পাবনা: ভাষার মাস স্মরণে জেলা শহর পাবনায় শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির উদ্যোগে চলছে সপ্তাহব্যাপী পুস্তক প্রদর্শনী।
লাইব্রেরি ভবনের তৃতীয় তলায় স্যামসন এইচ চৌধুরী মিলনায়তনে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন থেকে এই পুস্তক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
এবারের পুস্তক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে অবস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এর উপাচার্য ড. মো. শাহ্ আজম। প্রতিদিন পুস্তক প্রদর্শনী দেখতে লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে আসছেন জ্ঞান পিপাসু দর্শনার্থীরা।
এখানে রয়েছে হাজার বছর আগের সংগৃহীত তালপাতা ও হাতে লিখা পাণ্ডুলিপিসহ রবীন্দ্র ও নজরুল সমগ্র। এছাড়া দেশ বিদেশের প্রায় সব লেখকদের লেখা ও প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বই প্রদর্শন করা হয়েছে এখানে।
১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত জেলা শহরের অহংকার এই লাইব্রেরির বয়স হয়েছে ১৩৪ বছর। তাই বলা যায় কালের সাক্ষী হয়ে এখনো এই অঞ্চলের সব শ্রেণীপেশার মানুষের জ্ঞান আহরণের তীর্থ স্থান বলা হয় অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরিকে।
প্রায় ৩৫ হাজার বইয়ের ভাণ্ডারে সমৃদ্ধ এই লাইব্রেরিতে ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত টেকচাঁদ ঠাকুরের লেখা বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস আলালের ঘরের দুলাল বইটি দেখতে পাওয়া যাবে। এই বিশাল বইয়ের ভাণ্ডার থেকে মূল্যবান প্রায় পাঁচ হাজার বই প্রদর্শন করা হয়েছে। এক সঙ্গে এতো বই দেখার সুযোগ শুধু এই লাইব্রেরি চত্বরে মিলবে। বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য থেকে শুরু করে দেশ বিদেশের বিখ্যাত সব লেখকদের পাণ্ডুলিপি রয়েছে এই লাইব্রেরিতে। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর জীবনী, বিজ্ঞান, শিশুতোষ, সমাজ বিজ্ঞান, চারুকলাসহ সব বিষয়ের বই একসঙ্গে দেখার ব্যতিক্রমী আয়োজন এই পুস্তক প্রদর্শনী।
পুস্তকের পাশাপাশি এখানে রয়েছে ১৯৬৭ সাল থেকে শুরু করে ১৯৫২ সালের প্রকাশিত বেশ কিছু পত্রিকার সংগৃহীত সংকলন। এছাড়াও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলা ও ইংরেজি সুনামধন্য প্রকাশিত পত্রিকার সংগ্রহ রয়েছে এই সমৃদ্ধ লাইব্রেরিতে। বাংলাদেশে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর ওপরে লেখা সমস্ত গ্রন্থের সংগ্রহ রয়েছে এখানে। প্রদর্শনীতে আলাদাভাবে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গ্রন্থের আলাদা কর্নার করা হয়েছে দর্শকদের জন্য। সেখানেও প্রায় তিন শতাধিক বই প্রর্দশনী করা হয়েছে।
লাইব্রেরির দেওয়া তথ্য অনুসারে স্থানীয় তাঁতিবন্দের জমিদার গঙ্গা গোবিন্দ চৌধুরীর ছিলেন তিনি ছেলে। গুরু গোবিন্দ, দুর্গা গোবিন্দ ও বরাদ গোবিন্দ নাম ছিল তাদের। দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে বরাত গোবিন্দ চৌধুরীর সময়কালে ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে এক হাজার টাকা ব্যয়ে চৌধুরী বাবুরা দোগাছি থেকে তাঁতিবন্দ পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণ করেছিলেন। বরাত গোবিন্দ চৌধুরী ও দুর্গা গোবিন্দ চৌধুরী ছিলেন নিঃসন্তান। জমিদার বরাত গোবিন্দ চৌধুরীর দত্তক ছেলে অন্নদা গোবিন্দ চৌধুরী নিজের নাম অনুসারে পাবনা শহরে ১৮৯০ খিস্টাব্দে অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে পুরাতন ভবনে জায়গা সংকুলান ও পুস্তক নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ লাইব্রেরির পরিধি বাড়ানোর জন্য পুরাতন ভবন ভেঙে ২০০২ সালে স্কয়ার পরিবারের সহযোগিতায় আধুনিক চারতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। সেকারণে এখনও ঐতিহ্য ও কালের সাক্ষী হয়ে জ্ঞান পিপাসুদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে এই গ্রন্থাগারটি।
ঐতিহ্য ও বই সংগ্রহের ভাণ্ডারের দিক থেকে দেশের অন্যতম গ্রন্থাগারের মধ্যে অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির নাম বলা যেতে পারে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকছে লাইব্রেরির পুস্তক প্রদর্শনী প্রাঙ্গণ।
এছাড়া এখানে পাঠক নিয়মিত বই পড়তে আসেন। তবে প্রদর্শনী চলাকালীন নিয়মিত পাঠচক্র বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সপ্তাহব্যাপী এই পুস্তক প্রর্দশনী একদিকে যেমন পাঠকদের একসঙ্গে অনেক বই দেখার সুযোগ সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে হাজার বছরের পুরাতন ঐতিহ্যমণ্ডিত তালপাতা ও হাতে লিখা পাণ্ডুলিপি দেখার সুযোগ পাচ্ছে। তাইতো একদিকে বইপ্রেমীদের আরও বই পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে নতুন প্রজন্মের সামনে ইতিহাস ঐতিহ্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ১০২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৪
আরএ