বইমেলা থেকে: ধরুন, এই মাত্র সূর্য অস্ত গেলো। আপনি বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ঢুকছেন।
অথবা সাবেক প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ‘যথাশব্দ’ বইয়ের পেট থেকে বেরিয়ে আসছে জলজ্যান্ত মানুষ।
অথবা খ্যাতিমান কথাশিল্পী শওকত আলীর কালজয়ী উপন্যাস ‘প্রদেষে প্রাকৃতজন’-এর পেটের মধ্যে ঢুকে পড়ছে কৌতূহলী পাঠক। তখন লাগবে কেমন?
অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রান্তে বইয়ের অনুকৃতি দিয়ে সাজানো ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা সংস্থা ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)-এর প্যাভিলিয়ন নিজের চোখে না দেখলে ‘কেমন লাগার বিষয়টি’ অনুধাবন করা যাবে না।
শৈল্পিক বুননে নান্দনিক এই প্যাভিলিয়নটি এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় নন্দনপিপাসু পাঠক ও দর্শনার্থীদের জন্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাই দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা সংস্থা ইউপিএল-এর এই প্যাভিলিয়নটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছে কৌতূহলী পাঠক।
এবার মেলায় ৩৫১টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৬৫টি ইউনিট স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯২টি প্রতিষ্ঠানকে ১২৮টি ইউনিট এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৫৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৪৩৭টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এবারই প্রথম বাংলা একাডেমিসহ ১১টি প্রকাশনীকে প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই ১১টি প্যাভিলিয়নের মধ্যে একটি পেয়েছে ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা সংস্থা ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)।
বুধবার মেলায় গিয়ে প্যাভিলিয়নটির নির্মাণশৈলীর খুঁটি-নাটি পরখ করে দেখা যায় মঈদুল হাসানের ‘মূলধারা ৭১’ শওকত আলীর ‘প্রদেষে প্রাকৃতজন’ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘বাঙালির জাতীয়তাবাদ’, আকবর আলি খানের ‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’ আলফ্রেড গিয়োমের ‘ইসলাম’, হাসনাত আব্দুল হাইয়ের ‘সুলতান’, দ্বিজেন শর্মার ‘নিসর্গ, নির্মাণ ও নান্দনিক ভাবনা’, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই, নাজিমুদ্দীন আহমেদ’র ‘মৃত্যুদণ্ড’ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ‘যথাশব্দ’সহ বেশকিছু ইংরেজি ভাষার বইয়ের অনুকৃতি দিয়ে সাজানো হয়েছে ইউপিএলের বইয়ের দোকান।
এর নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ইট, বালু, সিমেন্ট, কাঠ, কাঠের বোর্ড, লিয়ন পেপার, ডিজিটাল লিয়ন সাইন, ককসিট, মোটা কাগজসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী।
প্যাভিলিয়নের বাইরের দেওয়াল জুড়ে লাগানো হয়েছে গত চার দশকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইউপিএলের অর্জনগুলোর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সম্বলিত ডিজিটাল ব্যানার। দশকওয়ারী অর্জনগুলোর আলোচিত্রসহ বিখ্যাত ও উল্লেখযোগ্য বইগুলোর প্রচ্ছদও রয়েছে ওইসব ব্যানারে।
বাংলা একাডেমির কাছ থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকায় বরাদ্দ পাওয়া এই প্যাভিলিয়ন কেবল বাইরের নান্দনিতায়-ই নয়, ভেতরের সাজসজ্জাও পাঠকের মন কেড়েছে।
বইয়ের বুক চিরে ভেতরে প্রবেশের জন্য রাখা হয়েচে ছোট্ট দু’টি দরজা। উত্তরে দিকে রাখা হয়েছে প্রায় দরজার সমান আকৃতির দু’টি জানালা।
ইউপিএলের প্রকাশক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ অসুস্থ শরীর নিয়ে প্রতিদিনই এসে বসছেন এই জানালার পাশে।
প্যাভিলিয়নের ‘নকশা ভাবনা’ (ডিজাইন আইডিয়া) সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাইলে এ প্রতিবেদককে তিনি ইউপিএলের মার্কেটিং অ্যান্ড বিজনেস ডেভোলপমেন্ট ডিরেক্টর মাহরুখ মহিউদ্দিনের ভিজিটিং কার্ড দিয়ে বলেন, ‘‘ও আমার মেয়ে। ওই এসব ব্যাপারে ভালো বলতে পারবে। ওকে ফোন দিন। ’’
পরে মাহরুখ মহিউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাংলানিউজকে তিনি জানান, প্যাভিলিয়ন নিয়ে পুরো পরিকল্পনাটাই ছিলো তার। আর এর ডিজাইন করেছেন মোস্তফা আমিন ও তানিসা আমিন।
এ ছাড়া প্যাভিলিয়নটি নান্দনিকভাবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন নিলয় হোসেন-জানান মাহরুখ মহিউদ্দিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫
** মেলায় ‘তোমার সঙ্গে বহুদূর’