ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

শহীদ মিনার থেকে বইমেলায়

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৪
শহীদ মিনার থেকে বইমেলায় ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: ‘মাগো, ওরা বলে সবার কথা কেড়ে নিবে/ তোমার কোলে শুয়ে গল্প শুনতে দেবে না/ বলো, মা, তাই কি হয়? তাইতো আমার দেরি হচ্ছে/তোমার জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে তবেই না বাড়ি ফিরবো।
 
না, এরপর আর বাড়ি ফেরা হয়নি বুকের ধন ছেলের।

ঘাতকের ক্ষীপ্র বুলেট ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল ছেলের বুক। কালো পিচঢালা পথে বয়ে গিয়েছিল রক্তের স্রোত। বুক পকেটে রাখা মা’র কাছে লেখা চিঠিটি ভিজে গিয়েছিল রক্তে।
 
সেদিন মায়ের জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে ফেরা না হলেও মুখের ভাষাকে কেড়ে নিতে দেয়নি দামাল ছেলেরা। জীবন তুচ্ছ করে মায়ের ভাষার, মুখের ভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছিল রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বার।
 
সেদিনের এই রক্তঝরা দিনটিকে অমর, অক্ষয় করে রাখতেই গড়ে তোলা হয় স্মৃতির শহীদ মিনার। কিন্তু পাষণ্ড, বর্বর পশ্চিমা শাসকের শ্যান দৃষ্টি পড়ে এই শহীদ মিনারের ওপর। ভেঙে দেওয়া হয় আমার ভাইয়ের রক্তে গড়া শহীদ মিনার।
 
সব বর্বরতা, পশুত্বকে পরাজিত করে আমরা আবার গড়ে তুলেছি আমাদের স্মৃতির শহীদ মিনার। প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর থেকেই বিনম্র শ্রদ্ধায় আমরা স্মরণ করি আমাদের ভাষা শহীদদের। ভাষার জন্য আমাদের আত্মদানকে স্মরণ করেই আমরা ঋদ্ধ হই, ধন্য হই, প্রত্যয়ী হই ভাষার মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার।
 
মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার ব্যঞ্জনা আজ বিশ্বব্যাপী। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে একযোগে পালন করা হচ্ছে।
 
প্রথম প্রহর থেকে মানুষের ঢল নামে শহীদ মিনারে। নাঙ্গা পায়ে, মৌন ধীর গতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে হাজার হাজার মানুষ। রাতভর শহীদ মিনারে চলে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ। রাত ভোর হতেই অন্যরকম এক দৃশ্য। চারদিক থেকে স্রোতের মতো মানুষ আসতে থাকে শহীদ মিনারে।
 
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ অথবা ‘মোদের গরব মোদের আশা/আমরি বাংলা ভাষা’ গাইতে গাইতে দলবেধে আসতে থাকে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন, বিশিষ্ট ব্যক্তি থেকে শুরু করে মুটে-মজুর পর্যন্ত।
 
প্রভাতফেরী শেষ করে প্রায় সবাই ছুটে আসছে বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। বাংলা একাডেমি, সোহরাওয়ার্দি থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত রাস্তা একাকার মানুষের পদচারণায়।
 
শুক্রবার বিশেষ এই দিনটিতে বইমেলা শুরু হয়েছে সকাল ৮টা থেকে। চলবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের কিছু আগেই খোলা হয় মেলার প্রবেশ দ্বার। তখন থেকেই শত শত বইপ্রেমী মেলায় আসতে শুরু করে। একুশের শোক আর শ্রদ্ধায় প্রায় সবাই পড়েছে আজ সাদাকালো পোশাক।
 
ক’দিন আগে বসন্তের প্রথম দিনে মেলা যেমন বর্ণিল হয়ে উঠেছিল বাসন্তি রঙে, তেমনি একুশের দিনে মেলায় আগতদের মার্জিত পরিপাটি পোশাকে স্পষ্ট একুশের ছাপ।
 
আজ মেলায় কেবল ঘুরতে আসা নয়। অনেকেই প্রিয় লেখকের প্রিয় বইটি কিনে উপহার দিচ্ছেন প্রিয়জনকে। মোড়কের নিচে সাদা কাগজে লিখে দিচ্ছেন একুশের প্রিয় পঙতি।
 
ঢাকার সূত্রাপুর থেকে এসেছেন কনিকা চৌধুরী। ইডেন কলেজে বাংলায় পড়েন তিনি। কনিকা পড়েছেন কালো পাড়ের সাদা শাড়ি। শহীদ মিনারে বন্ধুদের সাথে ফুল দিয়ে সরাসরি মেলায় ঢুকেছেন। কিনেছেন হেলাল হাফিজের কবিতার বই।
 
কনিকার মতো শত শত তরুণ-তরুণীর ভিড়ে মেলা প্রাঙ্গণ যেমন মিশে গেছে শহীদ মিনারে গিয়ে। তেমনি শাহবাগ, টিএসসির জনস্রোতে একাকার সোহরাওয়ার্দী, দোয়েল চত্বরসহ গোটা এলাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।