও জানান।
দলটির যুগ্ম মহাসচিব বিকেলে ইসি সচিব মো. আলমগীরের কাছে চিঠিটি হস্তান্তর করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৪ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২০
ইইউডি/এসআই