ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

একুশ রঙে উদ্ভাসিত বইমেলা

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৪
একুশ রঙে উদ্ভাসিত বইমেলা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মেলা প্রাঙ্গণ থেকে: ‘একুশ মানে মাথা নত না করা, একুশ মানে শহীদের চেতনায় জেগে ওঠা’। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই বাঙালি মনে এ কথাটি বার বার ফিরে আসে।

আর একুশের কথা এলেই এসে যায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার কথা।

কারণ অমর একুশে গ্রন্থমেলার মতো এমন জৌলুসপূর্ণ বইমেলা উপমহাদেশের কোনো দেশেই হয় না। মেধা ও মননের চর্চার জন্যই মানুষ ছুটে আসে এই মেলায়। শুধু মেধা ও মনন কেন, দেশের উন্নয়ন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চর্চা ও বিকাশ এবং সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গঠনের জন্যও প্রয়োজন বই।

মাসব্যাপী এ বইমেলায় প্রায় প্রতিদিনই থাকে পাঠক-দর্শনার্থীর ভিড়। আর ২১ ফেব্রুয়ারির দিনে বইমেলায় নামে পাঠক-দর্শনার্থীর ঢল। এবারের বইমেলায়ও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

২১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল ৮টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরুর পর থেকেই মেলায় আসতে থাকেন পাঠক-দর্শনার্থীরা। সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষ করেই একুশের চেতনায় তারা সরাসরি ছুটে আসেন বইমেলায়। আর বিকেল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই বইমেলায় পাঠক-দর্শনার্থীদের ভিড় জনস্রোতে রূপ নেয়।

ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে প্রায় সব বয়সী পাঠক-দর্শনার্থীর ভিড়ে মুখরিত ছিল বইমেলা। দেশি পাঠক-দর্শনার্থীর পাশাপাশি শুক্রবার বইমেলায় বিদেশি পাঠক-দর্শনার্থীর সমাগমও ছিল চোখে পড়ার মতো।

আর মেলায় আসা এসব পাঠক-দর্শনার্থীদের প্রায় সবাই ছিলেন একুশের চেতনায় উদ্ভাসিত। সাদা-কালো পোশাকের পাশাপাশি কেউ মুখে, কেউ হাতে এঁকেছিলেন শহীদ মিনারের আল্পনা। কেউ আবার মাথায় পরেছিলেন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ লেখা ব্যান্ডেনা। কারও মুখেই লেগেছিল একুশে ফেব্রুয়ারি না ভোলার প্রত্যয়ী সঙ্গীত ‘...আমি কি ভুলিতে পারি। ’

শুক্রবার মেলায় ২৫৩ বই
অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২১তম দিনে শুক্রবার মেলায় ২৫৩টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। এবারের বইমেলায় সর্বোচ্চ বইয়ের প্রকাশ হয়েছে এদিন। এসব বইয়ের মধ্যে ছিল গল্প ৩৪টি, উপন্যাস ৪৭টি, প্রবন্ধ ১৩টি, কবিতা ৫৮টি, গবেষণা ৩টি, ছড়া ৭টি, শিশুসাহিত্য  ১০টি, জীবনী ৬টি, রচনাবলী ১টি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ১১টি, নাটক ১টি,  বিজ্ঞান বিষয়ক ৮টি, ভ্রমণ ৭টি, ইতিহাস ২টি, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ৫টি, রম্য/ধাঁধা ৪টি, ধর্মীয় ১টি, অনুবাদ ২টি, অভিধান ১টি, সায়েন্স ফিকশন ৩টি এবং অন্যান্য বই ২৯টি।

শুক্রবার মেলায় আসা উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ’র ‘গল্প গল্প’ আবুল মাল আব্দুল মুহিত’র ‘স্মৃতির মনিকোঠায়’। এ দুটি বই প্রকাশ

করেছে সময় প্রকাশন। এছাড়া সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী’র ‘দুই বাঙালির লাহোর
যাত্রা’ বইটি প্রকাশ করেছে জাগৃতি প্রকাশনী।

