বইমেলা থেকে: দুপুরের মৃদু দক্ষিণা বাতাসই জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তা। গাছে গাছে মরে যাওয়া শেষ পাতাগুলো ঝরে যাওয়ার অপেক্ষায়।
প্রায় আধা কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে মঙ্গলবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে বাংলা একাডেমির মূল দরজায় পৌঁছাতেই চোখে পড়ল মানুষের দীর্ঘ সারি।
কিছুটা অবাক হলাম! আজ তো সরকারি ছুটির দিন নয়, কোনো জাতীয় দিবসও নয়, তার পরও এত আগে-ভাগে পাঠক-দর্শনার্থীদের ভিড় কেন?
মনের গভীর থেকে কে যেন উত্তর দিলো, এ যে জ্ঞানের পসরায় পিপাসু পাঠকের ভিড়! এই ভিড়ের জন্য ছুটির দিন বা জাতীয় দিবসের প্রয়োজন হয় না।
মেলার দরজায় দাঁড়িয়ে কথা হয় রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী থেকে আসা গৃহিণী শান্তনা চৌধুরীর সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এবারের মেলায় দর্শনার্থীর চেয়ে ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি মনে হচ্ছে। যারা মেলায় আসছেন, তারা সবাই অন্তত একটি বই কিনছেন। এর একটি বড় কারণ হতে পারে বইয়ের মান। এবারের মেলায় আসা বইগুলোর প্রচ্ছদ এবং কাগজের মান আগের তুলনায় অনেক উন্নত। যে কারণে বই হাতে নিলে না কিনে ফেরা যাচ্ছে না।
মুগদা থেকে মেলায় এসেছেন রেজা। তিনি জানান, মেলায় এসে খুবই ভালো লাগছে, প্রতি বছরই আসি। এবার মেলার পরিধি অনেক বেড়েছে। ইচ্ছে মতো ঘুরে বেরিয়ে, দেখে-শুনে বই কেনা যাচ্ছে।
ধানমণ্ডি থেকে মেলায় আসা সন্দীপ পাল বলেন, আজকের দিনটাসহ বেশ কয়েকবার মেলায় এসেছি। এবারের মেলায় মূল মঞ্চের আয়োজন ভালো লাগছে।
এদিকে, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলা বাংলা ভাষার সবচেয়ে বড় উৎসব অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রতি দিনের মতো মঙ্গলবারও শুরু হয়েছে বিকাল ৩ টায়।
কিন্তু এর আগেই টিএসসি চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও মেলা প্রাঙ্গণের বাইরে লেখক-পাঠক-দর্শনার্থীদের আড্ডা জমে যায়। অপেক্ষা কখন খুলবে মেলার দরজা!
ঠিক তিনটায় মেলার দুয়ার উন্মুক্ত হওয়ার পরেই লাইন ধরে মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন বিভিন্ন বয়সী পাঠক।
এদিকে দুই অংশে ভাগ হওয়ার কারণে মেলায় প্রথম আসা পাঠক দর্শনার্থীরা পড়েছেন বিভ্রান্তিতে। বাংলা একাডেমি চত্বরে ঢোকার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন দর্শনার্থী এ প্রতিবেদককে জিজ্ঞাসা করেন- ‘ভাই মেইন মেলা কোনটি?’
বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকছে অন্যান্য দিনের মতোই নির্ধারিত আয়োজন। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের নব্বইতম জন্মবর্ষ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ড. মুহাম্মদ সামাদ, অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম এবং ড. এম. অহিদুজ্জামান। সভাপতিত্ব করবেন কমরেড অজয় রায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০,২০১৫