ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

খন্দকার সোহেল (ভাষাচিত্র)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৪
খন্দকার সোহেল (ভাষাচিত্র)

[নানান কারণে বছরের শুরুর লগ্নে জাতীয় গুরুত্ব ও মনোযোগের কেন্দ্রে চলে আসেন গ্রন্থ-প্রকাশকরা। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বাংলা একাডেমী আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে দেশের অভিজাত প্রকাশনী সংস্থাগুলো কারা কী বই প্রকাশ করছে— লেখক, পাঠক ও সংবাদমাধ্যমের আগ্রহের কেন্দ্রে চলে আসে এইসব প্রসঙ্গ।



আসন্ন অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে ২০১৪ কেন্দ্র করে বাংলানিউজের নতুন আয়োজন ‘প্রকাশক সমীপেষু’। প্রকাশনা খাতের নানান বিষয়, সমস্যা, সম্ভাবনা ও একটি প্রকাশনা সংস্থা গড়ে উঠবার পেছনের গল্প অন্বেষণে আজ থাকছে ‘ভাষাচিত্র’র সত্বাধিকারী খন্দকার সোহেল’র সঙ্গে তানিম কবির’র আলাপ। ]

বই প্রকাশের দায়িত্ব নিলেন কেন? এ পেশায় আপনার আগমনের গল্পটা কী?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলাম আমি। সাংস্কৃতিক অঙ্গণে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের ধারাবাহিকতায় প্রকাশনায় আসা। একেবারেই নান্দনিক একটি কর্মযজ্ঞ দিয়েই আমার প্রকাশনার যাত্রা শুরু।

আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে এখন পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা কত? এরমধ্যে আপনার বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি বইয়ের নাম শুনতে চাই।

ভাষাচিত্র প্রকাশিত মোট বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩শ’। উল্লেখযোগ্য পাঁচটি বই হলো— মানুষ জীবনানন্দ: লাবণ্য দাশ। শিকারের গল্প: আবদুর রহমান চৌধুরী, খলিল চৌধুরী। আন্তোনিওনির সিনে জগত: রুদ্র আরিফ। বিশ শতকের বাঙলা কবিতা: রহমান হেনরী সম্পাদিত। কবিতা ডাউন আন্ডার: অংকুর সাহা, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, সৌম্য দাশগুপ্ত সম্পাদিত।

বই প্রকাশে মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আপনাদের সম্পাদকীয় নীতিমালা কী? আপনার প্রতিষ্ঠানে কি সম্পাদনা পরিষদ আছে?

বই প্রকাশের ক্ষেত্রে আমরা লেখকের নামের চেয়ে বইয়ের বিষয় নিয়ে বেশি আগ্রহী। নামী লেখকদের পেছনে ছোটার বদলে আমরা মানসম্মত পাণ্ডুলিপির প্রতি বেশি মনোযোগী। আমাদের নিজস্ব সম্পাদনা পরিষদ নেই, তবে চুক্তিভিত্তিক একটি টিম স্বল্পসময়ের জন্য সম্পাদনার কাজটি করে দেয়।

দেশের মানুষের আয় ও জীবন নির্বাহের খরচ বিবেচনায় বইয়ের মূল্য আসলে কী হওয়া উচিত? বইয়ের মূল্য নির্ধারণে আপনার প্রতিষ্ঠান কি কোনো নিয়ম অনুসরণ করে?

চলতি বাজারমূল্য অনুযায়ীই আমরা বইয়ের মূল্য নির্ধারণ করে থাকি। তবে বই ক্রয়ের ক্ষেত্রে বইয়ের মূল্য বেশি মনে হওয়ার একটি কারণ হলো কমিশন। আমরা যদি কমিশন ছাড়া বই বিক্রি করতে পারতাম তাহলে হয়তো এই প্রশ্নটি খুব একটা গুরুত্ব পেতো না।

প্রকাশের পাশাপাশি সারাদেশে বই বাজারজাতকরণের ব্যাপারে আপনার প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা কী? এই ভূমিকা কি প্রকাশক নিজে নেবেন, নাকি এ সংক্রান্ত সরকারি নীতিমালার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন?

