অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-য় এসেছে মুক্তিযুদ্ধের তরুণ গবেষক সালেক খোকনের তথ্যবহুল দুটি বই। একটি—মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ এবং অপরটি—আদিবাসী সংস্কৃতি নিয়ে ‘আদিবাসী উৎসব’।
যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য
মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে প্রধান ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গভীর আত্মত্যাগ, অবিশ্বাস্য সাহস, বীরত্ব এবং বিশাল এক অর্জনের ইতিহাস। যখন কেউ এই ইতিহাসের কথা জানবেন, তখন যাঁরা এ স্বাধীনতা এনেছেন, সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা ভেবে গর্বে তার বুক ভরে উঠবে। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যাঁরা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কিংবা স্বাধীনতার জন্য হারিয়েছেন নিজের অঙ্গটি তেমনি ১৪জন প্রান্তিক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার জীবনের শ্রেষ্ঠ ও বিস্ময়কর অভিজ্ঞতার বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে এ গ্রন্থটিতে।
পাশাপাশি লেখক তাঁদের ভাষ্য থেকে বের করে এনেছেন দেশের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা, কষ্টের অনুভূতি ও পরবর্তী প্রজম্মের প্রতি আশাবাদ আর স্বপ্নগুলোকে। গ্রন্থটিতে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাষ্য থেকে তুলে আনা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের আত্মত্যাগের রক্তাক্ত কাহিনি, পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর অত্যাচার এবং মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনাপ্রবাহ। পাশাপাশি যুদ্ধাহতরা অকপটে তুলে ধরেছেন স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পরের দেশ নিয়ে তাঁদের ভাবনাগুলোকে।
উঠে এসেছে তাঁদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের কথা, সাধারণ ক্ষমা, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড, দালাল আইন বাতিল হওয়া, স্বাধীন দেশে রাজাকারদের রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রী বনে যাওয়া, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তরুণ প্রজন্মের জেগে ওঠা এবং তাদের প্রত্যাশিত বাংলাদেশের কথাগুলো। প্রায় প্রত্যেক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা অকাট্য আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পরবর্তী প্রজম্মের প্রতি। দেশ নিয়ে তাঁরা তাঁদের স্বপ্নের কথাগুলোও বলেছেন তাদের উদ্দেশেই। গ্রন্থটিতে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেসব কথা উপস্থাপন করা হয়েছে সরল গদ্যে, একেবারে গল্পের মত করে।
মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কিংবা স্বাধীনতার জন্য হারিয়েছেন নিজের অঙ্গটি তাঁদের জীবনের শ্রেষ্ঠ ও বিস্ময়কর অভিজ্ঞতার কথা নিয়ে গত দু’বছরে প্রকাশিত হয়েছে দুটি গ্রন্থ-রক্তে রাঙা একাত্তর ও যুদ্ধাহতের ভাষ্য। তারই ধারাবাহিকতায় এবার প্রকাশিত হলো যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য গ্রন্থটি।
‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটিতে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের বয়ান, আলোকচিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্যগুলো মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে অনন্য ভূমিকা রাখবে। বইটির মূল্য ২৫০ টাকা।
আদিবাসী উৎসব
নানা বিশ্বাসের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস রয়েছে এ দেশে। আদিবাসীরাও এর অন্তর্ভুক্ত। ভিন্ন এঁদের ভাষা, ভিন্ন এঁদের সংস্কৃতি। সুদীর্ঘকাল থেকে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে নানা ধরণের উৎসব ও পূজা-পার্বণ। যার দ্বারা ওই জনগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র পরিচয় পাওয়া যায়। যে কোনও ধর্মেরই দুটি প্রধান দিক আছে-বিশ্বাসের দিক আর সক্রিয় আচরণগত দিক। আদিবাসীদের উৎসব ও পূজা-পার্বণ মূলত সক্রিয় আচরণগত দিক হলেও বিশ্বাসের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটে সেখানে।
সাধারণত কৃষি, শিকার, নববর্ষ এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্মীয় ভাবধারায় আদিবাসীদের বিভিন্ন উৎসব আয়োজন হয়ে থাকে। মূলত সমাজের, গ্রামের এবং নিজস্ব পরিবারের মঙ্গল কামনাই এর উদ্দেশ্য। আবার বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের উৎসবের রীতি-নীতি যেমন স্বতন্ত্র তেমনি উৎসবের পেছনে তাঁদের আদি বিশ্বাসের মিথগুলোও অনন্য। যা সমৃদ্ধ করেছে আদিবাসী সংস্কৃতিকে।
আদিবাসী উৎসবগুলোকে এক মলাটে নিয়ে আসার ইচ্ছে লেখকের অনেকদিনের। এই গ্রন্থে বিভিন্ন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব, উৎসবের আচার ও গান এবং উৎসবের পেছনের আদি বিশ্বাসের লোককাহিনী বা মিথগুলো সরল গদ্যে তুলে ধরা হয়েছে। যা থেকে যে কোনও পাঠক খুব সহজেই আদিবাসী উৎসবগুলোর আদ্যপান্ত জেনে নিতে পারবেন। এ গ্রন্থটিতে লেখক আদিবাসীদের প্রধান প্রধান উৎসব ও উৎসবের পেছনের মিথগুলো তুলে ধরেছেন সরল গদ্যে অত্যন্ত সুপাঠ্যরূপে। এ বইটির মূল্য ২০০ টাকা।
দুটি বইয়েরই প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী নিয়াজ চৌধুরী তুলি। বইমেলায় ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের ৩৭-৩৯ নাম্বার স্টলে বই দুটি পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৫