এছাড়া, শুক্রবার মেলার নজরুল মঞ্চে ২২টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সন্ধ্যা ৬টায় নজরুল মঞ্চে আলিম উদ্দিন আলমের ‘জীবন মানে সুখ দুঃখ’ কাব্যগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

মেলামঞ্চের অনুষ্ঠান
অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে শুক্রবার বিকেল ৪টায় ‘বাঙালি সংস্কৃতিতে মানবতাবাদ’ শীর্ষক অমর একুশে বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে একক বক্তব্য প্রদান করেন জাতীয় অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন আহমদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান এবং সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

স্বাগত ভাষণে শামসুজ্জামান খান বলেন, বাঙালি সংস্কৃতির শেকড়ে প্রোথিত মানবতাবাদ নানা সময়ে বিপর্যস্ত হয়েছে। তবে বাংলার ভাবুক-বুদ্ধিজীবীসহ তৃণমূলের সাধারণ মানুষ সব বৈরিতা অতিক্রম করে মানবতাবাদের মশাল প্রজ্জ্বলিত রেখেছে, যা আমাদের ইতিবাচক আগামীরই ইঙ্গিত।

অমর একুশে ২০১৪-র বক্তৃতায় অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন আহমদ বলেন, বাঙালি সংস্কৃতি মূলত সমন্বয়ধর্মী সংস্কৃতি। বহুবিধ এবং বিচিত্র উপাদানের সমন্বয়ের ফলে বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে (বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ ও স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ) সুপ্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন নরগোষ্ঠী এসে বসবাস করতে শুরু করেছে। এই সকল নরগোষ্ঠী সঙ্গে নিয়ে এসেছে তাদের নিজস্ব বিচিত্র সাংস্কৃতিক উপাদান। এসব বহিরাগত উপাদান বা উপকরণের সঙ্গে দেশজ উপাদানের সংমিশ্রণ ও সমন্বয় হয়েছে এবং এর ফলেই বাংলার সাংস্কৃতিক রূপান্তর ঘটেছে যুগে যুগে।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, মানবতাবাদের মূলে আছে যুক্তিবাদী জীবনদর্শন। বাঙালি সমাজে যুক্তিবাদ প্রসারে এ অঞ্চলের চিন্তাবিদ-বুদ্ধিজীবীদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। কারণ সমাজে অন্তর্গত রক্ষণশীলতা চিরকাল যুক্তিবাদিতাকে শত্রপক্ষ বলে বিবেচনা করে। এর মাঝেও বাঙালি সংস্কৃতির মৌলকেন্দ্রে মানবতাবাদের যে সুদীর্ঘ পরম্পরা বহমান তা শত সংকটের মাঝেও আমাদের আশাবাদী করে।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ফকির সিরাজের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে ‘ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী’ এবং এস. এম. আফজাল হোসেন ও তার দল। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী কল্যাণী ঘোষ, মনোরঞ্জন ঘোষাল, পল্লব গোমেজ, আবদুল জাব্বার, ফকির আলমগীর, মাহমুদুজ্জামান বাবু এবং বিমান চন্দ্র বিশ্বাস।

শনিবারের আয়োজন
শিশুদের অভিভাবকসহ স্বাচ্ছন্দ্যে বই কেনার সুবিধার্থে শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত মেলায় ঘোষণা করা হয়েছে শিশুপ্রহর। মেলা চলবে যথারীতি রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। এছাড়া, সকাল ৯টায় অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোরদের চূড়ান্ত সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।

বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ পাঠ করবেন অধ্যাপক গোলাম মুস্তাফা।

আলোচনায় অংশ নেবেন পার্থ সেন গুপ্ত,
অনিরুদ্ধ কাহালি, দিব্যদ্যুতি সরকার এবং মোহাম্মদ আজম। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী।

সন্ধ্যায় যথারীতি পরিবেশিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।