বাংলাদেশে সৃজনশীল প্রকাশনায় পেশাদারিত্ব গড়ে ওঠেনি বই বাজারজাতকরণের সমস্যার কারণে। লক্ষ্য করলেই আমরা দেখতে পাই, পুরো ঢাকা শহরে সৃজনশীল বই বিক্রির জন্য পর্যাপ্ত দোকান নেই। এবং নামমাত্র যে কয়টি দোকানে বই বিক্রি হয়, বইয়ের দিকে তাকালে দেখবেন সব দোকানে প্রায় একই বই। সারাদেশের চিত্র একই। ইদানীং নতুন একটি সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। তা হলো, ভারতীয় বইয়ের অবাধ বিচরণ। আমাদের দেশে বইয়ের দোকানীর পরিবর্তে লাইব্রেরিয়ান খুব বেশি প্রয়োজন। প্রয়োজন পাঠাগার আন্দোলন বাড়ানো। তাহলে বইয়ের পাঠকসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এই ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা খুব প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশে একটি সৃজনশীল বইয়ের মার্কেট গড়ে তোলা খুব জরুরি।

বই প্রকাশের ক্ষেত্রে লেখকদের সাথে আপনাদের কী ধরনের চুক্তি হয়? লেখককে রয়্যালিটি দেওয়ার ব্যাপারে আপনার অথবা আপনার প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ কিংবা সীমাবদ্ধতা বিষয়ে কিছু বলুন।

বাংলাদেশে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে এখনও লেখক-প্রকাশকদের মধ্যে পেশাদারিত্ব গড়ে ওঠেনি। তবে আমি এই বছর থেকে লেখকদের রয়্যালিটি প্রদানের ক্ষেত্রে পেশাদার হওয়ার চেষ্টা করছি। তবে এই পেশাদারিত্ব গড়ে উঠতে বাংলাদেশে আরো সময়ের প্রয়োজন।

প্রকাশক হিসেবে লেখকের কাছ থেকে কী ধরনের দায়িত্ববোধ আশা করেন? লেখকের প্রতি আপনার দায়িত্ববোধের জায়গাগুলো কী?

একজন প্রকাশক হিসেবে লেখকের কাছে পরিশ্রমলব্ধ লেখা আশা করি। বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুতকরণে লেখকদের আরো যত্নশীল হওয়া বাঞ্ছনীয়। বাংলাদেশে সৃজনশীল লেখালেখির দিকেই লেখকদের মনোযোগ বেশি। আমরা গবেষণামূলক, তথ্যমূলক লেখা বেশি চাই।

বই পড়ার ব্যাপারে মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণে মিডিয়া ও কর্পোরেট হাইসগুলোর কাছ থেকে কী ধরনের উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন?

একুশে বইমেলায় বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো যেভাবে তাদের মেধা, সময় আর পরিশ্রম এখানে দিয়ে থাকেন, তার দশ ভাগ যদি সারাবছরও এই সৃজনশীল প্রকাশনার জন্য বরাদ্দ করেন তাহলে আমাদের এই শিল্পের বিকাশমান ধারাটি আরো গতিশীল হবে।

প্রকাশনাকে শিল্পে পরিণত করার ক্ষেত্রে নিজস্ব কোনো কৌশল প্রস্তাব করবেন কি? এর যথার্থ শিল্পকরণ হলে প্রকাশকদের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি পাঠকদের বা যারা বই কিনবেন, তারা কি কোনো বাড়তি সুবিধা পাবেন?

সত্যি বলতে বাংলাদেশে প্রকাশনাকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করার সময় এখনও আসেনি। একটি বইকে প্রোডাক্ট বলার দুঃসাহস আমাদের এখনো হয়নি। একটি বই শুধু প্রকাশ করলেই আমাদের হবে না, প্রতিটি বইয়ের জন্য আমাদের ব্র্যান্ডিং, মার্কেটিং পলিসি তৈরি করতে হবে। একটি বই আমরা প্রকাশ করি বড়জোড় ৩০০ থেকে ৫০০ কপি। কিন্তু এই নগন্য সংখ্যা দিয়ে আমরা একটি শিল্প গড়ে তুলতে পারবো না। আমরা যদি একটি বই ১০ হাজার, ২০ হাজার কিংবা লাখ কপি প্রিন্ট করতে পারি তাহলে হয়তো বুক ফুলিয়ে এই সেক্টরটিকে আমরা শিল্প হিসেবে ঘোষণা করার জোর দাবি জানাতে পারবো।

২০১৪ সালের বইমেলা নিয়ে আপনার প্রতিষ্ঠানের আয়োজন ও প্রস্তুতি সম্পর্কে বলুন। এবারের প্রকাশিতব্য বইয়ের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে আপনার পছন্দের কয়েকটি বইয়ের নাম শুনতে চাই।

এবারের বইমেলায় আমরা খুবই নির্বাচিত কিছু বই প্রকাশ করবো। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হলো—  বাংলাদেশের চলচ্চিত্র চলচ্চিত্রে বাংলাদেশ, কম্পিউটার সমস্যার ৫৫৫ সমাধান, দিনের ইতিহাস, অভিনয়তত্ত্ব, সিনেঅলা, দ্য ফ্লাওয়ারস অব হিরোশিমা, কমিক রাজ্য : ১৪ নারী নির্মাতা, শওকত আলীর উপন্যাস : কলাকৌশল ও বৈশিষ্ট্য, সাংবাদিকতা, কালকেতু ও ফুল্লরা।

প্রকাশক সমীপেষু: শুদ্ধস্বর

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।