ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

দু’প্রাঙ্গণে মেলা, ক্লান্ত-বিভ্রান্ত পাঠক

আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৫
দু’প্রাঙ্গণে মেলা, ক্লান্ত-বিভ্রান্ত পাঠক দিপু / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা থেকে: দু’বছর আগেও অমর একুশে গ্রন্থমেলার ঠিকানা ছিলো বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। বছরের পর বছর মেলার ঠিকানা ছিলো একটিই।

গতবছর থেকে প্রাণের এ মেলা দ্বিখণ্ডিত।
 
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি- দু’প্রাঙ্গণে এবারও চলছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। মেলায় আগতদের দাবি, দু’প্রাঙ্গণে মেলা হওয়ায় তারা ক্লান্ত ও বিভ্রান্ত। প্রকাশকদেরও অনেকেই এতে অসন্তুষ্ট।
 
তাদের ভাষায়, মেলায় আগতদের কেউ বাংলা একাডেমিতে এলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসছেন না, আবার উদ্যানে এলে একাডেমি প্রাঙ্গণে ঢুকছেন না। কেউ কেউ জানেও না। আবার কেউ এক জায়গায় ঘুরে ক্লান্ত হয়ে আরেক জায়গায় যাচ্ছেন না। এতে মেলায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
 
ধানমন্ডি থেকে স্ত্রীকে নিয়ে বইমেলায় আসা তানভিরুল হকের সঙ্গে সোমবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কথা হয় বাংলা একাডেমি প্রবেশ মুখের সামনে।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, গতবছর মেলায় আসিনি ব্যস্ততার কারণে। আমরা জানতাম না যে বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও হচ্ছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুধু বাচ্চাদের বই দেখে তথ্য কেন্দ্রে জিজ্ঞাস করতেই জানলাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও মেলা চলছে।
 
তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় কিছু বই দরকার তাই উদ্যানে যাবো তবে বিরক্ত লাগছে।
 
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বই কিনে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে না গিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফৌজিয়া আক্তার ও তার বন্ধুরা।
 
একাডেমি প্রাঙ্গণে যাবেন না বলতেই বললেন, কেন? মেলাতো এবার নাকি এখানেই (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)।
 
জানার পরও তারা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে যাওয়ার আগ্রহ দেখালেন না। বললেন, উদ্যানে অনেক ঘুরেছি। আর ওদিকে যাবো না।
 
ফৌজিয়ার সঙ্গে থাকা মাঈশা মারজিয়া বলেন, এক জায়গায় মেলা হওয়াটাই সুন্দর। এই যেমন এখন শুনে খারাপ লাগছে যে, মেলা বাংলা একাডেমিতেও হচ্ছে। ক্লান্ত হয়ে মেলায় গিয়েতো আর মজা পাওয়া যায় না।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেই বইমেলা সুন্দর ছিলো। স্থান সংকুলানের কথা বলে মেলা দ্বিখণ্ডিত করা ঠিক হয়নি। এতে মেলার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।
 
তার ভাষায়, বইমেলা মানেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। যেখানে সারিবদ্ধভাবে মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রবেশ করবে।
 
তাম্রলিপি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী এ কে এম তারিকুল ইসলাম রনির মতে, সবগুলো প্রকাশনা সংস্থাকে এক জায়গায় রাখা উচিত। বইমেলা দু’স্থানে রাখায় বড় প্রকাশনাগুলো ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠিত একটি প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার বাংলানিউজকে বলেন, বাংলা একাডেমি দাবি করছে তারা মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বর্ধিত করেছে। এটা বাড়ানো নয়, খণ্ডন। বইমেলাকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে বাইরে নেওয়ায় এ মেলার ক্ষতি হচ্ছে। মানুষ এক জায়গায় গিয়ে আরেক জায়গায় যাচ্ছে না।
 
তিনি বলেন, বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশাপাশি বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে যে মেলা চলছে তাতে মৌলিক কোনো প্রকাশনা নেই। মিডিয়াগুলোও এখান থেকে সরাসরি সম্প্রচার করায় কেউ কেউ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণকেই মনে করছে বইমেলার মূল জায়গা। কার্যত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই মৌলিক প্রকাশনাগুলোর স্টল।
 
