ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

এখনও হুমায়ূন!

আসাদ জামান ও আবু তালহা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৫
এখনও হুমায়ূন! ছবি: জাহিদ সাইমন/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বই মেলা থেকে: অকাল প্রয়াত নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ আর ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ একে অপরের পরিপূরক। তাই মরণব্যাধি ক্যান্সারের কাছে পরাজিত হয়ে ইহলোক ছেড়ে দেড় বছর আগে সুরলোকে চলে গেলেও পাঠকের হৃদয়ে তার নিত্য আসা-যাওয়া।

বই মেলায়ও তিনি আছেন আগের মতোই।
 
গত কয়েক দশক ধরে মেলায় আসা পাঠক ও দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এই ক্ষণজন্মা পুরুষের সৃষ্টি সম্ভার এবারের মেলাতেও একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। উৎসুক পাঠক বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম মেলায় ঢুকেই খোঁজ করছেন হুমায়ূন আহমেদের বই।
 
বই পড়ে যারা আনন্দ পেতে চান অথবা বিনোদিত হতে চান, তাদের কাছে এখনও হুমায়ূন আহমেদই প্রথম পছন্দ। সাধারণ ও মধ্যবিত্ত পাঠক এখনও হুমায়ূনের বিকল্প হিসেবে কাউকে গ্রহণ করতে পারেননি।
 
রোববার (০৮ ফেব্রুয়ারি) বইমেলায়র সোহরাওয়ার্দী অংশে ঢুকে দেখা যায় হুমায়ূন আহমেদের সর্বাধিক বইয়ের প্রকাশনী ‘অন্য প্রকাশ’র প্যাভিলিয়নে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। সবারই আগ্রহ অকাল প্রায়ত হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের প্রতি।
 
কথা হয় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে ছোট মেয়ে রাইদাকে নিয়ে মেলায় আসা সাবিনা বেগমের সঙ্গে। পেশায় গৃহিণী সাবিনা বেগম হুমায়ূন আহমেদের ‘লীলাবতি’ বইটি কিনে বাড়ি ফিরছিলেন।
 
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদের বেশিরভাগ বই-ই আমার সংগ্রহে আছে। আজ লীলাবতি কিনলাম। বই পড়ে আনন্দ পেতে চাইলে হুমায়ূন আহমেদকেই সবার আগে বেছে নিতে হয়।
 
এ বিষয়ে অন্য প্রকাশের ম্যানেজার সানাউল কবির চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এবারের মেলায় হুমায়ূন আহমেদের ‘দেয়াল’, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ এবং ‘মধ্যাহ্ন’ বই তিনটি মেলায় বেশি বিক্রি হচ্ছে।
 
এ ছাড়া হুমায়ূন আহমেদের ‘হিজিবিজি’ ও ‘লীলাবতির মৃত্যু’ বই দুটিও সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকার ওপরের দিকে আছে।
 
২০১৩ সালের জুলাইয়ে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর আশঙ্কা করা হয়েছিল পাঠক নন্দিত এই লেখকের অবর্তমানে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় পাঠক-দর্শনার্থীর ভাটা পড়বে।
 
কিন্তু এরপর ২০১৪ ও ২০১৫’র বই মেলায় সেই প্রভাবটা আপাতত পড়েনি। কারণ, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর ২০১৪’র বই মেলায় আসা ‘দেয়াল’ ‘হিজিবিজি’ ও ‘লীলাবতির মৃত্যু’ এখনও বইয়ের বাজার ধরে রেখেছে।
 
অন্বেষা প্রকাশন’র স্টল ইনচার্জ মো. আল আব্দুল্লাহ হিমেল বাংলানিউজকে বলেন, যারা নতুন পাঠক তারা এখনও হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে। মেলায় এসে তারা তারই বই-ই খোঁজে।
 
এদিকে, বরাবরের মতো এবারও হমায়ূনের বইয়ের অন্যতম প্রকাশনী ‘অন্যপ্রকাশ’ তাদের প্যাভিলিয়ন সাজিয়েছে ‘হুমায়ূন আবহে’।
 
বই মেলার সোরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে নান্দনিক সজ্জায় সজ্জিত অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়নের ওপরে শোভা পাচ্ছেন হুমায়ূন আহমেদের আবক্ষ একটি আলোচিত্র। অনেক দূর থেকেও পাঠক ও দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের এই আলোকচিত্রটি।
 
প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখা যায়, প্যাভিলিয়নের মোট জায়াগার অর্ধেক জুড়েই রয়েছে হুমায়ূন আহমেদের বই। বেঁচা-কেনা যা হচ্ছে তার বেশিরভাগই হুমায়ূনের উপন্যাস ছোট, গল্প বা সায়েন্স ফিকশন।
 
এছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায় থাকা হুমায়ূন আহমেদের কালজয়ী সৃষ্টি ‘হিমু’ ‘মিসির আলী’ ও ‘শুভ্র’ সিরিজের বইগুলো পাঠক টানছে আগের মতোই।
 
‘নন্দিত নরকে’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, আগুনের পরশমনি, শ্যামল ছায়া, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ‘দুই দুয়ারি’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘রজনী’, গৌরিপুর জংশন’, ‘অয়োময়’, ‘দূরে কোথাও’, ‘ফেরা’, ‘বাদশা নামদার, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘আমার আছে জল’, ‘অচিনপুর’, ‘এইসব দিনরাত্রি’সহ হুমায়ূন আহমেদের আরও প্রায় দুই শতাধিক বই অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়নে শোভা পাচ্ছে।
 
মেলার অন্য অভিজাত প্রকাশনীর স্টলগুলোতেও হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের সমারোহ চোখে পড়ার মতো। পাঠকের আগ্রহের কেন্দ্র-বিন্দুতেও রয়েছে হুমায়ূনের বই।
 
সুতরাং বলাই যায় দেড় বছর আগে অন্তহীন গন্তব্যে যাত্রা করলেও এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আগের মতোই আছেন আধুনিক বাংলাসাহিত্যের ক্ষণজন্মা পুরুষ হুমায়ূন আহমেদ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৫

** বইমেলা যেন জয়নুলের আঁকা ‘নবান্ন’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।