ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

রাজ্জাক স্যার ছিলেন জ্ঞানের সাধক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৫
রাজ্জাক স্যার ছিলেন জ্ঞানের সাধক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত

বইমেলা থেকে: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি বলেছেন, জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক স্যার ছিলেন জ্ঞানের সাধক, জ্ঞানের পূজারি।

শনিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ছয়টায় বাংলা একাডেমির বইমেলা প্রাঙ্গণে জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের জীবনীর ওপর আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।



গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে ‘জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক জন্মশতবর্ষ’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, তিনি আগাগোড়া একজন শিক্ষক ছিলেন। সব সময় মানুষকে সাহায্য করতেন। মানুষের ওপর বিশ্বাস ছিল অসম্ভব। তিনি আমার ক্লাসের শিক্ষক না হলেও ব্যক্তিগত শিক্ষক ছিলেন।

বাংলা একাডেমির ফেলো  অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ১৯৫৩ সালে এক বক্তব্য স্যার বলেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে শুধু রাষ্ট্রভাষার মর্যাদার দ্বন্দ্ব তা নয়, এ দুই প্রদেশের মানুষের জীবন ধারণ, সংস্কৃতি ও ভাবনার দ্বন্দ্ব রয়েছে। এগুলো দূর করা না গেলে দুই প্রদেশের একসঙ্গে থাকা সম্ভব নয়।

জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের অপ্রকাশিত নোট থেকে গবেষণার অনেক বিষয় আছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক শিক্ষক ও চিন্তক হিসেবে আমাদের মাঝে বহুকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। শিক্ষকতা ক্ষেত্রে তার অবদান যেমন এক সুদীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ছাত্র-ছাত্রী পরম্পরা সৃষ্টি করেছে তেমনি গবেষণাক্ষেত্রে তার বিচরণ ছিল নানা পরিসরে ব্যাপ্ত।

তিনি বলেন, পাণ্ডিত্যের সঙ্গে তার ব্যক্তিত্বের ঔদার্য ও বিনয় তাকে আর দশজনের চেয়ে আলাদা করেছিল। মানবকল্যাণকামী এই অসামান্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদের অপ্রকাশিত গবেষণা- সন্দর্ভ অতি দ্রুত প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন। জন্ম শতবর্ষে তার প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাবন্ধিক সলিমুল্লাহ খান। আলোচনা করেন ড. মিজানুর রহমান শেলী ও অধ্যাপক মেজবাহ কামাল।

প্রাবন্ধিক সলিমুল্লাহ খান বলেন, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক ছিলেন একজন বিরল বুদ্ধিজীবী। তার প্রকাশিত স্বল্প সংখ্যক রচনা এবং অপ্রকাশিত গবেষণা-সন্দর্ভ তাকে আমাদের কাছে বহুমাত্রিকভাবে উপস্থাপন করে। তিনি বাংলা ও ভারত অঞ্চলের ইতিহাসের গতিবিধি নির্ধারণে যেমন সত্যাসন্ধ দৃষ্টিতে গবেষণা করেছেন, তেমনি বাঙালি জাতির বিকাশ পদ্ধতি নিয়ে তার ভাবনাও ছিল মৌলিক।

আলোচকরা বলেন, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের মতো মনীষীরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চিন্তাভূমি নির্মাণে অনুঘটকের কাজ করেছেন। বিশেষত ঔপনিবেশিক বাস্তবতার উৎস অনুসন্ধান ও তা নিরসনের মধ্য দিয়ে একটি প্রকৃত স্বাধীন-গণতান্ত্রিক ও বহুত্ববাদী সমাজরাষ্ট্র নির্মাণে অনলস চিন্তা করেছেন। সঙ্গত কারণে বঙ্গবন্ধু তাকে ‘জাতীয় অধ্যাপক’ পদে বরিত করেছিলেন।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সিদ্দিকুর রহমান পারভেজের পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র’-এর শিল্পীরা আবৃত্তি পরিবেশন করেন। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী অরূপ রতন চৌধুরী, নীলোৎপল সাধ্য, শাহনাজ নাসরীন ইলা, ছায়া রাণী কর্মকার, সুস্মিতা আহমেদ, পল্লব গোমেজ, শাহনাজ পারভীন এবং শাহিন আকতার পাপিয়া। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন রাজু চৌধুরী (তবলা), হোসেন আলী (বাঁশি), আনোয়ার সাহাদাত রবিন (কি-বোর্ড), মো. ফারুক (প্যাড) এবং এনামুল হক (গিটার)।

এর আগে সকাল সাড়ে ৮টায় অমর একুশে উদযাপন উপলক্ষে সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। প্রতিযোগিতায় ক শাখার সাধারণ জ্ঞান বিভাগে ৮০ জন প্রতিযোগী এবং খ শাখার উপস্থিত বক্তৃতা বিভাগে ১৭ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে।

প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। এতে বিচারক ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব খায়রুল আলম সবুজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ, বাংলা একাডেমির পরিচালক মোবারক হোসেন এবং উপ-পরিচালক মুর্শিদুদ্দিন আহম্মদ।

শনিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার ৭ম দিন। মেলায় এদিন নতুন বই এসেছে ১৯৮টি এবং ১০টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়।    

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।