বই মেলা থেকে: শেষ বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেন আচমকা উড়ে এলো একটি কোকিল। মেলা প্রাঙ্গণের পাশে একটি গাছের ডালে আপন মনে ডাকছিলে যান্ত্রিক নগরে আসা এ পাখি।
থেমে থেমে সুর তুলে একটু পরই হারিয়ে যায় কোকিল। তবে জানিয়ে দিয়ে গেছে, বসন্ত খুব কাছেই। ফাল্গুনের আরও চারদিন বাকি থাকলেও মেলায় লেগেছে যেনে বসন্তের হাওয়া। লেখক-পাঠক-প্রকাশকরাও যেন অপেক্ষায় এ ঋতুর।
রোববার (০৮ ফেব্রুয়ারি) মেলা ঘুরে দেখা গেছে, হরতাল-অবরোধ উপেক্ষা করেই অনেকেই এসেছেন অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। তবে লোক সমাগমের দিক থেকে তা যে শুক্র-শনিবারের মেলার মতো ছিল তা নয়।
এদিন মেলায় যারা এসেছেন তাদের অনেকের হাতেই বই দেখা গেছে। কেউ কেউ স্টল থেকে বইয়ের তালিকা সংগ্রহ করেছেন পরে বই কিনবেন এই ভেবে।
প্রকাশকরা জানিয়েছেন, বইমেলার ৮ দিনে তুলনামূলক বেশি বই বিক্রি হয়েছে গত শুক্র ও শনিবারে। রোববার হরতাল হওয়ায় এদিনে যা বিক্রি হয়েছে তাতেই খুশি কোনো কোনো প্রকাশক। তবে এদিন সব প্রকাশকের মুখেই যে হাসি ছিল তা কিন্তু নয়।
রোদেলা প্রকাশনীর প্রকাশক রিয়াজ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ছুটির দিন এবং বিশেষ দিনগুলোতে সব স্টলেই বই বিক্রি হয়। এছাড়া অন্যান্য দিন এক স্টলে একেক রকম বিক্রি হয়।
অষ্টম দিনে ১৩০ বই
রোববার সর্বমোট ১৩০টি নতুন বই এসেছে। এরমধ্যে উপন্যাস ২৩টি, গল্প ২০টি, কবিতা ৩৯টি, গবেষণা ৫টি, ছড়া ৪টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ১টি, নাটক ১টি, বিজ্ঞান বিষয়ক ৫টি, ভ্রমণকাহিনী ১টি, অনুবাদের বই ১টি এবং অন্যান্য বিষয়ের বই ৩০টি।
উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে- সুলেখা প্রকাশনী থেকে নির্মলেন্দু গুণের ‘প্রিয় নারী হারানো কবিতা’, কালান্তর প্রকাশনী থেকে আসাদ চৌধুরীর ‘বৃষ্টির সংসারে আমি কেউ নই’, ফররুখ আহমদের ‘হে বন্য স্বপ্নেরা’, যুক্ত পাবলিকেশন্স থেকে ঝর্না রহমানের ‘সবুজ ডানার দেবদূত’, উৎস প্রকাশন থেকে হাসান হাফিজের ‘স্মৃতি শুধুই বেদনা’, শাকুর মজিদের ‘অন্নপূর্ণায়’, আহমদ পাবলিশিং হাউজ থেকে ড. আনু মাহমুদের ‘রবীন্দ্রনাথের বিদেশিরা’, অ্যাডর্ন থেকে হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘জাপানের সংস্কৃতি’, আগামী প্রকাশনী থেকে আহমদ শরীফের ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চলচ্চিত্র’, নান্দনিক থেকে আনোয়ারা সৈয়দ হকের ‘গুঞ্জরি পঞ্জম’, নন্দিতা প্রকাশ থেকে আঞ্জুমান রোজীর ‘নৈঃশব্দের দুয়ারে দাঁড়িয়ে’, অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে রহিমা আফরোজ মুন্নীর ‘উড্ডীন নদীর গান’, মৌ প্রকাশনী থেকে শেখ লুৎফর রহমানের ‘ছন্দে ছন্দে বঙ্গবন্ধুর জীবন আলেখ্য’ প্রভৃতি।
রোববার বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে মোট ৮টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে।
বাংলা একাডেমির বিক্রি ২২ লাখ ৬১ হাজার টাকা
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানা যায়, মেলার প্রথম সপ্তাহে (১ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলা একাডেমির নিজস্ব স্টলে বিক্রি হয়েছে ২২ লাখ ৬১ হাজার ৩৬ টাকা।
মূলমঞ্চের আয়োজন
বিকেলে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন জন্মশতবর্ষ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিল্প-সমালোচক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক এবং অধ্যাপক নিসার হোসেন। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, জয়নুল আবেদিন ভারতীয় উপমহাদেশের বিস্ময়কর শিল্প-প্রতিভা, এ সত্য উন্মোচিত হয়েছিল তার বয়স যখন ২৯, তার আঁকা ১৯৪৩-এর বাংলার দুর্ভিক্ষ চিত্রমালার মাধ্যমে। অবশ্য তার কিছু আগে থেকেই তিনি একজন প্রতিভাবান দক্ষ চিত্রশিল্পী হিসেবে সর্বভারতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন।
আলোচকবৃন্দ বলেন, জয়নুল আবেদিন ছিলেন একজন বিরল শিল্পী মানুষ। তাকে শুধু দুর্ভিক্ষের ছবির চিত্রকর হিসেবে মূল্যায়ন করলে খণ্ডিতভাবে দেখা হবে। জন্মশতবর্ষে শিল্পানুরাগী মানুষসহ সাধারণ মানুষের বিপুল ভালোবাসা জয়নুল আবেদিনের সর্বত্রগামী শিল্পপ্রতিভার প্রমাণবহ।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর বলেন, জয়নুল আবেদিন ছিলেন একজন বড় মাপের শিল্পী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার ছবি আঁকার ধরনেও পরিবর্তন এসেছে। তিনি তার ছবির মাধ্যমে গণলগ্ন নন্দনের জন্ম দিয়েছেন। তার ছবির বিষয়বস্তু নিম্নবর্গের মানুষকে শিল্প-ক্ষমতাকেন্দ্রের মুখ্য আসনে বসায়। এই মহান শিল্পীর শিল্পকাজ নিয়ে নতুন দৃষ্টিতে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাজেদ ফাতেমীর পরিচালনায় ‘নকশি কাঁথা’ পরিবেশন করে লোকজ সংগীত।
সোমবারের (০৯ ফেব্রুয়ারি) আয়োজন
এদিন বইমেলার দুয়ার খুলবে বিকেল ৩টায়। চলবে রাত সাড়ে ৮টা পর্য্যন্ত। বিকেলে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে প্যারীচাঁদ মিত্রের দ্বিশততম জন্মশতবর্ষ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মোরশেদ শফিউল হাসান এবং মোহাম্মদ আজম। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক খোন্দকার সিরাজুল হক।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৫
** ‘ফেসবুক স্ট্যাটাসের কবিতারা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
** ডোরেমন ছাপিয়ে হাট্টিমাটিম
** এখনও হুমায়ূন!
** বইমেলা যেন জয়নুলের আঁকা ‘নবান্ন’