বইমেলা থেকে: ‘আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়...’। অথবা ‘হে কবি নীরব কেন, ফাগুন যে এসেছে ধরায়।
হ্যাঁ, বসন্তকে বরণ করতে ছুটির দিন শুক্রবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই অমর একুশে বইমেলার বাংলা একাডেমি চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রান্তে তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরীদের ভিড়। চারদিকে সাজ-সাজ রব। যেদিক দৃষ্টি যেদিকেই কেবল বাসন্তী রং। এ যেন বাসন্তী প্রহর!
এদিন বেলা ১১টায় মেলার দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এসময় শিশুদের পদচারণায় মুখরিত হয় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। অন্য অংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেখা যায় যুগল বইপ্রেমীদের।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা একাডেমি চত্বরে কানায় কানায় পূর্ণ হয়। পুকুর পাড়ে জমে ওঠে তরুণ-তরুণীদের আড্ডা। বাসন্তী রঙের শাড়ি, হলুদ রঙের সালোর-কামিজ, মাথায় ফুলের টায়রা, খোঁপায় গোঁজা হরেক রকম ফুল, গলায় ফুলের মালা, চুলের বেণীতে ঝুলানো ফুলের ঝালর তরুণীদের করেছে অনন্য অসাধারণ।
তরুণরাও কম যাননি। হলুদ রঙের পাঞ্জাবি, ফতুয়া, কোর্তা, পাগড়ি-গামছায় তারাও সেজেছে বেশ। সঙ্গে থাকা তরুণীর পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে নিজের পোশাকটাও মোহনীয় করতে চেষ্টার কমতি নেই উচ্ছ্বল তরুণদের।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপ হয় রাজধানীর আদাবর থেকে বইমেলায় আসা কাকলীর। তিনিও সেজেছেন ফুলের টায়রা পরে। পরনে জড়িয়েছেন হলুদ পেড়ে শাড়ি। হাতে রঙিন চুড়ি।
তিনি বলেন, ছোটবেলাটা কেটেছে দিনাজপুরে। সেখানে থাকতে কখনো মনে হয়নি ‘বসন্ত বরণ’ একটা উৎসব। এদিন এত আয়োজন করা যেতে পারে। কিন্তু গাছে গাছে শিমুল-পলাশ ফুটতো, প্রকৃতির যে পরিবর্তন তা চোখে পড়তো। ঢাকায় আসার পরে প্রথম বসন্তকে আলাদাভাবে উপলব্ধি করি। বাসন্তী রঙা শাড়ি, চুড়ি, মাথায় ফুলের টায়রা, চারদিকে সাজ-সাজ রব, দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।
বসন্ত আমাদের শেখায় নতুন করে শুরু করতে, প্রকৃতির মতো নিজেকে ভেঙে গড়তে। এটা আমাদের উৎসব, আর বইমেলা তাতে নতুন মাত্রা যোগ করে। যারা বই পড়তে ভালোবাসেন ফেব্রুয়ারির এক মাস তাদের জন্য ভিন্ন মাত্রা নিয়ে আসে। কত লেখকদের নতুন নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়, তাদেরও নিশ্চয়ই ভালো লাগে এবং সে ভালো লাগার মাত্রা হয়তো অনেক বেশি! কারণ নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হলে পাঠক হিসেবেই আমার ভালা লাগে। বলেন মাদারীপুর থেকে মেলায় আসা কলেজ শিক্ষক শীলা রানী মণ্ডল।
সিদ্ধেশ্বরী থেকে এসেছেন নৃত্যশিল্পী সুব্রত। তার মতে, বসন্ত ঋতুরাজ। বাংলা সংস্কৃতি মূলত ঋতু নির্ভর। যুগ যুগ ধরে বাঙালিরা বাংলা মাসের দিনক্ষণ হিসাব করে উৎসব পালন করে আসছে। বসন্তবরণের এই রীতি আমাদের নতুন নয়।
সঙ্গীত-নৃত্যেও ঋতু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেবল ঋতুই নয়, সময় অনুযায়ী সঙ্গীত ও নৃত্য চর্চায় পরিবর্তন আসে। বইমেলা ও বসন্ত একটি অন্যটির সঙ্গে সংযুক্ত। এই দুই-ই আমাদের উৎসব। কিছুক্ষণ আগে চারুকলা প্রাঙ্গণে আমার পরিবেশনা ছিল। শাহবাগ থেকে বইমেলা ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় ভুলে আজ মানুষ একত্রিত হয়েছে, এ কেবল বসন্ত এবং বইমেলাতেই সম্ভব, বাঙালিরাই পারে-বলেন সুব্রত।
আইইউবি প্রথম বর্ষের ছাত্র ফারহান ফারদিন। তিনি এসেছেন খিলগাঁও থেকে। ফারদীন জানান, গত তিন বছর থেকে বইমেলায় আসছি আমি। বসন্তে সব বন্ধুরা একত্রিত হই। বইমেলায় যেমন আনন্দ হয়, ঢাকায় অন্য কোথাও এত আনন্দ হয় না। ১৩ এবং ১৪ তারিখ অনেক ভাল ভাল বই মেলায় আসে। প্রথম দিন একটা বই কিনেছিলাম, আজ একটা কিনলাম। সন্ধ্যায় আরো কিছু বই কিনতে পারি।
ফাগুনের আগুন লাগা দিনে মেলায় আসা পাঠক ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে মেলা প্রাঙ্গণ টই-টম্বুর। বই বিক্রিও অন্য দিনের চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৫