ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

চিরচেনারূপে বইমেলা

আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৫
চিরচেনারূপে বইমেলা ছবি: জাহিদ সাইমন/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা থেকে: সামনে মানুষ। পেছনে মানুষ।

হাজারো মানুষ। পায়ে পায়ে মানুষ এগিয়ে চলছে। গন্তব্য অমর একুশে গ্রন্থমেলা।

শুক্রবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সপ্তাহের প্রথম ছুটির দিনে ঢল নেমেছে বাঙালির প্রাণের এ উৎসবে। টিএসসি ও দোয়েল চত্বর দিয়ে মোট চারটি লাইনে স্রোতের মতো মানুষ এসে মিলেছিলো এ মহাযজ্ঞে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ- এ দু’জায়গা মুখরিত ছিল দর্শনার্থীদের পদচারণায়।

বিকেল থেকে মেলা চত্বরে ছিল না তিলধারণের ঠাঁই। এদিন সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় বেলা ১১টা থেকেই মেলায় আসতে শুরু করেন সব বয়সের পাঠক। সকালে সাড়ে আটটায় একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলা উপলক্ষে ছিল শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতায় শতাধিক প্রতিযোগী অংশ নেয়।

সকালে বইমেলার ঝাঁপি খোলা হলেও দুপুর থেকে লোক সমাগম বাড়তে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনস্রোতে চিরচেনারূপ পায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা। সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দু’জায়গা ছিলো লোকারণ্য।

প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সপ্তাহের প্রথম ছুটির দিন বিক্রিবাট্টা ছিলো সন্তোষজনক। মেলা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক পাঠকের হাতে বই।

রামপুরা থেকে আসা গৃহিণী কাবেরি আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, টিএসসি থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে মেলায় ঢুকেছি। প্রথমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা থেকে দু’টি উপন্যাস ও একটি রান্না বিষয়ক বই কিনেছি। এরপর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে বাচ্চাদের জন্য গল্পের বই নিয়েছি।

অল্প সময়েই মেলা রূপ নেয় জনসমুদ্রে। এদিন রেকর্ড সংখ্যক বইও প্রকাশিত হয়।

শুক্রবার ২৯০টি বই
শুক্রবার মেলায় আসা নতুন বইয়ের সংখ্যা ছিল ২৯০টি। নজরুল মঞ্চে ৩১টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়। রেকর্ড সংখ্যক বইয়ের প্রকাশ আর মানুষের উপচেপড়া ভিড়ে বেচাকেনা নিয়ে সন্তুষ্ট প্রকাশকরা।

পাঠকদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে তারা প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন।

একাডেমির তথ্যকেন্দ্র এবং সমন্বয় ও জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার মেলার ষষ্ঠ দিনে নতুন ২৯০টি বই এসেছে। এর মধ্যে গল্প ৫৩, উপন্যাস ৫৯, প্রবন্ধ ২২, কবিতা ৫৮, গবেষণা ৬, ছড়া ১০, শিশুসাহিত্য ১৩, জীবনী ৮, নাটক ১, বিজ্ঞান ১৩, ভ্রমণ ২, ইতিহাস ৩, ধর্মীয় ১, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ২, রম্য ৪, চিকিৎসা ৪, অভিধান ১ এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর ২৮টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে।

শুক্রবার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে- ঝিঙে ফুল থেকে আল মাহমুদের ‘নির্বাচিত কিশোর সাহিত্য’, চারুলিপি প্রকাশনী থেকে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘অ্যারিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব’, তাম্রলিপি থেকে আনিসুল হকের ‘আকাশের ঠিকানায়’, সময় প্রকাশন থেকে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ‘সেরিনা’, পিআইবি থেকে অরুণাভ সরকারের ‘সম্পাদনার প্রথম পাঠ’, গ্রন্থকানন থেকে কবির হুমায়ূনের ‘দুঃস্বপ্নের ভালবাসা’, নালন্দা থেকে কুলদা রায়ের ‘বৃষ্টি চিহ্নিত জল’, খান ব্রাদার্স থেকে আহমদ ছফার ‘হারানো লেখা’, ভাষাচিত্র থেকে সুখরঞ্জন দাশগুপ্তের ‘মুজিব হত্যার ষড়যন্ত্র’, ছায়াবিথী থেকে তারেক অনুর ‘পথ চলাতেই আনন্দ’, অন্বেষা থেকে তসলিমা নাসরিনের ‘শরম’, শুদ্ধস্বর থেকে অনুপমা অপরাজিতার ‘স্বপ্নভুক লোনাজল’, বিভাস প্রকাশন থেকে আহমদ রফিকের ‘ভাল থাকার শুলুক সন্ধান’, বলাকা প্রকাশন থেকে এ এম আব্দুল্লাহর ‘অগ্নিপুরুষ বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী’ প্রভৃতি।

মোড়ক উন্মোচন
অমর একুশে গ্রন্থমেলার নজরুল মঞ্চে এদিন মোট ৩১টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- রাশিদা মনির ‘রাজকন্যার বিয়ে হুতোম প্যাঁচার সাথে’, কমল সি রায়ের ‘স্বপ্নীল ভাবনা’, রাশিদা ইসলামের ‘সেই ছায়াতল’, খাইরুল ইসলামের ‘স্বপ্ন’, শামীমা শাহীনের ‘ভালো থেকে তুমি’, আনোয়ার কামালের ‘নৈঃশব্দের রাত্রিদিন’, সাদিয়া আফরিনের ‘ভ্রমণ’, সাঈদা শিউলির ‘নিভৃত নিলয়’ প্রভৃতি।

মেলামঞ্চের আয়োজন
শুক্রবার মেলামঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘রজনীকান্ত সার্ধশতজন্মবর্ষ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ পাঠ করেন নূরুল আনোয়ার। জামিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা করেন অধ্যাপক আজিজুর রহমান ও শিখা আরেফিন। সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অনীক বোসের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে ‘স্পন্দন’। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী শাহীন সামাদ, ফেরদৌস আরা, সালাউদ্দিন আহমেদ, সুজিত মোস্তফা, শহীদ কবির পলাশ, মফিজুর রহমান, ফারহানা ফেরদৌসী তানিয়া ও প্রিয়াংকা গোপ। এছাড়াও, সকালে অমর একুশে উপলক্ষে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন শিল্পী হাশেম খান।
 
যা থাকছে শনিবার
শুক্রবারের মতো শনিবারও থাকছে শিশুপ্রহর। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে হবে শিশুপ্রহর।
 
এছাড়া এদিন মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক জন্মশতর্ষ’ শীর্ষক আলোচনা সভা। এতে প্রবন্ধ পাঠ করবেন অধ্যাপক সল্লিমুল্লাহ খান। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে আলোচনা করবেন ড. আকবর আলী খান, ড. মীজানুর রহমান শেলী ও অধ্যাপক মেসবাহ কামাল।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৫

** সকালটা শিশুদের, বিকেলটা সবার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।