ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

রিভিউ

মোহাম্মদ মামুনুর রশীদের ধীর সুর বিলম্বিত ব্যথা

আদিত্য আরাফাত | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫
মোহাম্মদ মামুনুর রশীদের ধীর সুর বিলম্বিত ব্যথা

উঁচুমার্গীয় কবিতা লিখেও অনেকটা নিভৃতচারী হয়ে আছেন মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ। সর্বশেষ তার ‘ধীর সুর বিলম্বিত ব্যথা’ বইয়ে তুলে ধরেছেন ৪০টি কবিতা।

সবগুলো কবিতাই শিল্পমানসম্মত এবং কবিতার পাঠকের নতুন স্বাদ জোগাবে।

কবিতাগুলোতে পরিচয় দিয়েছেন চিন্তার জগতে তিনি কত ঊর্ধগামী। নিজেকে ঋদ্ধ করেছেন প্রতিটি কবিতায়। গতানুগতিকতার বাইরে যে তার ভাবনা—তা বইয়ের শুরুতেই অনুধাবন করা গেছে।

নির্দিষ্ট কাউকে উৎসর্গ না করে সূচিপত্রের আগেই লিখেছেন—

নিমগ্ন নিসর্গ নিয়ে এভাবেই জখম জমেছে
আমাদের আয়োজনে, কবি আমি তাই জমা রাখি
কথকতা, স্নান ঘর, প্রশ্ন করি কখন থেমেছে
দিনান্তের দিকে চলা, কে হয়েছে শেষাবদি বাকি?

বইয়ের উৎসর্গের স্থানে এভাবেই লিখে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি স্বাভাবিকতার বাইরে।

সম্ভাবনার ছায়া কবিতায় তিনি বলেছেন—

কোথাও ছাড়া পড়ে না আমার। আশ্চর্য!
আয়নায়, পানিতে—কোনখানে প্রতিবিম্ব নেই
ক্যানো যে হঠাৎ এরকম হলো—
রক্তের ভিতরদিককার পোশাকটা খসে পড়লে
এরকমই হয়, মনে হয়। আমি এখন সম্পূর্ণতই নগ্ন
আত্মার দিক থেকে। আমি এখন মমতার মূল,
নৃতত্ত্বের নিগূঢ়তা—উপমাবিহীন।
মুখহীন। অবয়বহীন।
আত্মার তো কোনও ছায়া থাকে না। আমি এখন
আত্মার ছায়াহীনতা।

এভাবে কবি শব্দ অলঙ্কারে তুলে ধরেছেন নিজেকে। প্রতিটি কবিতাই পাঠকের বোধের দরজা কড়া নেড়ে যায়। পাঠক সহজ শব্দে নিজের ভাবনায় চলে যেতে পারবেন প্রতিটি কবিতার গভীরে।

‘পৃথক প্রান্তরে এসে’ কবিতায় বলেছেন—

এ ক্যামন দৃষ্টির অতিরিক্ত প্রান্তর
চলা যায় না। দাঁড়ানোও যায় না
জ্যোৎস্না, কুয়াশা, নক্ষত্র কোনও কিছুই দৃষ্টিবদ্ধ নয়
অন্ধকারকে পাওয়া যায় না। আলোও অনুপস্থিত।
দ্যাখার ক্ষমতা জুড়ে নুয়ে আছে রহস্যের ডাল
প্রতিটি পাতায় তার নির্বাক মুগ্ধতা আর হতবুদ্ধি
অসংযতি, অসংহতি, উপায়বিহীনতা ইত্যাদি।

বইটিতে পাঠককে প্রথম কবিতা থেকে শেষ কবিতা পড়ানোর মতে মুন্সিয়ানা দেখাতে পেরেছেন কবি। তার কবিতায় রয়েছে প্রেম-দ্রোহ-ভালোবাসা, স্বপ্ন-পূরাণসহ আরও অনেক বিষয়। রয়েছে বিনম্র আশ্বাসের কথা; যেখানে বিহঙ্গ বাধাহীনভাবে উড়ে বেড়ায়, কোনও নিষেধাজ্ঞা মানে না। সে একজনেরই থাকে চিরকাল। মানুষ বাধার মধ্যে বাস করে চিরকাল। কোনও মুহূর্তেই তার নিশ্চিন্ততা নেই। তবে মেঘলোকে এবং আকাশে যে বিহঙ্গ ঘুরে বেড়ায় তার কোনও বন্ধন নেই। সে সজীবতায় নিষ্কলুষ এবং বাধা-বন্ধনহীন।

জল রং প্রকাশনা থেকে বের হওয়া বইটির পরিবেশক সূচিপত্র। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বইটি সূচিপত্রের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন সাবৃনা। দাম একশ টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।