বইমেলা দু’স্থানে বাংলা একাডেমির কাছে এটি বিভক্ত নয় ‘বর্ধিতকরণ’। একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান গ্রন্থমেলার প্রথম দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এটা বিভক্ত হয়নি। বাংলা একাডেমি থেকে এটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বর্ধিত হয়েছে।
 
সোমবারের বইমেলা
সোমবার বইমেলার দু’প্রান্তেই খুব বেশি লোক সমাগম না দেখা গেলেও অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাণহীন বলা যাবে না। মেলায় যারা এসেছেন তাদের অনেকের হাতেই দেখা গেছে নতুন বই।
 
নবম দিনে ১২৯ বই
গ্রন্থমেলার নবম দিন সোমবার মোট ১২৯টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে উপন্যাস ১৭টি, গল্প ২১টি, কবিতার বই ৩৭টি, গবেষণা ৬টি, প্রবন্ধ ৯টি, ছড়া ২টি, জীবনী ৬টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ৩টি, ভ্রমণকাহিনী একটি, ইতিহাস বিষয়ক ২টি, কম্পিউটার বিষয়ক একটি, সায়েন্স ফিকশন ২টি এবং অন্যান্য ২১টি।

উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে- আগামী প্রকাশনী থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘সাদা কালো’, আহমদ শরীফের ‘প্রগতির বাধা ও পন্থা’, মিজান পাবলিশার্স থেকে রবীন্দ্র গোপের ‘মাধবী’, শিরীন পাবলিকেশন্স থেকে ড. আসাদুজ্জান খানের ‘বাংলাদেশের কথা সাহিত্য ভাষা আন্দোলনের চেতনা’, আজমাইন পাবলিকেশন্স থেকে আসাদ চৌধুরীর ‘বিত্ত নাই বেসাত নাই’, অনন্যা থেকে রাজীব মীরের ‘শুধু তোমার জন্য লিখি’, অন্যপ্রকাশ থেকে পূরবী বসুর ‘কিংবদন্তীর খনা ও খনার বচন’, ফারহানা হকের ‘অতঃপর হিরণ্ময়তা’, কথাপ্রকাশ থেকে বদরুদ্দীন উমরের ‘বাংলাদেশে ইতিহাস চর্চা’, ঐতিহ্য থেকে আনিফ রুবেদের ‘এসো মহাকালের মাদুরে শুয়ে পড়ি’, শুদ্ধস্বর থেকে মনিকা চক্রবর্তীর ‘যখন ভেসে এসেছিল সমুদ্র ঝিনুক’ প্রভৃতি।
মোড়ক উন্মোচন
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের নজরুল মঞ্চে সোমবার মোট সাতটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। সাবেক বিমানমন্ত্রী জি এম কাদের চারটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। সেগুলো হলো: এলিজা আজাদের ‘নীলাদ্রি’ ও ‘পড়শি’, আবদুল্লাহ আনসারীর ‘মধ্য শ্রাবণের চিঠি’ এবং আহাম্মদ কবীরের ‘নিশিথে নোঙর’, ইন্দজিৎ সরকারের ‘স্বর্ণমূর্তি উধাও রহস্য’ প্রভৃতি।
 
মূলমঞ্চের আয়োজন
গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় প্যারীচাঁদ মিত্রের দ্বিশতজন্মবর্ষ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। আলোচনায় অংশ নেন ড. আমিনুর রহমান সুলতান এবং ড. মোহাম্মদ আজম। সভাপতিত্ব করেন মোরশেদ শফিউল হাসান।
 
মঙ্গলবারের অনুষ্ঠান
মঙ্গলবার বিকেলে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের নব্বইতম জন্মবর্ষ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। আলোচনায় অংশ নেবেন  ড. মুহাম্মদ সামাদ, অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম এবং ড. এম. অহিদুজ্জামান। সভাপতিত্ব করবেন কমরেড অজয় রায়।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৫

** একুশ এলেই হৃদয় দোলে
** স্টলে মন্ত্রী তাই…

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।